বাঙালি জাতির বয়স চার হাজার বছর, এবং এই চার হাজার বছর সে মাতৃকা উপাসনা করছে – তমাল দাশগুপ্ত

বাঙালি জাতির বয়স চার সহস্র বছর, এবং এই চার হাজার বছর ধরে সে মা কালীর পুজো করছে। চমকে যাচ্ছেন?

পাণ্ডু রাজার ঢিবি পশ্চিমবঙ্গের প্রাচীনতম প্রত্নক্ষেত্র। প্রত্নবিদ পরেশচন্দ্র দাশগুপ্তের খনন প্রতিবেদন বা এক্সকেভেশন রিপোর্ট অনুযায়ী এটি চার হাজার বছর পুরোনো এবং অন্তিম হরপ্পা সভ্যতার সমসাময়িক।

এই প্রত্নক্ষেত্রে বলাকা মাতৃকা পূজিত ছিলেন। মূর্তি পাওয়া গেছে।

শুধু পাণ্ডু রাজার ঢিবি নয়। রাজ্য পুরাতত্ত্ব নির্দেশনালয় প্রকাশিত ইলোকোয়েন্ট আর্থ গ্রন্থ অনুযায়ী পাণ্ডু রাজার ঢিবির সমকালে প্রাচীন প্রাগৈতিহাসিক পশ্চিমবঙ্গের অন্যান্য স্থানেও বলাকা মাতৃকার মূর্তি পাওয়া গেছে। সেযুগের বাঙালি বলাকা মাতৃকার উপাসক ছিল বলেই বয়াংসি বলা হয়েছে বৈদিকদের দ্বারা।

প্রসঙ্গত, হরপ্পা সভ্যতাতেও চঞ্চুবিশিষ্ট বলাকা মাতৃকার মূর্তি প্রচুর পাওয়া গেছে, beaked goddess বলা হয়। আজও দিল্লিতে কালকাজি মন্দিরে পূজিত কালী
মূর্তির মুখমণ্ডল হরপ্পা সভ্যতার বলাকা মাতৃকার মত দেখতে।

প্রাচীন ব্রাহ্মী লিপি থেকে আজকের বঙ্গলিপির প্রথম অক্ষর ক-এর ডাঁটি আসলে বলাকা মাতৃকার চঞ্চু। আমাদের বর্ণমালায় প্রত্যেক বর্ণ মাতৃকাবর্ণ, এবং প্রথম অক্ষর ক আসলে বলাকা মাতৃকার প্রতীক।

কালী। এই বলাকা মাতৃকা হলেন কালী।

এই বলাকা মাতৃকা মা কালীর আদি রূপ, এরকম সিদ্ধান্ত করার পেছনে প্রচুর যুক্তি আছে।মা কালীর বেশ কয়েকটি মন্ত্রে বলাকার উল্লেখ আছে। মা কালীর ষোড়শ নিত্যার মধ্যে একজন বলাকা। কালিদাসের কাব্যে মা কালীকে বলাকিনী বলা হয়। দশমহাবিদ্যার অন্যতম বগলামুখী আসলে বলাকামুখী, এরকম মনে করেন কিছু গবেষক। মা কালীর মূর্তিমণ্ডলে এই সেদিন ইংরেজ আমলেও বলাকা মাতৃকাকে দেখা যেত, যা 1841 সালে কলকাতায় একজন রুশ শিল্পীর আঁকা একটি ছবিতে দেখা যায়। আদিযুগে ও মধ্যযুগে নিয়মিতভাবে চামুণ্ডাকালীর মূর্তিমণ্ডলে বলাকা দেখা যায়।

© তমাল দাশগুপ্ত Tamal Dasgupta

গত চার হাজার বছরের দীর্ঘ সময়কাল জুড়ে বাঙালি জাতির একমাত্র সংজ্ঞায়ন হয় মাতৃকা উপাসনায়। মা কালীর নামে বাঙালি জাতির অস্তিত্ব নির্ধারিত হয়। মা কালী সারা বিশ্বে সর্বত্র পূজিত হতে পারেন, কিন্তু আমাদের বাঙালিদের সঙ্গে মা কালীর সম্পর্ক হল মা আর সন্তানের মধ্যেকার রক্তের সম্পর্ক। এই বাঙালি মহাজাতি যতদিন পৃথিবীতে আছে, ততদিন আমরা মা কালীর পুজো করে আসছি, যতদিন আমরা পৃথিবীতে থাকব, ততদিন আমরা মা কালীর পুজো করে যাব।

জয় মা কালী। জয় জয় মা।

মা কালীর ছবি পিন্টারেস্ট থেকে।

তমাল দাশগুপ্ত ফেসবুক পেজ, দশ মে দুহাজার তেইশ

মন্তব্য করুন

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  পরিবর্তন )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  পরিবর্তন )

Connecting to %s