
মা কালী নাকি লজ্জায় জিভ কেটেছেন, শিবের বুকে পা দিয়ে? না, এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। মা কালীর প্রসারিত জিহ্বার প্রকৃত ধর্মীয় তাৎপর্য জানুন।
★ মুণ্ডক উপনিষদে মা কালীর উল্লেখ আছে, অগ্নির সপ্তজিহ্বা রূপে। বস্তুত হরপ্পা সভ্যতায় ছাগবলি গ্রহণ করতেন সপ্ত মাতৃকা, এই মর্মে হরপ্পা সভ্যতার প্রত্ন ফলক আছে এবং গবেষকদের সুচিন্তিত মতও আছে এর সমর্থনে। এই বেদপূর্ব বলিপ্রিয়া সপ্তমাতৃকা পরে বৈদিকদের যজ্ঞে অগ্নির সপ্তজিহ্বায় রূপান্তরিত হন।
★ মা কালীর জিহ্বা কাজেই মায়ের বলিপ্রিয়তা প্রকাশ করে। মায়ের এই বলিপ্রিয়া রুধিরপ্রিয়া রূপটি শ্রী শ্রী চণ্ডীতেও দেখতে পাই। মা তাঁর জিহ্বা প্রসারিত করে বলি গ্রহণ করছেন।
★মা কালীর আদি রূপ ছিল বলাকা মাতৃকা। বলাকা মাতৃকার প্রসারিত চঞ্চু পরে প্রসারিত জিহ্বায় রূপান্তরিত হয়েছে।
★ মা কালীর বর্তমান মূর্তিরূপ পালযুগ সেনযুগ থেকে গড়ে ওঠে। প্রসারিত জিহ্বা সর্বত্র বলিপ্রিয়া মায়ের চিহ্ন। সেনযুগের বৃহদ্ধর্ম পুরাণে মা কালীর বর্তমান মূর্তিরূপ পাওয়া যায়, এরপর মধ্যযুগে আগমবাগীশ সেটি পুনরুদ্ধার করেন। লজ্জায় জিভ কাটার গল্পটি অন্ধকার মধ্যযুগে তৈরি করা হয়েছিল, ওই রামের অকাল বোধনের গল্পের মত। এতে আবহমান মাতৃকাউপাসক তন্ত্রধর্মের বিকৃতি ঘটেছে, ইতিহাসবিস্মৃতি ঘটেছে।
★ মায়ের পদতলে আদিকাল থেকেই একটি শব থাকত, কারণ মা জড়তা দলন করেন, সেই শব মায়ের পাদস্পর্শে ধন্য হয়ে শিবে রূপান্তরিত। তাঁর বিভূতি, তাঁর ঐশ্বর্য শবকে শিবে রূপান্তরিত করে, জগজ্জননী মা জগতের আশ্রয়, তাঁর পায়ে আশ্রয় পাওয়া ভাগ্যের বিষয়, তিনি কাকে লজ্জা পাবেন? লজ্জায় জিভ কাটার প্রশ্নই নেই।
★ সর্বদা মা কালীর নাম জপ করুন। কলৌ কালী কলৌ কালী নান্যদেবঃ কলৌ যুগে। কলিযুগে কালী ভিন্ন অপর কোনও উপাস্য নেই।
© তমাল দাশগুপ্ত Tamal Dasgupta
জয় মা কালী। জয় জয় মা।
মা কালীর ছবি পিন্টারেস্ট থেকে।
তমাল দাশগুপ্ত ফেসবুক পেজ, এগারো মে দুহাজার তেইশ