
মা কালীর ঋজুপথ।
রাজা মানসিংহ যুদ্ধ করতে এসে রটিয়ে দিয়েছিলেন যে মা যশোরেশ্বরী বিমুখ হয়েছেন সম্রাট প্রতাপের প্রতি, অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। সরল বিশ্বাসে সেই গুজবে প্রতীতি স্থাপন কোরে যশোর সম্রাট প্রতাপাদিত্যর সৈন্য ভয়ানক মুষড়ে পড়ে এবং যুদ্ধে হেরে যায়।
ভাবুন, মধ্যযুগের ক্রুসেড হচ্ছে। যদি এমনটা হত, যে আরবদের মধ্য থেকে কেউ সুকৌশলে রটিয়ে দিত, যে যীশু ক্ষুব্ধ এবং বিমুখ হয়েছেন খ্রিষ্টান নাইটদের প্রতি। তাহলে কি তাঁরা বিভ্রান্ত হতেন?
না, হতেন না। বরং এই ব্ল্যাসফেমি দেখে ক্রুদ্ধ হয়ে আরও বেশি শক্তি প্রয়োগ করে গুজব রটনাকারীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতেন।
কেন বলুন তো? কারণ খ্রিষ্টধর্মের সুনির্দিষ্ট তত্ত্ব আছে। ওঁরা যুদ্ধ করতেই এসেছিলেন সেই তত্ত্ব এবং সেই ধর্মের স্বার্থে, যীশুর ধর্মের আদর্শ কি, সেই ক্রিড এবং সেই ধর্মের অর্থোডক্সি তাঁরা জানতেন। অতএব আচমকা এসব গুজব ছড়ালে লাভ হত না।
এই জায়গায় বাঙালির বারবার সমস্যা হচ্ছে, শাক্তধর্মের বারবার সমস্যা হচ্ছে। আমরা জানি মহিষাসুর শাহাদত দিবস পালনকারীদের কথা, এই দুর্বৃত্তরা আমাদের জগন্মাতার নামে অকথ্যকথন করেও পার পেয়ে যান কারণ শাক্তরা বিভ্রান্ত, শাক্তদের সুনির্দিষ্ট তত্ত্ব নেই। এমন তথাকথিত শাক্ত গ্রূপও আছে যেখানে মহিষাসুরের প্রেমগাথা লেখা হয়েছে। ভাবুন অবস্থাটা!
ধলভূমে উপাস্য স্থানেশ্বরী অধিষ্ঠাত্রী মাতৃকা রঙ্কিণী। তাঁর সম্পর্কেও এমন গুজব ছড়ানো হয়েছিল। একবার একজন বৈষ্ণব গুরু ধলভূমে এলেন সশিষ্য, এবং রটিয়ে দিলেন যে মা রঙ্কিণী নিতান্ত দাসীর মত সেই গুরুর অনুগমন করছেন, পায়ে পড়ে কৃপা চাইছেন। আবার মধ্যযুগে একজন মুসলমান সেনাপতি, নাম লোহানী, তিনিও নাকি দেবীকে জব্দ করে দিলেন, রঙ্কিণী নাকি সেই জাঁদরেল সেনাপতির ভয়ে পালিয়ে পালিয়ে বেড়াতে লাগলেন। এইসব গল্প ছড়ানো হল। লোকে বিশ্বাসও করল।
কেন হয়েছে এমন? আজও কেন আমাদের জগন্মাতার তত্ত্ব বিকৃত হচ্ছে? কখনও মহিষাসুরবাদী শরদিন্দু উদ্দীপন এসে মাতৃকা দূষণ করছে, কখনও মা সরস্বতীর নামে উল্টোপাল্টা বলছে, আবার কখনও দিলীপ ঘোষ বলছে ইয়ে দুর্গা কওন হ্যায়। কেন এমন হচ্ছে এরকম বলুন তো?
প্রশ্নগুলো সহজ আর উত্তরও তো জানা। আমাদের সুনির্দিষ্ট কালী তত্ত্ব চাই। খ্রিষ্টধর্মর অনুরাগীকে কেউ বোঝাতে পারবে উল্টোপাল্টা যীশুর বিষয়ে? আল্লা সম্পর্কে তো ছেড়েই দিন। কিন্তু মা দুর্গা সম্পর্কে আনন্দবাজারে ভাট লেখা যায়। অনেক বাঙালি বিশ্বাসও করে ফ্যালে। মা কালী আমাদের আবহমান তন্ত্রধর্মের কেন্দ্রে অবস্থান করেন, কিন্তু তাঁর উপাসনা এবং প্রাচীন ধর্ম সম্পর্কে প্রচুর বিভ্রান্তি আছে (মহুয়া মৈত্র মনে আছে?) এবং সঠিক তথ্যর রীতিমত অভাব আছে।
এজন্যই কালীক্ষেত্র আন্দোলন। এজন্যই আমাদের উদ্যোগে “মা কালী এবং তন্ত্র” কোর্স শুরু হতে চলেছে পয়লা বৈশাখ থেকে। মায়ের নামে জয়ধ্বনি করে এগিয়ে আসুন, আসুন আমরা মায়ের ঋজুপথে একসঙ্গে এগিয়ে চলি, এই পেজের সমস্ত পাঠকদের কাছে এই অনুরোধ।
জয় মা কালী।
©কালীক্ষেত্র আন্দোলন।
কালীক্ষেত্র আন্দোলন ফেসবুক পেজ, চার মার্চ দুহাজার তেইশ