বিশ্বব্যাপী মাতৃকা উপাসনার প্রাচীনত্ব এবং ধারাবাহিকতা – তমাল দাশগুপ্ত

বিশ্বব্যাপী মাতৃকা উপাসনা প্রাচীন প্রস্তর যুগ থেকে চলে আসছে, চল্লিশ হাজার বছর পুরোনো। মা কালীর তন্ত্রধর্ম অনাদি, অনন্ত, চিরন্তন। মা কালীর তত্ত্বে মানব সভ্যতার অনেক সহস্র বছরের শ্রেষ্ঠতম দর্শনের নির্যাস মিশে আছে। আসুন, দেখি।

★ মাতৃকা উপাসনা পৃথিবীর সবথেকে প্রাচীন ধর্ম। সবথেকে প্রাচীন মাতৃমূর্তি চল্লিশ হাজার বছর আগে পুরাতন প্রস্তর যুগে (প্যালিওলিথিক) তৈরি, ইউরোপে পাওয়া গেছে। গুগল করুন Venus of Willendorf

★ সবথেকে প্রাচীন সিংহবাহিনী মূর্তি আট হাজার বছর আগে নব্য প্রস্তর যুগে তৈরি। গুগল করুন Seated Woman of Çatalhöyük

★ আজ থেকে পাঁচ হাজার বছর আগে পরিণত হরপ্পা সভ্যতা মাতৃধর্মীয় ছিল। অসংখ্য মাতৃকা মূর্তি পাওয়া গেছে। হরপ্পা সভ্যতার মাতৃকাদের মধ্যে পাওয়া গেছে সন্তানকোলে জগজ্জননী মূর্তি, বৃক্ষবাসিনী মূর্তি, বলি গ্রহণরত সপ্তমাতৃকা, দুই হাতে দুটি ব্যাঘ্রকে প্রশমিত করছেন এমন মাতৃকামূর্তি (সম্ভবত তন্ত্রের ইড়া ও পিঙ্গলার মাঝে সুষুম্নার দ্যোতনা)। এছাড়া হরপ্পা সভ্যতায় নদীমাতা পূজিত ছিলেন। এছাড়াও ঊষা ও নিশা পূজিত হতেন। মা কালীর আদিরূপ হরপ্পা সভ্যতায় পাওয়া গেছে, একজন মাতৃকা যাঁর মুখমণ্ডল মহাভীমা মহাভয়ঙ্করী। তাছাড়া মহিষমেধ হত হরপ্পা সভ্যতার তন্ত্রধর্মে, যেখান থেকে আজকের দুর্গা মহিষাসুরমর্দিনী। হরপ্পা সভ্যতায় একজন তারিণী মাতৃকা পূজিত ছিলেন, যিনি নৌকোবাহিনী। হরপ্পা সভ্যতায় বলাকা মাতৃকা পূজিত ছিলেন।

★ আজ থেকে চার হাজার বছর আগে পাণ্ডু রাজার ঢিবি, যা পশ্চিমবঙ্গের সবথেকে প্রাচীন প্রত্নক্ষেত্র, সেখানকার বাসিন্দারা বলাকা মাতৃকার উপাসনা করতেন, প্রমাণ পাওয়া গেছে।

★ খ্রিষ্টপূর্ব যুগে ভারত জুড়ে মহিষমর্দিনী মূর্তি পাওয়া গেছে। এছাড়া পাওয়া গেছে একজন জনপ্রিয় মাতৃকা যাঁর মাথার খোঁপায় চুলের কাঁটাগুলি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আয়ুধ আকৃতির। আয়ুধসংখ্যা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দশ।

★ মহাভারতে দুর্গাস্তব ছাড়াও সেই যুগে জনপ্রিয় মাতৃকাদের তালিকা পাওয়া যায়। কুষাণ যুগে প্রথম সিংহবাহিনী মূর্তি পাওয়া যায়। গুপ্তযুগ থেকে ভারতে নিয়মিত সিংহবাহিনী মাতৃকা মূর্তি পাওয়া যাচ্ছে। মহিষমর্দিনী মূর্তিটি মহিষাসুরমর্দিনী রূপ ধারণ করছে সপ্তম অষ্টম শতক থেকে।

★ ষষ্ঠ শতকে শ্রী শ্রী চণ্ডী গ্রন্থে দেবী বলছেন তাঁর উপাসনা হয় শরৎকালে। এখানে অকাল বোধনের কোনও গল্প নেই, তা অনেক পরে মধ্যযুগে কৃত্তিবাসের বাংলা রামায়ণের মাধ্যমে জনপ্রিয় হবে।

পালসেনযুগে বাংলা ও ভারত জুড়ে মাতৃকা উপাসনার ধর্ম জনপ্রিয় ছিল। এই সময়ে মা কালীর বর্তমান মূর্তিরূপ নির্মিত হয়। সেনযুগের বৃহদ্ধর্ম পুরাণে প্রথম মা কালীর এখনকার মত মূর্তিরূপ বর্ণনা পাই, চতুর্ভুজা মুণ্ডমালিনী শববাহনা লোলজিহ্বা। মা কালী অনেক প্রাচীন কিন্তু আগে মূর্তিরূপ ভিন্ন ছিল।

© তমাল দাশগুপ্ত Tamal Dasgupta

জয় মা কালী। জয় জয় মা।

মায়ের ছবি টুইটার থেকে।

তমাল দাশগুপ্ত ফেসবুক পেজ, পাঁচ এপ্রিল দুহাজার তেইশ

মন্তব্য করুন

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  পরিবর্তন )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  পরিবর্তন )

Connecting to %s