শাক্তধর্মের আবহমান রঙ লাল – তমাল দাশগুপ্ত

শাক্তধর্মের রঙ লাল। লাল তিলক, লাল সিঁদুর, লাল ধ্বজা কেন মা কালীর পুজোয় গুরুত্বপূর্ণ?

পৃথিবীতে প্রাচীন প্রস্তর যুগ থেকে মাতৃধর্ম প্ৰচলিত আছে, এবং আজ থেকে ত্রিশ-পঁয়ত্রিশ হাজার বছর আগেকার রক্তবর্ণে রঞ্জিত (red ochre) মাতৃমূর্তি পাওয়া গেছে। অর্থাৎ লাল রঙের সঙ্গে মাতৃকা উপাসনার সম্পর্ক প্রাগৈতিহাসিক ও আবহমান।

কেন এই লাল রঙ তাৎপর্যপূর্ণ?

এক, জন্মের সঙ্গে অর্থাৎ নতুন সৃষ্টির সঙ্গে রক্তের সম্পর্ক।

দুই, লাল রঙ রজঃস্বলা পৃথিবীর প্রতীক।

তিন, লাল রঙ বলির রক্তের প্রতীক, এবং প্রাচীনকাল থেকেই মাতৃধর্মে বলির প্রচলন।

পৃথিবীর অন্যত্র মাতৃধর্ম বিলুপ্ত কিন্তু বাঙালি পৃথিবীর শেষ মাতৃকা উপাসক মহাজাতি। আমাদের মা বলিপ্রিয়া। যে পৃথিবী জন্ম দেন সেই পৃথিবীই গ্রাস করেন কাজেই বলির যৌক্তিকতা আছে। তাছাড়া বলির কারণেই সম্ভবত আমাদের মাতৃধর্ম আজও টিঁকে আছে, অন্যান্য ধর্মগুলি আজও বাংলা থেকে মাতৃধর্মকে মুছে দিতে পারে নি।

হরপ্পা সভ্যতায় সিঁদুর ব্যবহৃত ছিল। বস্তুত সিঁদুর শব্দটি সিন্ধুর থেকে এসেছে, এই সম্ভাবনা আছে। হরপ্পা সভ্যতায় লাল সিঁদুরচর্চিত মাতৃমূর্তি পাওয়া গেছে, বালোচিস্তানের নওশারো থেকে, সে ছবি আগেও দিয়েছি, আজ আবার পোস্ট করলাম। হরপ্পা সভ্যতায় তন্ত্রধর্মের একটি আদিরূপ প্ৰচলিত ছিল, সন্দেহ নেই। এবং হরপ্পা সভ্যতায় একটি সিঁদুরচর্চিত ফলকে সাতটি চিহ্ন আছে যা সম্ভবত কৃত্তিকা বা মাতৃকাদের প্রতীক, আস্কো পার্পোলার মতে। এছাড়া হরপ্পা সভ্যতায় ছাগবলি প্ৰচলিত ছিল, একটি প্রত্ন ফলকে মুখ্য মাতৃকার সম্মুখে সেই বলি গ্রহণ করতে সপ্ত মাতৃকার উপস্থিতি দেখা যায়। মহিষমেধ হত হরপ্পা সভ্যতায়, সেটাও প্রত্নতত্ত্বের দ্বারা প্রমাণিত। লাল রঙ কাজেই হরপ্পা সভ্যতার ক্ষেত্রে মেধ বা বলির প্রতীক, মায়ের শক্তির প্রতীক এবং আবহমান মাতৃধর্মের ভাষা।

কিন্তু এ ছাড়াও আরেকটি তাৎপর্য আছে।

হরপ্পা সভ্যতায় লাল সিঁদুর হল ঊষার লাল রঙ।

ঊষা পূজিত ছিলেন অবৈদিক হরপ্পা সভ্যতায়, ডি ডি কোসাম্বির সিদ্ধান্ত, এবং এই ঊষার শারদীয়া বোধন থেকেই আজকে শারদীয়া দুর্গাপুজো এসেছে (রামের অকাল বোধন কাহিনী অর্বাচীন মধ্যযুগের নির্মাণ। শারদীয়া দুর্গাপুজোর আদি রূপ উপমহাদেশে হরপ্পা সভ্যতার সময় থেকে প্ৰচলিত)। ভোর রাতে অন্ধকারে নিকষ কালো দিগন্তে ফুটে ওঠা ঊষার লাল রঙ যিনি দেখেছেন তিনিই বুঝবেন এ লাল রঙের মাহাত্ম্য।

