
মহাকাব্যে মা কালী: রামায়ণ মহাভারতে মা কালীর উল্লেখ।
একটা বহুল প্রচলিত ভুল ধারণা আছে যে মা কালীর উল্লেখ প্রাচীন ভারতীয় গ্রন্থে পাওয়া যায় না, মা কালীর উত্থানের বিবরণ মধ্যযুগে আগমবাগীশ থেকে শুরু, কিন্তু ইংরেজিতে যাকে বলে nothing can be further from the truth: প্রকৃত ইতিহাস হল মা কালীর প্রত্ন প্রমাণ হরপ্পা সভ্যতা থেকে পাওয়া যায়, এবং মা কালীর তত্ত্ব দর্শন ও বিমূর্ত প্রকাশের লিপিবদ্ধ নথি ঋগ্বেদে রাত্রিসূক্ত থেকে শুরু হয়। এমনকি ঐতরেয় আরণ্যকে বয়াংসি শ্লোক যা প্রাচীন বাঙালিকে চিহ্নিত করে, সেটিও মা কালীর দ্যোতনা বহন করে কারণ মা কালীর আদি রূপ বলাকা মাতৃকা। মুণ্ডক উপনিষদ সরাসরি নাম করেই মা কালীর উল্লেখ করে, আগে লিখেছি এই বিষয়ে। এ কথা সত্যি যে বৈদিক সনাতনী বর্ণবাদী ব্রাহ্মণ্যবাদী সভ্যতায় মা কালী কিছুটা প্রান্তিক কারণ তিনি তন্ত্রের দেবী, তিনি ব্রাত্য-আর্য সভ্যতার অধিষ্ঠাত্রী। কিন্তু তা সত্ত্বেও উত্তর ভারতে আর্যাবর্ত কৃষ্টির বিভিন্ন গ্রন্থে মা কালীর উল্লেখ আছে যা আমাদের জগৎজননীর প্রাচীনত্ব ঘোষণা করে। বৈদিকদের নির্ঋতি দেবী কৃষ্ণা এবং ঘোরা বলে বর্ণিত, তিনিও আমাদের মা কালীর আদি রূপ। বৈদিক বর্ণবাদী আর্যাবর্ত মা কালীকে ভয় করত, ভয় থেকে ভক্তি করত। মায়ের স্নেহময়ী রূপ বাঙালির নিজস্ব সম্পদ, আর্যাবর্ত গ্রন্থে মা কালীর করাল ভয়াল প্রলয়ঙ্করী রূপটি মুখ্য। কাজেই প্রাচীন নথি খোঁজার সময় এই বিষয়টি মাথায় রাখলে সুবিধা হবে।
আজ আমরা দুটি প্রাচীন ভারতীয় মহাকাব্যে মা কালীর উল্লেখ সম্পর্কে সংক্ষেপে জানব।
বাল্মীকি রামায়ণ-এ একজায়গায় কালীকে নৃত্যরতা ভগবতী বলা হয়েছে এবং তিনি শূর্প, ফাল, মুষল প্রভৃতি অস্ত্রের মালা ধারণ করেন, এমন জানানো হয়েছে। বোঝা যায় নৃত্যকালীর মূর্তিকল্প বেশ প্রাচীন।
তবে রামায়ণের তুলনায় মহাভারতে মা কালীর উল্লেখ অনেক বেশি। শল্য পর্ব সমসাময়িক ভারতে পূজিত জনপ্রিয় মাতৃকাদের একটি তালিকা দেয়, সেখানে ভদ্রকালী এবং কালিকার উল্লেখ পাওয়া গেছে।
মহাভারতে দুর্গাস্তোত্র আছে আমরা জানি। সেখানে ভদ্রকালী ও মহাকালী উল্লিখিত: “ভদ্রকালি নমস্তুভ্যং মহাকালি নমোস্তুতে।”মা কালীকে বলিপ্রিয়া রুধিরপ্রিয়া বলি আমরা, সেও এই মহাভারতের শ্লোক থেকেই।
মহাভারতে আর এক জায়গায় ভদ্রকালী উল্লিখিত যেখানে বীরভদ্রকে সঙ্গে নিয়ে স্বয়ং ভদ্রকালীই দক্ষযজ্ঞ বিনষ্ট করেছিলেন বলা হয়েছে। স্পষ্টই এটি দক্ষযজ্ঞ বিনাশের অন্যতম প্রাচীন উল্লেখ এবং পৌরাণিক যুগের আগেকার উল্লেখ।
স্কন্দ বা কার্তিকেয়জন্মের কাহিনী বর্ণনায় ভদ্রকালীর উল্লেখ আছে মহাভারতে।
সর্বোপরি মহাভারতে সৌপ্তিক পর্বে মা কালীর উল্লেখ আছে। মা কালীর আবির্ভাব ঘটছে যখন অশ্বত্থামা পাণ্ডব শিবিরে রাতের বেলায় হত্যাকাণ্ড ঘটাচ্ছেন। স্পষ্টই তিনি এখানে বলিপ্রিয়া রূপে আবির্ভূত, বলি গ্রহণ করতে এসেছেন। এখানে মা কালীকে বলা হয়েছে রক্তাস্যনয়না, রক্তমাল্যানুলেপনা, পাশহস্তা, ভয়ঙ্করী।
© তমাল দাশগুপ্ত Tamal Dasgupta
জয় মা কালী। জয় জয় মা।
মা কালীর ছবি peakpx ওয়েবসাইট থেকে নেওয়া।
তমাল দাশগুপ্ত ফেসবুক পেজ, বিশ মার্চ দুহাজার তেইশ