
মা কুরুকুল্লা: পালযুগের বাঙালির আরাধ্যা দেবী
আজ আমরা মা কুরুকুল্লা সম্পর্কে জানব। ইনি পালযুগের তন্ত্রধর্মে একজন গুরুত্বপূর্ণ দেবী, বজ্রযানে অমিতাভ কুলের অন্তর্গত, মা তারার একটি রূপ বলে গণ্য এবং তিব্বতে এখনও জনপ্রিয়। কিন্তু তিনি মা কালীর এক প্রাচীন রূপও বটেন।
কুরুকুল্লার অনেক প্রকারের রূপ জনপ্রিয় ছিল পালযুগের তন্ত্রধর্মে বাংলা জুড়ে, সাধনমালা গ্রন্থ সাক্ষ্য দেয়। একটি মূর্তিরূপ অনুযায়ী তিনি দ্বিভুজা এবং শুক্লবর্ণা। আর একটি মূর্তিরূপে তিনি চতুর্ভুজা, রক্তবর্ণা, রক্তপদ্মাসীনা, রক্তবস্ত্রপরিহিতা। আর একটি ষড়ভুজা মূর্তিরূপ পাওয়া যায়, সেখানেও দেবী রক্তবর্ণা। কুরুকুল্লার অষ্টভুজা মূর্তিও দেখা যায়। ইনি ব্যাপকভাবে পূজিত ছিলেন নতুবা এত আলাদা আলাদা মূর্তিরূপ হত না। চতুর্ভুজা কুরুকুল্লার নানাবিধ মূর্তিরূপ দেখা যায়: তারোদ্ভব কুরুকুল্লা, উড্ডিয়ান কুরুকুল্লা, হেবজ্রক্রম কুরুকুল্লা এবং কল্পোক্ত কুরুকুল্লা। এঁদের মধ্যে উড্ডিয়ান কুরুকুল্লা আমাদের জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।
পালযুগের শেষে মা কালীর বর্তমান মূর্তিকল্পের উত্থান ঘটেছিল, যাতে মা কুরুকুল্লার ব্যাপক প্রভাব ছিল, বিশেষ করে উড্ডিয়ান কুরুকুল্লার মূর্তিরূপ।
প্রাচীনযুগের বিখ্যাত তন্ত্রক্ষেত্র উড্ডিয়ান কোথায় অবস্থিত ছিল, তা নিয়ে নানা মত। বিক্রমপুরে বজ্রযোগিনীর আগের নাম উড্ডিয়ান, এরকম একটি সম্ভাবনা আছে।
উড্ডিয়ান কুরুকুল্লার মূর্তিরূপ: দেবী চতুর্ভুজা, ভীষণা, করালবদনা, মুণ্ডমালিনী, ললজিহ্বা, পিঙ্গলবর্ণ ও জ্বলন্ত ঊর্ধ্বকেশ বিশিষ্টা, শববাহনা। মায়ের মাথায় পঞ্চ নরকপাল। মা ব্যাঘ্রচর্মনির্মিত বসন এবং সর্পনির্মিত ভূষণ ধারণ করেন। তাঁর ত্রিনয়ন রক্তবর্ণা।
মা কুরুকুল্লার মন্ত্র এখনও বাংলায় বিভিন্ন তন্ত্রধর্মীয় অনুষ্ঠানে ব্যবহার করা হয়, যেমন বশীকরণ প্রভৃতি।
© তমাল দাশগুপ্ত Tamal Dasgupta
মায়ের ছবি ইন্টারনেট থেকে।
জয় মা কুরুকুল্লা। জয় মা কালী। জয় জয় মা।
তমাল দাশগুপ্ত ফেসবুক পেজ, সাতাশ ফেব্রুয়ারি দুহাজার তেইশ