রক্তিম বর্ণে মায়ের আবাহন ও অধিষ্ঠান হয়। লাল তিলক হল আদ্যা নিত্যা অব্যক্ত জগদকারণ প্রকৃতির চিহ্ন। এই লাল রঙে শক্তির আশীর্বাদ নিহিত আছে। এই লাল সিঁদুরে মায়ের স্পর্শ আছে। তাই এই লাল রঙ শাক্তধর্মের প্রতীক।

© তমাল দাশগুপ্ত Tamal Dasgupta

ছবিতে দেখছেন হরপ্পা সভ্যতার সিঁদুরচর্চিত মাতৃমূর্তি। ইনি হরপ্পা সভ্যতায় পূজিত বলাকা বা খেচরী মাতৃকা (beaked goddess) এবং এঁকে মা কালীর আদিতম রূপের অন্যতম হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। সময়কাল পরিণত হরপ্পা সভ্যতা অর্থাৎ প্রায় পাঁচ হাজার বছর পূর্বে।

তখন রাম বলে কেউ ছিল না, কৃষ্ণ বলে কেউ ছিল না, হনুমান বলে ছিল না, মহম্মদ বলে কেউ ছিল না, খ্রিষ্ট বলে কেউ ছিল না। তখনও মা ছিলেন। এঁরা যখন থাকবেন না, তখনও মা থাকবেন।

মা ছিলেন, মা আছেন, মা থাকবেন।

জয় মা কালী। জয় জয় মা।

তমাল দাশগুপ্ত ফেসবুক পেজ, তেইশ মে দুহাজার তেইশ

২০শে মে – তমাল দাশগুপ্ত

২০শে মে ছিল আমার জন্মদিন। তাই সহধর্মিণীকে সঙ্গে করে গেছিলাম মায়ের আশীর্বাদ মাথায় নিতে, দিল্লির চিত্তরঞ্জন পার্ক কালীবাড়িতে।

আমাদের মাথার ওপরে মা আছেন! মা কালীর সন্তানদের আর চিন্তা কি?

জয় জয় মা।

তমাল দাশগুপ্ত ফেসবুক পেজ, একুশে মে দুহাজার তেইশ

অন্তিম পালযুগের মুণ্ডমালিনী ডাকিনী মূর্তি – তমাল দাশগুপ্ত

অন্তিম পালযুগের ডাকিনী মূর্তি, দ্বাদশ শতক, গৌড়বঙ্গ। চতুর্ভুজা, মুণ্ডমালিনী, শববাহনা।

মা কালীর আধুনিক মূর্তিরূপ এই পালযুগের মহাসমুদ্রের মন্থনে উত্থিত হয়েছিল।

ছবি একটি নিলামসংস্থার সাইট থেকে।

মা কালী ও তন্ত্র: সাত সপ্তাহের অনলাইন কোর্স, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের তন্ত্র কোর্সের প্যাটার্নে তৈরি করা হয়েছে। এই কোর্সের প্রথম ব্যাচ পয়লা বৈশাখে শুরু হয়েছিল। দ্বিতীয় এবং শেষ ব্যাচের আনুষ্ঠানিক সূচনা হয়েছে ফলহারিণী কালী পুজোর দিন। শেষ ব্যাচ, কারণ এভাবে একটি কোর্সের মাধ্যমে তন্ত্রের সামগ্রিক ইতিহাস তত্ত্ব ও ব্যবহারিক প্রয়োগ তুলে ধরা সহজ নয়, সেজন্য এরপর এই একটি কোর্সের বদলে অনেকগুলি আলাদা আলাদা কোর্স চালু হবে।

ধ্রুব লক্ষ্য: তন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপনা। একদিনে হবে না। তবে একদিন তো হবে।

কোর্স ফিজ সাতশ টাকা, শিক্ষা সমাপনে শংসাপত্র দেওয়া হবে। লেট এনরোলমেন্ট নেওয়া হচ্ছে শনিবার রাত অবধি। হোয়্যাটস্যাপ করুন 7699750212 নম্বরে।

