গুপ্তযুগের ইতিহাসে মা কালী – তমাল দাশগুপ্ত

গুপ্তযুগের ইতিহাসে মা কালী।

গুপ্তযুগ ভারতের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। আমরা সবাই জানি, ৩৫০ থেকে ৫৫০ খ্রিষ্টাব্দ অবধি এই গুপ্তযুগ স্থায়ী হয়েছিল। আজ আমরা গুপ্তযুগের নথিতে মা কালীর উল্লেখ সম্পর্কে জানব।

১. গুপ্তযুগে মহাভারতের বর্তমান চূড়ান্ত রূপটি লিপিবদ্ধ হয়েছে। এখানে মা কালীর উপস্থিতি লক্ষণীয়। দুটি দুর্গাস্তোত্র আছে মহাভারতে যা কালী দুর্গার অভিন্নতা ঘোষণা করে। আমরা মা কালীকে বলিপ্রিয়া রুধিরপ্রিয়া বলি, এ দুটি শব্দই মহাভারতের দুর্গাস্তোত্র থেকে। এছাড়া মা কালীর উল্লেখ আছে সৌপ্তিক পর্বে, যেখানে মা কালী মহাভয়ঙ্করী রূপে বলি গ্রহণ করতে আসছেন।

২. গুপ্তযুগে কালিদাসের কাব্যে মা কালীর একাধিক উল্লেখ। মা কালীর নরমুণ্ডমালিনী রূপ, দ্রংষ্টাকরাল বদন এবং তাণ্ডব নৃত্যের উল্লেখ পাই কুমারসম্ভব কাব্যে। অনেকেই বলেন কালিদাসের নামের অর্থ মা কালীর দাস।

৩. গুপ্তযুগের গ্রন্থে প্রথম আমরা চামুণ্ডার উল্লেখ দেখতে পাই। ইনি মা কালীর অন্যতম রূপ এবং সপ্তমাতৃকার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের দুর্গাপুজোর সবথেকে কেন্দ্রীয় অংশ সন্ধিপুজোয় ইনিই বলি গ্রহণ করেন। চামুণ্ডা সম্পর্কে আগে অনেকবার লিখেছি। একসময় গৌড়ের গৃহে গৃহে চামুণ্ডা মণ্ডপ থাকত।

৪. গুপ্তযুগে একাধিক পুরাণ লিখিত হতে থাকে, মার্কণ্ডেয় পুরাণ সহ (যাতে শ্রী শ্রী চণ্ডী অন্তর্ভুক্ত)। এবং এগুলিতে আমরা মা কালীর কিছু আশ্চর্য উল্লেখ পাই, যার মধ্যে অন্যতম মা পার্বতী কালী যিনি পরে গৌরী রূপ ধারণ করবেন। এক্ষেত্রেও দুর্গা কালী অভিন্নতা তত্ত্ব গুপ্তযুগেই প্রকাশিত হতে দেখা যায়।

৫. গুপ্তযুগের বৈষ্ণব ধর্মও এই সময় মাতৃকা উপাসনা এবং কালীসাধনায় সম্পৃক্ত ছিল। গুপ্তযুগে ৪২২ খ্রিষ্টাব্দ নাগাদ গঙ্গাধর লেখ থেকে জানা যায় যে এই সময় নির্মিত একটি বিষ্ণু মন্দির পরিপূর্ণ ছিল ডাকিনীগণ এবং মাতৃকাগণ কর্তৃক। বিষ্ণু মন্দিরটি আনন্দে উচ্চ কলরবকারিণী এবং তন্ত্রোদ্ভূত প্রবল বায়ু দ্বারা সমুদ্র আলোড়নকারিণী মাতৃকাদের দ্বারা পরিপূর্ণ ছিল বলে এই গঙ্গাধর লেখ থেকে জানা যায়। ডাকিনী এবং মাতৃকা অবশ্যই মা কালীর গণ অথবা অনুচরবাহিনী, তাতে সন্দেহ নেই।

৬. তন্ত্রধর্মের উত্থান গৌড়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এই গুপ্তযুগের শেষের দিকেই গৌড়ের উত্থান হয়, গৌড়ের প্রথম লিপিবদ্ধ উল্লেখ গুপ্তযুগের শেষের দিকে। তন্ত্র হল গৌড়ে প্রকাশিতা বিদ্যা। প্রাচীন গৌড়ের অধিষ্ঠাত্রী দেবী গৌড়াকালী নামে পরিচিত, আজ আমরা তাঁকে জহুরাকালী নামে জানি। মুসলমান যুগে গৌড় নাম উচ্চারণ করতে কিছু সংকোচ থাকায় (গৌড় উচ্চারণ আরবি তুর্কি বা ফার্সি ভাষায় হয় না। কাছাকাছি হয় গোর, যার অর্থ কবর। এজন্য গৌড় শব্দটি মধ্যযুগে ব্যবহার করা বন্ধ হয়ে গেছিল। সুখময় মুখোপাধ্যায় দ্রষ্টব্য)।

৭. গুপ্তযুগের অন্তিম লগ্নে শ্রী শ্রী চণ্ডী রচিত হয়, ষষ্ঠ শতকে। এতে মা কালীর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ আছে। তিনি রক্তবীজ বধ করেন এবং তিনি চামুণ্ডা নামে খ্যাত হন।

© তমাল দাশগুপ্ত Tamal Dasgupta

জয় মা কালী। জয় জয় মা।

মায়ের ছবি পিন্টারেস্ট থেকে।

★★■★★

“মা কালী এবং তন্ত্র” শীর্ষক অনলাইন কোর্সের প্রথম ব্যাচ নববর্ষের দিন শনিবার শুরু হবে। প্রথম ব্যাচ তৈরি হয়ে গেছে। দ্বিতীয় ব্যাচে ভর্তি চলছে, কোর্স ফিজ ভারতীয় মুদ্রায় মাত্র সাতশ (700) টাকা। সাত সপ্তাহের কোর্স। প্রতি শনি ও রবিবার রাতে গুগল মিটে ক্লাস হবে। ভর্তি হতে চাইলে 7699750212 নম্বরে পেটিএম/ফোনপে/গুগলপে করুন ৭০০(700) টাকা, এবং স্ক্রিনশট পাঠিয়ে দিন ওই নম্বরেই হোয়্যাটস্যাপ করে। বাংলাদেশ থেকেও কোর্সে ভর্তি হতে টাকা পাঠাতে পারেন, উপায় জানতে হোয়্যাটস্যাপ করুন।

মা কালী এবং তন্ত্র কোর্স অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের তন্ত্র কোর্সের ধাঁচে তৈরি করা হয়েছে, যেখান থেকে আমি নিজে তন্ত্র কোর্স করেছি সম্প্রতি, এবং উচ্চপ্রশংসিত হয়েছি। আপনারা অনেকেই জানেন।

তমাল দাশগুপ্ত ফেসবুক পেজ, দশ এপ্রিল দুহাজার তেইশ

মন্তব্য করুন

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  পরিবর্তন )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  পরিবর্তন )

Connecting to %s