
মা কালীর রঙ।
★ রঙের উদযাপন করলাম আমরা বসন্তোৎসবে। এই উপলক্ষে মা কালীর মূর্তিরূপের রঙ সম্পর্কে আমরা আলোচনা করব। কাল বা সময় কোনও বস্তু নয়, তাই রঙ হয় না। যদি কালের কোনও রঙ, কালস্রোতের কোনও বর্ণ কল্পনা করা সম্ভব হত, তাহলে আমরা বোধহয় কালো রঙের কথাই ভাবতাম। কালী কাল অভিন্ন, আবার কালীনামের একটি অর্থ যিনি কালের কলন করেন। কাল যদি কালো হয়, কালের কলন করেন বলে মা কালীর রঙও কালো।
★ আবার, কালী জগদকারণ। জগতের উৎসবিন্দুর যদি কোনও রঙ ভাবা যায়, তা সম্ভবত কালো।
★ সমস্ত বর্ণ এসে এই কালো রঙেই মেশে। জগতের বিস্তার, দশদিকে যিনি ব্যাপ্ত, আর কোন্ রঙেই বা তাঁর অব্যক্ত রূপের প্রকাশ ঘটতে পারে?
★ অন্ধকারে শুরু হওয়া একটি নতুন দিনের জন্মক্ষণও কালো। জগৎপ্রসবিনী মা সেজন্য কালো বলেই চিহ্নিত, তিনি কালরাত্রি। এই রাত্রিই উৎসবিন্দু, রাত্রিই সৃষ্টিরহস্য ধারণ করেন।
★ জগতের শেষেও এই কালো রঙ, যখন সব রঙ শেষ হয়ে যাবে, যখন সব সময় শেষ হয়ে যাবে, সেই জগদবিলয়কালের প্রতীকও এই কালো রঙ।
★ আর লাল রঙ? হ্যাঁ, লাল, কারণ জীবনের রঙ লাল, রক্তের রঙ লাল। পৃথিবীর সবথেকে প্রাচীন মাতৃমূর্তির আখ্যা পেয়েছে যে প্রাচীন প্রস্তর যুগের প্রতিমা, চল্লিশ হাজার বছর আগেকার সেই Venus of Willendorf মূর্তি একরকম সিঁদুরের মত লাল রঙে চর্চিত ছিল। প্রাচীন যুগের মানুষের কাছে মেয়েদের লাল রজঃ ছিল পবিত্র জন্মবীজ। আবার মাতৃকা উপাসনায় মায়ের কাছে পশুবলি দেওয়া হত, কারণ প্রাচীন মানুষ মূলত মাংসাশী, এবং নিজে যা খান, ভক্তজন সেটাই মাকে নিবেদন করবেন, সেটাই সততা। সেটাই স্বাভাবিক কারণ, “আহার কর মনে কর আহুতি দিই শ্যামা মায়ে”। কাজেই লাল রঙ বলিপ্রিয়া রুধিরপ্রিয়া মায়ের প্রতীক। আবার লাল হল আগুনের রঙ। এবং আগুন মা কালীর সঙ্গে অভিন্ন, অগ্নির জিহ্বা ও মা কালীর জিহ্বা অভিন্ন। এছাড়া লাল রঙ শক্তির প্রতীক, সেজন্য ধর্ম অর্থ কাম – এই তিন বর্গের শক্তি এই লাল রঙে প্রকাশিত।
★ কিন্তু সর্বশেষে, মোক্ষ বর্গের প্রতীক হল কালো, কারণ নির্বাপিত দীপ এই নির্বাণতত্ত্বের প্রকাশ, অতএব সেই চিরপ্রণম্য কৃষ্ণবর্ণ আমাদের মায়ের রঙ।
★ লাল কালো ছিল হরপ্পা সভ্যতা থেকে পাণ্ডু রাজার ঢিবি পর্যন্ত বাঙালির পূর্বসূরীদের তান্ত্রিক রঙ। এই সমস্ত প্রত্নস্থানে লাল কালো রঙের প্রাচুর্য দেখা গেছে।
জয় মা কালী। জয় জয় মা।
© তমাল দাশগুপ্ত Tamal Dasgupta
মায়ের ছবি পিন্টারেস্ট থেকে।
(মা কালীর আদি বর্ণ কালো। নীল বর্ণের কালী আসলে দেবী নীলা বা নীলাবতী, যাঁকে নীল সরস্বতী, নীল চণ্ডী, নীল তারা বিভিন্ন নামে ডাকা হয়। তাঁর সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব পরে। সঙ্গে থাকুন)
তমাল দাশগুপ্ত ফেসবুক পেজ, আট মার্চ দুহাজার তেইশ