জয় মা কালী।

তমাল দাশগুপ্ত Tamal Dasgupta

তমাল দাশগুপ্ত ফেসবুক পেজ, ঊনিশ মে দুহাজার তেইশ

ফলহারিণী অমাবস্যার পুণ্য তিথিতে মা কালী ও তন্ত্র কোর্সের দ্বিতীয় ব্যাচ শুরু হচ্ছে – তমাল দাশগুপ্ত

ফলহারিণী অমাবস্যায় মা কালীর পুজোর প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলা। আমাদের মা কালী এবং তন্ত্র কোর্সের দ্বিতীয় এবং শেষ ব্যাচের আনুষ্ঠানিক সূচনাও হচ্ছে আজ রাতে, ফলহারিণী কালী পুজোর পুণ্য তিথিতে।

এই সাতশ টাকার এক কোর্সে ষাট হাজার বছরের মাতৃধর্মের নির্যাস আছে। এই শেষ এরকম কোর্স করছি আমরা, এরপর এই এক কোর্স থেকে সাত, চোদ্দ, একুশ আলাদা আলাদা কোর্স তৈরি হবে।

ধ্রুব লক্ষ্য, তন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়।

লাস্ট কল। মা কালী ও তন্ত্র কোর্সে ভর্তির শেষ সুযোগ পেতে অবিলম্বে হোয়্যাটস্যাপে যোগাযোগ করুন ঋতুপর্ণার নম্বরে: 7699750212

জয় মা কালী। জয় জয় মা।

দেখছেন পালযুগের চামুণ্ডা মূর্তি।

মা ফলহারিণী কালী সম্পর্কে জানতে কমেন্টের লিঙ্ক দেখুন।

তমাল দাশগুপ্ত Tamal Dasgupta

সংযোজন

ফলহারিণী কালী

তমাল দাশগুপ্ত ফেসবুক পেজ, আঠেরো মে দুহাজার তেইশ

We Study Tantra: These Are Our Kashmir Files and Kerala Stories – Tamal Dasgupta

We study Tantra. These are our Kashmir Files and our Kerala Stories 🌺

Tonight I am reading these two books.

Those who don’t learn from past mistakes, those who don’t learn from the mistakes of others, are doomed to repeat those mistakes.

And those who don’t learn from the wisdom of others, are doomed to go wrong.

What went wrong with Tantra? What went wrong with the three lands of Tantra: Kashmir, Kerala and Bengal? Kashmir is Muslim majority now. Kerala is a fractured state and Bengal was partitioned twice in last 100 years.

But to start with, what is Tantra? How it is connected with the worship of Mother Goddess across thousands of years?

Well, enrol yourself in our seven week online “Ma Kali and Tantra” course modelled on the pattern of Oxford University’s online Tantra course, and find out the answers yourself.

Fees ₹700, and you can paytm/phonepe/Google Pay to 7699750212

You can also bank transfer the amount. Whatsapp the number given above for details.

Joy Ma Kali.

Knowledge of Bengali is essential for attending the Tantra course, as Bengali will be the medium of instructions.

Certificates will be given after successful completion of the course.

Tamal Dasgupta Facebook Page, 17 May 2023

মা কালী ও তন্ত্র: দ্বিতীয় ব্যাচ শুরু হচ্ছে – তমাল দাশগুপ্ত

“মা কালী ও তন্ত্র” কোর্স: দ্বিতীয় ব্যাচ শুরু হচ্ছে। মা কালী এবং তন্ত্রের পূর্ণাঙ্গ ইতিহাসের ওপরে একটি মাত্র কোর্স করার মাধ্যমে তন্ত্রধর্মের মাতৃকা উপাসনার সম্পূর্ণ রূপরেখা জানার এই শেষ সুযোগ, এরপর আর এমন সামগ্রিক কোর্স হবে না, যদিও তন্ত্রের বিভিন্ন আলাদা আলাদা বিষয়ে কোর্স করানো হবে।

