মা কালী সাকার না নিরাকার – তমাল দাশগুপ্ত

মা কালী সাকার না নিরাকার?

মা কালী অব্যক্ত প্রকৃতি, তাঁকে ভাষায় বা ভাস্কর্যে প্রকাশ করা যায় না, তাহলে এই চতুর্ভুজা লোলজিহ্বা শববাহনা মুণ্ডমালিনী মূর্তিরূপ কেন ধারণ করেন?

এর সহজ উত্তর হল, মা মূর্তিরূপ ধারণ করেছেন তাঁর সন্তানদের সুবিধার্থে। সাধকদের সুবিধার্থে। কুলার্ণব তন্ত্রে ঠিক এই কথাই বলা হয়েছে, সাধকদের হিতার্থে তাঁর রূপকল্পনা করা হয়, তা নয়ত তিনি চিন্ময়ী।

তারাপীঠভৈরব, মা তারার সন্তান বামদেব বলতেন, বেটির আপ্তভাবে গুপ্তলীলা, সগুণে নির্গুণে বাঁধায় বিরোধ, ঢেলা দিয়ে ভাঙে ঢেলা।

মহানির্বাণ তন্ত্রে বলা হয়েছে আদ্যাশক্তি বিমূর্ত, তাঁর কোনও নির্দিষ্ট আকার হয় না, কিন্তু তিনি সর্বশক্তিমান, কাজেই আকার ধারণ করতেও সক্ষম। তিনি কেন আকার ধারণ করেন, তার তিনটি কারণ দেওয়া হয়েছে এখানে: জগতের হিতার্থে, তাঁর উপাসকদের স্বার্থে, এবং অশুভ বিনাশ করতে।

একটি যামলতন্ত্রে বলা হয়েছে যে মা কালীর স্থূল মূর্তিরূপ সবাই উপাসনা করেন। কিন্তু এ ছাড়াও সূক্ষ্মরূপ আছে, যা জগতজুড়ে প্রকৃতির মধ্যে প্রকাশিত হয়। এ ছাড়া তাঁর সর্বোচ্চ রূপ আছে যা জ্ঞানের মাধ্যমে প্রকাশ পায়। অর্থাৎ মা কালীর সর্বোচ্চ ধ্যানরূপ জ্ঞানরূপিণী। সাধনার সর্বোচ্চ স্তরে কালী হলেন জ্ঞানস্বরূপ।

শেষ করি কুলার্ণব তন্ত্রের একটি সুন্দর উক্তি দিয়ে। মা কালীর নানা মূর্তিরূপ হয়। তাঁর মূর্তি অগ্নিময়ী, তিনি আগুনে অধিষ্ঠান করেন। তিনি সন্ন্যাসীদের হৃদয়ে অধিষ্ঠান করেন। তিনি মাটির মূর্তিতেও অধিষ্ঠান করেন। কিন্তু যাঁর প্রকৃত দৃষ্টি আছে, তিনি মা কালীর মূর্তি সর্বত্র সর্বভূতে বিরাজমান (“সর্বত্র বিদিতমানা”) দেখবেন।

© তমাল দাশগুপ্ত Tamal Dasgupta

জয় মা কালী। জয় জয় মা।

মা কালীর এই অপরূপ মূর্তিটি কোপেনহেগেন মিউজিয়ামে অবস্থিত।

তমাল দাশগুপ্ত ফেসবুক পেজ, তিন এপ্রিল দুহাজার তেইশ

মন্তব্য করুন

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  পরিবর্তন )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  পরিবর্তন )

Connecting to %s