বাঙালির অর্থবর্গ
বাঙালির সর্বপ্রাচীন যুগ গন্ধবণিক, শশাঙ্ক থেকে সেনযুগ স্বর্ণবণিক এবং মধ্যযুগ তন্তুবণিক শাসন করেছেন। প্রাচীনতম যুগে, অর্থাৎ পাণ্ডু রাজার ঢিবির সময় থেকে গুপ্ত যুগ অবধি বাঙালির স্পাইস ট্রেড আন্তর্জাতিক ছিল, সেই সূত্রে প্রচুর সোনা আসতো, এজন্য আমি চাঁদ বেনেকে সুপ্রাচীন যুগের প্রতিনিধি বিবেচনা করি। এরপর শশাঙ্ক যুগ থেকেই বহির্বিশ্বের সঙ্গে বাণিজ্য কিছুটা ম্রিয়মান, ফলে স্বর্ণ মহার্ঘ হল এবং স্বর্ণবণিকের অবস্থান একই সঙ্গে দামি এবং সশঙ্ক হল। মধ্যযুগে বাংলা পৃথিবীর তাঁতঘর বলে পরিচিত, এবং এই বিপুল ব্যবসা প্রথমে হুগলির সপ্তগ্রাম পরে কলকাতার সুতানুটিতে চলে আসে। শেঠ বসাকদের বিশাল তন্তুবয়ন কারখানা ছিল গোবিন্দপুর গ্রামে, সেখানে ১৬৩২ সালে আড়াই হাজার তাঁতশ্রমিক কাজ করতেন, চার্নক আসার ষাট বছর আগেকার কথা।
বস্তুত ইংরেজ আমাদের ধ্বংস করেছিল, আমাদের উন্নত করে নি। বাংলার সেই বিস্ময়, সেই তাঁত শিল্পকে ধ্বংস করে দিয়েছিল ইংরেজ। বাঙালি ক্রমে বুঝেছিল। যেমন চৈতন্য আন্দোলন রেনেসাঁস ইসলামিক সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ, তেমনই উনিশ শতকের রেনেসাঁস এবং তা থেকে জন্ম নেওয়া বিশ শতকের স্বদেশী ছিল ইংরেজ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া।
এই প্রেক্ষিতে বাঙালির অর্থবর্গের ইতিহাস লেখা প্রয়োজন।।
আধুনিক যুগে কিভাবে বাঙালি ব্যবসায়ীর হাত থেকে বাংলার বাণিজ্য বেরিয়ে গেল, তার একটি কারণ সম্ভবত শাসকের ভূমিকা। হ্যারিসন রোড থেকে ইংরেজের উদ্যোগে বাঙালি ব্যবসায়ীর ঘটিবাটি চাঁটি করে বড়বাজার তুলে দেওয়া হয়েছিল অবাঙালি ব্যবসায়ীর হাতে। স্বাধীনতা পরবর্তী যুগে কংগ্রেস বাম তৃণ বিজেপি সবাই মোটামুটি অবাঙালি ব্যবসায়ী কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত হয়ে আসছে।
বাঙালি বণিকজাতিগুলির পুনরুত্থান ব্যতীত বাঙালির জাগরণ অসম্ভব।
© তমাল দাশগুপ্ত
http://fb.me/tdasgupto থেকে, ২৩শে নভেম্বর ২০১৯