ভারতে প্রথম মা কালী ও তন্ত্র বিষয়ক সারস্বত চর্চার প্রয়াস করেছি আমরা। পয়লা বৈশাখের প্রথম ব্যাচের পর আমাদের দ্বিতীয় ও শেষ ব্যাচ এবার শুরু হচ্ছে। আনুষ্ঠানিক সূচনা ১৮ই মে ফলহারিণী অমাবস্যার দিন, থিওরি ক্লাসের সূচনা হবে ২১শে মে রবিবার থেকে। তারপর থেকে প্রতি সপ্তাহে গুগল মিটে ক্লাস হবে শনি রবি দুদিন: শনিবার সন্ধে ৭.৪৫ থেকে আর রবিবার সন্ধে ৬টা থেকে ক্লাস হবে।

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের তন্ত্র কোর্সের ধাঁচে গঠিত এই সাত সপ্তাহের কোর্সের সম্মানমূল্য সাতশ টাকা।

এতে জানতে পারবেন:

প্রাচীন প্রস্তর যুগ থেকে মাতৃকা উপাসনার ধারা।

প্রাচীন প্রাগৈতিহাসিক ভারতে ও বাংলায় মাতৃধর্ম।

মা কালীর আদিতম প্রত্ন রূপ।

মা কালী এবং তন্ত্রধর্মের দীর্ঘ ইতিহাস: আদি, মধ্য এবং আধুনিক যুগে।

তন্ত্রের তত্ত্ব এবং বিভিন্ন প্রয়োগ।

প্রতিটি আলাদা আলাদা থিওরি ক্লাসের সঙ্গে পাওয়ারপয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের ব্যবস্থা আছে।

কোর্সে ভর্তি হতে চাইলে 7699750212 নম্বরে পেটিএম/ফোনপে/গুগলপে করুন ৭০০ টাকা।

ব্যাংক ট্রান্সফার করতে চাইলে

Rituparna Koley
Account Number 33054363900
IFSC
SBIN0001865
(SBI, Tarakeshwar branch)

টাকা পাঠানোর পর অবশ্যই স্ক্রিনশট হোয়্যাটস্যাপ করে দেবেন 7699750212 নম্বরে।

এই সাত সপ্তাহের সম্পূর্ণ কোর্স করাব আমি নিজে। কোর্স সমাপনে শংসাপত্র দেওয়া হবে।

তমাল দাশগুপ্ত Tamal Dasgupta

ছবিতে দেখছেন সপ্তম শতকে বৃহৎ বঙ্গের উড়িষ্যা অঞ্চলের অভিনব চামুণ্ডা মূর্তি। ছবি ইন্টারনেট থেকে।

জয় মা কালী। জয় জয় মা।

বিশেষ দ্রষ্টব্য। বাংলাদেশ থেকে কেউ কোর্স করতে চাইলে উপায় আছে। পোস্টে দেওয়া নম্বরে যোগাযোগ করুন।

তমাল দাশগুপ্ত ফেসবুক পেজ, পনেরো মে, দুহাজার তেইশ

বাঙালির ইতিহাসে কর্ণাট সংযোগ – তমাল দাশগুপ্ত

আজ কর্ণাটক সংবাদ শিরোনামে। বাঙালির ইতিহাসে সেনযুগের সঙ্গে কর্ণাট সংযোগ আছে। আরও আশ্চর্য, ভারতের ইতিহাসে অন্যতম সুপ্রাচীন রাধাকৃষ্ণ মূর্তি এই কর্ণাট মন্দিরগাত্রে মা কালীর পাশেই দেখা যায়। বাংলায় তখন সেনযুগ..

মা কর্ণাট কালীর জয় হোক। জয় জয় মা।

এই বিষয়ে আমার দুটি তথ্যবহুল লেখার লিংক কমেন্টে দিলাম, প্রতিটি লেখায় হোয়সালেশ্বর মন্দিরের ছবি আছে। পড়ুন।

সংযোজন।

বল্লালসেনের সমকালে কর্ণাট কালীমূর্তি

সেনযুগের সমসাময়িক কর্ণাটক: মা কালী, মা দুর্গা, রাধাকৃষ্ণ।


https://matshonyay.home.blog/2021/01/09/%E0%A6%B8%E0%A7%87%E0%A6%A8%E0%A6%AF%E0%A7%81%E0%A6%97%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%B8%E0%A6%AE%E0%A6%B8%E0%A6%BE%E0%A6%AE%E0%A7%9F%E0%A6%BF%E0%A6%95-%E0%A6%95%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%A3%E0%A6%BE%E0%A6%9F/

