
দোলপূর্ণিমায় আমরা মা মহালক্ষ্মীর জয়ধ্বনি করব।
হিন্দুর ধর্মে এমন একটি উৎসব নেই যা মাতৃকা উপাসনার প্রাচীন ধারায় পুষ্ট নয়। দুর্ভাগ্য হল, প্রাচীন উৎসবের কেন্দ্রে অধিষ্ঠানরত মাতৃকাকেই মুছে দেওয়া হয়েছে অনেক সময়। এই দোলপূর্ণিমা অন্যতম উদাহরণ। এই দিনে আগে মাতৃকা উপাসনা হত। এখন একে সবাই বৈষ্ণব ধর্মের উৎসব বলেই জানেন, একে মাতৃকা উপাসনার উৎসব বলে সাধারণ মানুষ চেনেন না।
আসুন, আজ দোলপূর্ণিমায় মাতৃকা উপাসনার প্রমাণ দেখব আমরা।
বসন্ত পঞ্চমীর দিন মা সরস্বতীর উপাসনার মাধ্যমে ঋতু পরিবর্তনকালীন উৎসবের একটি ক্যালেন্ডার শুরু হত এবং দোলপূর্ণিমা সেই উৎসবের চূড়ান্ত ক্ষণ ছিল।
এই দোল উৎসবে রঙের বাহুল্য শ্রী বা মা লক্ষ্মীর প্রাচুর্যের প্রতীক। হরপ্পা সভ্যতায় বহুবর্ণ পুঁতির মালা জনপ্রিয় ছিল, বিভিন্ন রঙের সমাহার সমৃদ্ধির দ্যোতনা বহন করত। নানারকম রঙিন পাথর বিদেশে রফতানি করে হরপ্পা সভ্যতার পণি (আমাদের বণিক) বাণিজ্যিক প্রাচুর্যের অধিকারী হতেন। পাণ্ডু রাজার ঢিবিতেও অনুরূপ নানা রঙের পুঁতি পাওয়া গেছে। লক্ষ্মী সমুদ্র থেকে আসেন, সমুদ্র বহুবর্ণের সম্পদ ধারণ করে।
জগৎ বহুবর্ণ, এবং তন্ত্রে রঙের প্রতীকী ব্যবহার। কৃষ্ণ এবং লাল রঙ প্রাচীন কাল থেকে মা কালীর দ্যোতনা বহন করে, এই লাল কালো রং ছিল হরপ্পা থেকে পাণ্ডু রাজার ঢিবিতে প্রধান রঙ। আবার শ্বেত রঙ মা সরস্বতীর। পালযুগে মা তারার বিভিন্ন রঙের প্রতিমা নির্মিত হত, প্রত্যেক রঙের সুনির্দিষ্ট তাৎপর্য। সমস্ত রঙ এই দোলপূর্ণিমায় একত্রিত হয়ে আমাদের তন্ত্রধর্মের উৎসব রচনা করত। বসন্তের বাসন্তী রঙ, পলাশ শিমূলের লাল আগুনরঙ দিগন্তে দিগন্তে – বসন্তে বহুবর্ণ প্রকৃতির বহিঃপ্রকাশ ঘটত এই দোলের উৎসবে।
যেহেতু বৈষ্ণব ধর্ম প্রথম থেকেই শ্রী বা লক্ষ্মীর আশ্রয়ে বর্ধিত, তাই দোলপূর্ণিমা আজকে আমরা বৈষ্ণব উৎসব রূপেই জানি। কিন্তু কেন্দ্রে থাকা আবহমান মাতৃকা চোখের আড়ালে চলে গেছেন, সে বড় দুঃখের।
মাতৃকার প্রধান দুই রূপ, অমাবস্যায় তিনি মহাকালী আর পূর্ণিমা তিথিতে তিনি মহালক্ষ্মী।
দেবী মহিষমর্দিনীর উপাসনা হয় শ্রীরামপুরে এই দোলপূর্ণিমা তিথিতে, দেবীর দুই দিকে জয়া বিজয়া থাকেন। এই মহিষমর্দিনী অবশ্যই দেবী মহালক্ষ্মী। পালযুগে শরতের পূর্ণিমা তিথিতে মা চুন্দা পূজিত হতেন, যিনি চণ্ডীর সঙ্গে অভিন্ন, অর্থাৎ কিনা সেই মহালক্ষ্মী। বসন্তের পূর্ণিমা তিথিও মা মহালক্ষ্মীর উপাসনার সময় ছিল।
জয় মা মহিষমর্দিনী। জয় মা মহালক্ষ্মী। জয় জয় মা।
সবাইকে দোলপূর্ণিমার শুভেচ্ছা।
© তমাল দাশগুপ্ত Tamal Dasgupta
গতকাল এই পাথরের লক্ষ্মীমূর্তিটি আমার শ্বশুরবাড়ির একটি পুকুর থেকে পাওয়া গেছে। প্রতিমা তেমন পুরোনো নয়, গত শতকের মনে হচ্ছে। কারা কেন ফেলে গিয়েছিল, জানা যায় নি। মাকে স্থাপনা করা হয়েছে, পুজো করা হচ্ছে।
তমাল দাশগুপ্ত ফেসবুক পেজ, ছয় মার্চ দুহাজার তেইশ