আর এস এস স্বাধীনতা সংগ্রামে কী করেছে, এ প্রশ্নের উত্তরে তথাগত বলেছেন, আর এস এস অরাজনৈতিক সংগঠন, কাজেই স্বাধীনতা সংগ্রাম কেন করবে? তা আমি বাঙালিদের সৃষ্ট এমন অসংখ্য অরাজনৈতিক সংগঠনের নাম দিতে পারি যারা ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে নারায়ণী সেনার মত অগ্রসর ছিল। বাঙালি স্বাধীনতার লড়াই শুরু করেছে, বাঙালি রক্ত দিয়েছে, বাঙালি আন্দামান জেল ভরেছে। এবং সেটা করতে গিয়ে তাকে তো রাজনৈতিক পার্টি বানাতে হয়নি, যদিও বিপ্লবীরা স্বরাজ্য দলে ঢুকেছিলেন, কংগ্রেসে ঢুকেছিলেন। কিন্তু বঙ্কিমের আনন্দমঠের সন্তানদল যেমন কোনও রাজনৈতিক সংগঠন ছিল না, অনুশীলন সমিতি বা যুগান্তর বা বেঙ্গল ভোলান্টিয়ার্স তেমনই কোনও রাজনৈতিক দল নয়। রক্ত দিতে গেলে রাজনৈতিক দল না বানালেও চলে। সুভাষ ফরোয়ার্ড ব্লক নামক রাজনৈতিক দল বানিয়েছিলেন, কিন্তু স্বাধীনতা সংগ্রামে বেঙ্গল ভোলান্টিয়ার্স তার অনেক আগে থেকেই সুভাষের আত্মিক আগ্রহকে প্রতিধ্বনিত করেছিল। বিভি তো রাজনৈতিক দল ছিল না। আর যুগান্তর কি ভোটে দাঁড়াত নাকি?
বাঙালি রক্ত দিয়েছে, বাঙালি ইংরেজের সঙ্গে লড়েছে। এবং এইসব রাজনীতি-অরাজনীতির অজুহাত না দিয়ে আসুন আমরা বরং বাঙালির সেই অসামান্য আত্মত্যাগ স্মরণ করি।
এবং বিলাপ করি যে বাঙালির সেই আত্মত্যাগের বিনিময়ে সুবিধার ক্ষীর কারা খেয়ে গেল? যারা পূর্ব পাকিস্তান এবং পরে বাংলাদেশ পেয়ে গেল বিনামূল্যে। যারা পশ্চিম পাকিস্তান এবং হিন্দুস্তানে মসনদে বসল, আজও যারা রাজত্ব করছে।
রক্ত দিল বাঙালি। অথচ ক্ষমতা পেল একদল মুসলমান, আর ক্ষমতা পেল একদল অবাঙালি হিন্দু।
যে উপমহাদেশ আমাদের জন্য স্বাধীন, আজ সেই উপমহাদেশে বাংলাভাষী হিন্দুর বৃহত্তর এথনিক ক্লিনজিং ঘটাতে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট এবং কেন্দ্রীয় সরকার এবং অসমের বাঙালিবিদ্বেষী সরকার এন আর সি করছে। পূর্ব পাকিস্তানে বাংলাভাষী হিন্দুর এথনিক ক্লিনজিং হয়েছিল গানপয়েন্টে। এই খণ্ডিত ভারতে বাংলাভাষী হিন্দুর এথনিক ক্লিনজিং হচ্ছে আইনি বৈধতা মেনে, এইটুকুই যা পার্থক্য।
© তমাল দাশগুপ্ত
http://fb.me/tdasgupto থেকে, ১৫ই সেপ্টেম্বর ২০১৯