তমাল দাশগুপ্ত ফেসবুক পেজ, তেরো মে দুহাজার তেইশ

মা কালীর মুণ্ডমালার তাৎপর্য – তমাল দাশগুপ্ত

মা কালীর মুণ্ডমালিনী রূপ আমাদের মুগ্ধ করে। আসুন আজ মুণ্ডমালার তাৎপর্য জেনে নেব।

★ ছিন্ন মুণ্ড বা নরকপাল দ্বারা অলঙ্কৃত মা কালীর উল্লেখ কালিদাসের কাব্যে আছে। মহাভারতে বা শ্রী শ্রী চণ্ডীতে যেখানে মা কালীর উল্লেখ পাই, সেখানে মায়ের রূপ ভয়ঙ্করী। এর প্রধান কারণ মা কালী সেখানে শুধুই ধ্বংসের দেবতা।

অতএব মুণ্ডমালার এটি অন্যতম তাৎপর্য। মা কেবল জগদকারণ নন, মা সেই সঙ্গে জগদবিলয়। তিনি প্রলয়কালের স্মারক রূপে এই মুণ্ডমালা ধারণ করেন।

★ মুণ্ডমালায় পঞ্চাশ মুণ্ড থাকে। এই প্রতিটি মুণ্ড এক একটি বর্ণের দ্যোতনা বহন করে। আমাদের বর্ণমালা তন্ত্রাশ্রয়ী, প্রতিটি বর্ণ মাতৃকাবর্ণ। এই বিষয়ে তমাল দাশগুপ্ত পেজের প্রবন্ধ আছে।

★ মুণ্ডমালা বিভিন্ন আলাদা আলাদা উপাদানের একত্রে গ্রন্থনা, যা তন্ত্রের প্রতীক। তন্ত্রের অন্যতম অর্থ তন্তুবয়ন, বিভিন্ন পৃথক তত্ত্বকে একত্রিত করে অদ্বয় ও অভেদ অবস্থায় পৌঁছনো। গ্রন্থিত মালা সেই অদ্বয় তত্ত্বের তাৎপর্য বহন করে। ব্রহ্মাণ্ড ছিল না যখন মুণ্ডমালা কোথায় পেলি, শাক্ত কবি গেয়েছেন। তাই মায়ের মুণ্ডমালিনী রূপ অদ্বয় তত্ত্বের প্রকাশ।

★ ফুলের মালা বা বহুমূল্য সোনার মালা পরিধান করতেন রাজা বা ব্রাহ্মণ বা ধনী। এর বিপরীতে গিয়ে কাপালিক তান্ত্রিকরা মুণ্ডমালা ধারণ করে সমাজে উচ্চ নিচ ভেদ, বা বৈষম্য ভেঙে দিতেন। মুণ্ডমালা কাজেই বৈষম্যহীনতার প্রতীক। জীবন ও মৃত্যুর ভেদাভেদ, পুরুষ নারীর ভেদাভেদ, ধনীদরিদ্র ভেদাভেদ, পবিত্র অপবিত্র ভেদাভেদ, ইত্যাদি অনেক বৈষম্য বেড়াজাল ভেঙে মায়ের সাধনা করতে হয়। মুণ্ডমালা সেই পদ্ধতির স্মারক।

★ পুরাণে এক জায়গায় বলা হয় ব্রহ্মার একটি মুণ্ড কেটে নেন শিব। প্রাচীন ভারতে ব্রহ্মহত্যার পাপ যে করত তাকে স্মারক হিসেবে সেই মৃত ব্রাহ্মণের মুণ্ড নিয়ে ভ্রমণ করতে হত। অক্সফোর্ডে আলেক্সিস স্যান্ডার্সন কিছুদিন আগে এক লেকচারে এটি উল্লেখ করে বলেন যে কাপালিকের মুণ্ডমালা কাজেই বৈদিক পৌরাণিক বর্ণবাদ এবং ব্রাহ্মণ্যতন্ত্রের মুণ্ডচ্ছেদ করার প্রতীকী প্রায়শ্চিত্ত এবং একই সঙ্গে সোল্লাস উদযাপন।

