পূর্ণিমা এবং তন্ত্রধর্ম – তমাল দাশগুপ্ত

পূর্ণিমা এবং তন্ত্রধর্ম।

দোলযাত্রা উৎসবে আমরা পূর্ণিমা তিথি ও তন্ত্রধর্মের সম্পর্ক বিশ্লেষণ করব।

আমাদের কাছে অমাবস্যা তিথি পরমপ্রিয়, কারণ মা কালীর উপাসনা হয় এই তিথিতে। কিন্তু পূর্ণিমা তিথির গুরুত্বও তন্ত্রে যথেষ্ট।

★ শুক্লপক্ষ আমাদের মাতৃধর্মের নবরাত্রি এবং পঞ্চরাত্রি উপাসনার ধারক। বসন্ত হোক বা শরৎ, শারদীয়া দুর্গাপুজো হোক বা বাসন্তী দুর্গাপুজো, দেবীপক্ষ সর্বদাই শুক্লপক্ষে শুরু হয়, এবং এই দেবীপক্ষ পূর্ণিমা তিথিতে শেষ হয়। শারদ পূর্ণিমা বা কোজাগরী পূর্ণিমা মা লক্ষ্মীর উপাসনায় জাগরুক হওয়ার সময়। যদিও উত্তর ভারতে দীপাবলির দিনই লক্ষ্মীর পুজো হয়, এবং আগমবাগীশও তন্ত্রসারে দীপাবলির কার্তিকী অমাবস্যায় লক্ষ্মীপুজোর উল্লেখ করেছেন। আসলে আলোকোজ্জ্বল রাত্রিই মা লক্ষ্মীর আগমনবার্তা ঘোষণা করে।

★ সম্ভবত পূর্ণিমা রাতে মা লক্ষ্মীর আগমন একটি প্রাচীন তন্ত্রধর্মীয় প্রথা। এর নানা ব্যাখ্যা হতে পারে, অন্যতম ব্যাখ্যা এই যে বণিকদের জন্য পূর্ণিমা গুরুত্বপূর্ণ ছিল, এবং হরপ্পা সভ্যতার পণি থেকে বাঙালি জাতির বণিক, সবাই পূর্ণিমা তিথিতেই মায়ের উপাসনা করতেন ও করেন। কেন? সম্ভবত প্রাচীন যুগের বাণিজ্য ক্যালেন্ডারে এই পূর্ণিমা তিথির কিছু তাৎপর্য ছিল। স্বর্ণের মত সুন্দর প্রফুল্ল মনোরম জ্যোৎস্নালোকে বণিকদের বাণিজ্য উপলক্ষে যাত্রা করতেও সুবিধা হত নিশ্চয়ই।

★ বাঙালি গন্ধবণিক জাতি আজও বৈশাখী পূর্ণিমা তিথিতে মা গন্ধেশ্বরীর উপাসনা করেন। তিনি মূলত সিংহবাহিনী চণ্ডী বা মহালক্ষ্মী। পূর্ণিমা তিথির সঙ্গে কাজেই মাতৃকা উপাসনার একটি প্রাচীন সম্পর্ক আছে। সারা বছর জুড়েই পূর্ণিমা তিথির মাতৃধর্মীয় উদযাপন দেখি। রাসপূর্ণিমা তিথিতে রাসমণ্ডল আসলে ছিল মাতৃকা উপাসনার উৎসব, আগে সেই আলোচনা করেছি আমার পেজে।

★ হরপ্পা সভ্যতার সময় থেকেই পূর্ণিমা এবং অমাবস্যা যথাক্রমে উদ্ভাসিত ঊষা এবং আদিমাতা নিশার প্রতীক। আমাদের তন্ত্রধর্মে পূর্ণিমা তিথি আলোকোজ্জ্বল প্রাচুর্যের তাৎপর্য বহন করে। জগতের উৎসে জগদকারণ অব্যক্ত প্রকৃতির কালো রঙ, অমানিশা কালরাত্রি। কিন্তু জগতের বিস্তার ও স্থিতির সময় তিনি পূর্ণচন্দ্রের মত উদ্ভাসিত: পূর্ণিমা তিথি জগতের স্থিতি ও উদ্ভাস।

★ সেজন্যই পূর্ণিমায় বা শুক্লপক্ষে মহালক্ষ্মী বা দুর্গা বা চণ্ডী পূজিত হন। শরতের চন্দ্রের সঙ্গে মা চুন্দা তুলনায়িত হয়েছেন একটি প্রাচীন শ্লোকে, চুন্দা ছিলেন পালযুগের সূচনায় সম্রাট গোপালের উপাস্য মাতৃকা।

© তমাল দাশগুপ্ত Tamal Dasgupta

পালযুগে নবম শতকের চুন্দা মূর্তি। কলকাতায় ভারতীয় জাদুঘরের বৌদ্ধ শিল্পকলা প্রদর্শনী থেকে।

জয় জয় মা। পূর্ণিমা তিথিতে মায়ের আলোয় আলোকিত হোক জগৎ।

তমাল দাশগুপ্ত ফেসবুক পেজ, সাত মার্চ দুহাজার তেইশ

মন্তব্য করুন

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  পরিবর্তন )

Twitter picture

You are commenting using your Twitter account. Log Out /  পরিবর্তন )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  পরিবর্তন )

Connecting to %s