
গড়পঞ্চকোট খণ্ডহর আজকে যা দেখি, তা আদিতে একটি মাতৃমন্দির কমপ্লেক্স ছিল। পালসেনযুগে মা কল্যাণেশ্বরীর আদি মন্দির এখানেই ছিল, যদিও মা কল্যাণেশ্বরীর মন্দির অনেক শতাব্দী হল মাইথনে সরে গেছে। কিন্তু পালদের (পরে সেনদের) সামন্তরাজা শিখর রাজবংশ মাতৃকা উপাসক ছিলেন, সমস্ত ঐতিহাসিক প্রমাণ বিদ্যমান: পুরো অঞ্চলটিই মাতৃকা উপাসক ছিল বলেই ‘ধলেতে রঙ্কিণী মা গো শিখরে কল্যাণী” প্রবাদ লোকমুখে প্ৰচলিত। এই গড়পঞ্চকোট পালসেনযুগে তন্ত্রাশ্রয়ী মাতৃধর্মের অন্যতম কেন্দ্র ছিল।
তবে মধ্যযুগে এখানে রাধাকৃষ্ণময় বৈষ্ণব ধর্ম প্ৰচলিত হয়। সেই ধারার প্রভাবে বর্তমানে গড় পঞ্চকোটে পুনস্থাপিত মন্দির কাঠামোগুলো হুবহু মধ্যযুগের বিষ্ণুপুরের বৈষ্ণব স্থাপত্যর মত করে দেওয়া হয়েছে ও হচ্ছে। কি ভালোই না হত, যদি এখানে বিদ্যমান পালসেনযুগের আদি কল্যাণেশ্বরী মাতৃমন্দিরের কাঠামো পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হত।
আমার সেলফিটি গড়পঞ্চকোট আদি কল্যাণেশ্বরী মন্দিরের ধ্বংসস্তূপে তোলা, মাসখানেক আগে। সেই প্রাচীন মাতৃমন্দিরের কাঠামোর ভিত্তি যতটুকু দেখা যাচ্ছে, জুম করে দেখুন। রোমাঞ্চিত হন। এই আপনার শেকড়, এই আপনার ইতিহাস। এই ইতিহাস মুছে দিতে দেবেন না কোনও ডান, কোনও বাম, কোনও বিশ্বমানবকে। কোনও স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস সিলেবাস আপনাকে এই ইতিহাস জানতে দেবে না, কোনও টিভি স্টুডিও জানতে দেবে না, কোনও বাজার পত্রিকা জানতে দেবে না। কিন্তু আপনি তবুও ঠিকই জানতে পেরে যাবেন, সমস্ত ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করে। কারণ আপনি মায়ের সন্তান, আপনি বাঙালি, এই ভূমি তন্ত্রভূমি, এখানকার মাতৃধর্মে আপনার অস্তিত্ব সংজ্ঞায়িত হয়।
জয় মা কল্যাণেশ্বরী। জয় জয় মা।
তমাল দাশগুপ্ত Tamal Dasgupta
তমাল দাশগুপ্ত ফেসবুক পেজ, উনিশ ফেব্রুয়ারি দুহাজার তেইশ