★ আর একটি বিষয় হল, পালযুগে বাঙালির ভারত জোড়া তন্ত্রাশ্রয়ী সাম্রাজ্যের সেনাবাহিনীর একটি অংশে উত্তর পূর্ব ভারতের পার্বত্য উপজাতি রেজিমেন্ট ছিল যারা মুণ্ডমালা ধারণ করত। পালযুগ থেকেই নিয়মিত মুণ্ডমালিনী মাতৃমূর্তি পাওয়া যায়।

★ হরপ্পা সভ্যতা থেকে পাণ্ডু রাজার ঢিবি পর্যন্ত সেকেন্ডারি ফ্র্যাগমেন্ট বেরিয়াল দেখা যায়। শক্তিপীঠসমূহে আদিমাতার দেহাংশ এর একটি স্মারক। অনুরূপ তত্ত্ব আজও পঞ্চমুণ্ডী বা নবমুণ্ডী আসনে দেখা যায়। অতএব মুণ্ডমালার মধ্যে সেই প্রাচীন তান্ত্রিক তত্ত্ব আছে।

জয় মা কালী।

© কালীক্ষেত্র আন্দোলন

ছবিতে দেখছেন হরিণডাঙ্গা রক্ষাকালী মাতা। ছবি সংগৃহীত।

কালীক্ষেত্র আন্দোলন ফেসবুক পেজ, ছয় মে দুহাজার তেইশ

অক্ষয় তৃতীয়া মা ধুমাবতীর প্রকাশ তিথি – তমাল দাশগুপ্ত

অক্ষয় তৃতীয়া মা ধূমাবতীর প্রকাশ তিথি।

মুণ্ডক উপনিষদে বৈদিক সাহিত্যে প্রথম মা কালীর উল্লেখ আছে যে শ্লোকে, সেখানে সুধূম্রবর্ণা নামটি পাওয়া যায় অগ্নির সপ্ত জিহ্বার মধ্যে।

মহাভারতে শল্য পর্বে যে দীর্ঘ তালিকা আছে সমকালীন ভারতে জনপ্রিয় মাতৃকাদের, সেখানেও মা ধূমাবতীর ন্যায় মাতৃকার নামোল্লেখ পাই।

মৎস্য পুরাণে ৬৯০ জন মাতৃকার দীর্ঘ তালিকায় ধূম্রা এবং ধূমশিখা আছেন।

মা ধূমাবতী বৃদ্ধা এবং বিধবা রূপে একক জগন্মাতার একটি নির্দিষ্ট রূপ প্রকাশ করেন। তিনি দশমহাবিদ্যার অন্যতম।

তিনি কালীরূপ আগুনের ধোঁয়া। তিনি বৃদ্ধা কারণ তিনি সুপ্রাচীন, তিনি সৃষ্টির শুরু থেকে আছেন। তিনি শিবকে গলাধঃকরণ করেন এজন্য কোনও পতির দ্বারা শাসিত হন না। তিনি একক জগদকারণ, তিনিই জগদবিলয়।

একটি কাক তাঁর বাহন। খ্রিষ্টপূর্ব তৃতীয় শতকের পালি গ্রন্থ নিদ্দেস অনুযায়ী সমকালীন ভারতে কাকের উপাসনা প্ৰচলিত ছিল। কাক সর্বত্রব্যাপী বলে, বুদ্ধিমান বলে এবং নিরহংকারী বলে তন্ত্রসাধনায় বিশেষ স্থান অধিকার করে, সেই সঙ্গে কালো রঙের গুরুত্ব তো আছেই, সর্বোপরি প্রাচীন বলাকা মাতৃকার সঙ্গে কাকের সংযোগও আছে। মা ধূমার মণ্ডলে কাকের উপস্থিতি কাজেই তাৎপর্যপূর্ণ।

অক্ষয় তৃতীয়া তাঁর প্রকাশ তিথি: মা ধূমাবতীর জয় হোক। জয় জয় মা।

© কালীক্ষেত্র আন্দোলন

মায়ের ছবি ফেসবুক থেকে।

কালীক্ষেত্র আন্দোলন ফেসবুক পেজ, বাইশ এপ্রিল দুহাজার তেইশ

কলিযুগে মা কালী ভিন্ন অন্য দেবতা নেই – তমাল দাশগুপ্ত

কলিযুগে মা কালী ভিন্ন অপর কোনও দেবতা নেই, নান্যদেবঃ কলৌ যুগে। কলিযুগে কেন মা কালীই একমাত্র উপাস্য? কারণ তিনি সর্বময়ী, জগন্ময়ী, জগতের সবই তাঁর অংশ, তন্ত্রধর্মের সব দেবতাই মা কালীর প্রকাশ।

