কালসংকর্ষণী কালী – তমাল দাশগুপ্ত

কালসংকর্ষণী কালী।

মা কালীর এই রূপ কাশ্মীরি তন্ত্রে অতীব গুরুত্বপূর্ণ। তন্ত্রের তিনটি পীঠস্থান ছিল প্রাচীন ভারতে, তিনটিই আর্যাবর্ত বহির্ভূত অঞ্চল: কাশ্মীর, কেরল, এবং আমাদের গৌড়বঙ্গ।

যাকে কাশ্মীরি শৈব তন্ত্র আখ্যা দেওয়া হয়, অভিনবগুপ্ত সহ অন্যান্য দার্শনিকের সেই তান্ত্রিক দর্শন যা কাশ্মীরে সৃষ্ট হয়েছিল, গবেষক এবং সাধক মাত্রেই জানেন তা আসলে শাক্ত তন্ত্র এবং এই তন্ত্রতত্ত্বে কালীই প্রধান। তা সত্ত্বেও কেন এটি শৈব নাম পেল, তার উত্তর হল এটা সেযুগের স্টাইল। এজন্যই কৌলধর্মে বলে, অন্তরে শাক্ত বাহিরে শৈব। শৈব বহিরাবরণ মাত্র।

কালসংকর্ষণী কালী হলেন কাশ্মীরি তন্ত্রের প্রধান উপাস্য। তিনি হলেন সেই কালী যিনি মহাকালের নিয়ন্ত্রক এবং যিনি কালকে সম্যকরূপে কর্ষণ (অর্থাৎ সংকর্ষণ) করেন। কাল যদি ক্ষেত্র হয়, তবে কালী যেন সেই কালক্ষেত্রে কৃষিকাজ করছেন। কি সুন্দর তত্ত্ব, কি চমৎকার নাম।

কিন্তু কাশ্মীরি শৈব তন্ত্রকে কালীক্রম নামেও অভিহিত করা হয়। এটি ক্রম সাধনা। অর্থাৎ ক্রমান্বয়ে ক্রমপর্যায়ে একটি ধাপ থেকে উচ্চতর ধাপে সাধকের উত্তরণ ঘটানোর প্রক্রিয়া। প্রসঙ্গত কাশ্মীর এবং কেরল তন্ত্র সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য ডঃ তমাল দাশগুপ্তের তন্ত্র কোর্সে শেখানো হবে, গৌড়বঙ্গের ওপরে ফোকাস থাকবে যদিও।

কালসংকর্ষণী কালী এই কালীক্রম সাধনার চূড়ান্ত পর্যায়। কাশ্মীরি তন্ত্রে আরও কালী আছেন, মোট সংখ্যা বারো অর্থাৎ দ্বাদশ কালী আছেন। সাধনার এক এক পর্যায়ে এক একজন কালী অধিষ্ঠান করেন। কিন্তু এই কালীক্রম সাধনায় সর্বোচ্চ উপাস্য এবং সর্বোচ্চ সাধনার অভিষ্ট হলেন এই কালসংকর্ষণী কালী।

জয় মা কালসংকর্ষণী কালী। জয় জয় মা।

© কালীক্ষেত্র আন্দোলন

মা কালসংকর্ষণী কালীর মূর্তি এবং চিত্র খুবই বিরল। এই ছবিটি কালসংকর্ষণী কালী ফেসবুক পেজ থেকে নেওয়া হয়েছে। তবে এটি মা কালসংকর্ষণী কালীর চিত্র নয়, এটি তন্ত্রের যুগনদ্ধ মূর্তি।

কালীক্ষেত্র আন্দোলন ফেসবুক পেজ, এক এপ্রিল দুহাজার তেইশ

মন্তব্য করুন

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  পরিবর্তন )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  পরিবর্তন )

Connecting to %s