তিনি আদ্যা, নিত্যা, অব্যক্ত জগদকারণ। আমরা সীমিত মানববুদ্ধিতে বোঝার সুবিধার জন্য, ধ্যানের সুবিধার জন্য এই মাতৃরূপে, এই কালীরূপে তাঁকে ডাকি।

কালী জগতময়: মা কালীই প্রকাশিত হন জগতজুড়ে, বাকি সমস্ত দেবতা তাঁর প্রকাশ অথবা তাঁর অংশ। আজ আমরা কালীতত্ত্বের এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে জানব: মা কালী জগন্ময়ী জগন্মাতা, মা কালী সর্বময়ী।

★ কালী ও কাল অভিন্ন। মহাকালীর পুরুষ রূপ হলেন মহাকাল। আদি মধ্য যুগের মহাকাল মূর্তি যাঁরা দেখেছেন সবাই জানেন, হুবহু কালীমূর্তির ন্যায় পুরুষ, মুণ্ডমালা ধারণ করেন, শববাহন, করালদ্রংষ্ট। আধুনিক যুগের সূচনায় এজন্য শাক্ত কবি গেয়েছেন, কালী কেবল মেয়ে নয়, কখনও কখনও পুরুষ হয়।

★মা কালীই কৃষ্ণরূপে প্রকাশিত, ঋগ্বেদে মা কালীর অন্যতম নাম কৃষ্ণী, যাঁর নামের অর্থ কালো মেয়ে। আহা, কালো মেয়ে শুনলেই মনে পড়ে শাক্ত পদাবলীর সেই অপূর্ব উক্তি: কালো মেয়ের পায়ের তলায় দেখে যা আলোর নাচন।

মা কালীই শ্রীরাধার মান রক্ষার্থে এক সঙ্কটের মুহূর্তে প্রকাশিত হয়েছিলেন, সেই কৃষ্ণকালী রূপ আজও বৃন্দাবনে পূজিত, বাংলায় রটন্তী কালী পুজোতেও এই কালী কৃষ্ণ অভিন্নতা ঘোষিত হয়।

★ঋগ্বেদে নিশা ও ঊষার উল্লেখ আছে, নিশা হলেন আদিদেবী, জগদকারণ, এবং সৃষ্টির সূচনায় তিনি নক্ৎ কৃষ্ণী। পরে তিনিই জগদপালিকা ঊষা। রাত্রি সূক্ত মা কালীর প্রাচীন উল্লেখ হিসেবে গণ্য হয়। ঊষা দশভুজা বলে আখ্যা পেয়েছেন।

হরপ্পা সভ্যতায় এই নিশা ঊষা পূজিত ছিলেন এমন সিদ্ধান্ত করার পেছনে একাধিক গবেষকের কাজ আছে। ঊষা হলেন নিশার রূপ। আজকের কালী দুর্গা এখান থেকেই।

অর্থাৎ, দুর্গা হলেন মা কালীর রূপ। জগদকারণ কালী: সৃষ্টির আদি মুহূর্তে অন্ধকার, কালের সূচনায় অমারাতে তিনি কালী, আর সৃষ্টির স্ফুরণ ঘটলে ঊষাকালে তিনি জগদপালিকা দুর্গা।

★দুর্গাপুজোর মন্ত্রে বস্তুত ভদ্রকালীর আবাহন ও উপাসনা হয়। দুর্গাপুজোর কেন্দ্রীয় অনুষ্ঠান সন্ধিপুজো, তাতে বলি গ্রহণ করেন স্বয়ং চামুণ্ডাকালী। দুর্গাপুজো যিনি তন্ত্রমতে করেছেন তিনিই জানেন যে বস্তুত এ হল মা আদ্যাকালী ভদ্রকালীর পুজো।

★ দুই গুরুত্বপূর্ণ হিন্দু দেবতা গণেশ এবং স্কন্দ অবশ্যই মায়ের অংশ, মাতৃকার সন্তান।

★ মহালক্ষ্মী সিংহবাহিনী, মহাসরস্বতীও সিংহবাহিনী, এঁরা দুর্গার সমতুল্য। এবং তথাকথিত অলক্ষ্মী বা নীল লক্ষ্মী এবং তন্ত্রের নীল সরস্বতীর মধ্যে মা কালীর শ্যামা বা নীল রূপ নিহিত।

★ মা তারা দ্বিতীয় মহাবিদ্যা রূপে মা কালীর তারিণী রূপের প্রকাশ, এই রূপে তিনি সন্তানদের সংসার সমুদ্রে তারণ করেন। তারার নামের প্রধান অর্থ তাই: যিনি তারিণী। কিন্তু আরেকটি অর্থ হল তারা, তারকা, যা অন্ধকার রাতে আমাদের নৌসাধনোদ্যত পূর্বসূরিদের পথ প্রদর্শক। রাত্রি এবং তারা অবিচ্ছেদ্য। মা কালী অবশ্যই রাত্রি। মা কালীর আকাশে মা তারা বিরাজমান।

★ মা কালীই সন্তানকোলে ষষ্ঠী, কারণ তিনি জগদকারণ প্রকৃতি, এবং আমরা সবাই তাঁর সন্তান।

★ মা মনসার সঙ্গে মা কালীর সর্পময়ী গুহ্যকালী রূপের সংযোগ আছে, সে তো সবাই বোঝেন। কিন্তু মনসাকালী মূর্তি পশ্চিমবঙ্গে কোথাও কোথাও আজও দেখা যায়।

★ কালীই প্রকাশিত হন সর্বরোগহর শীতলা রূপে, কারণ মা কালীর একটি গর্দভবাহিনী রূপ আছে শাস্ত্রে। মায়ের নাম আমাদের সুশীতল করে, তাই কালীই শীতলা।

★ মা কালীই সিংহবাহিনী রূপে প্রকাশিত হন, রক্ষাকালী সিংহবাহিনী হন আমরা জানি, তাই তিনিই সিংহবাহিনী চণ্ডী ও জগদ্ধাত্রী।

★ মা কালীর পুজো শনিবার সবথেকে বড় ভাবে হয়, তাই বড় ঠাকুর, গ্রহরাজ শনিও মা কালীর বিভূতির প্রকাশ, তিনি মা কালীর পাশে মায়ের অংশ হিসেবে এবং মায়ের দ্বারপাল ক্ষেত্রপাল ন্যায়পাল হিসেবে বিরাজ করেন।

★ যত শোন কর্ণপুটে সবই মায়ের মন্ত্র বটে। সব শব্দই মায়ের মন্ত্র, যত আহার সবই মায়ের আহুতি, বর্ণমালার প্রতিটি বর্ণ মাতৃকাবর্ণ, ইতিহাসের প্রত্যেক অনুক্ষণ মাতৃকা যুগ, এ ভূমির প্রতিটি ক্ষেত্রই কালীক্ষেত্র এবং আমাদের তন্ত্রাশ্রয়ী ধর্মের সব দেবতাই মায়ের প্রকাশ।

এজন্য কালী ভিন্ন কলিযুগে অপর দেবতা নেই, শাস্ত্রে বলা হয়েছে: ব্রহ্মা বিষ্ণু শিবাদীনাং শিরোরত্ন পদাম্বুজা। কলৌ কালী কলৌ কালী নান্যদেবঃ কলৌ যুগে।।

অর্থাৎ, ব্রহ্মা বিষ্ণু শিব যাঁর পাদপদ্মকে সর্বদা নিজের নিজের মাথার মুকুট হিসেবে ধ্যান করেন, সেই মা কালী ভিন্ন কলিযুগে অপর কোনও দেবতা নেই।

© তমাল দাশগুপ্ত Tamal Dasgupta

সর্বদা মা কালীর জয়ধ্বনি করবেন। জয় মা কালী। জয় জয় মা।

মায়ের ছবি ইন্টারনেট থেকে।

তমাল দাশগুপ্ত ফেসবুক পেজ, বারো মে দুহাজার তেইশ