শিবরাত্রির পুণ্য ক্ষণে মাতৃধর্ম ও শিবের সুপ্রাচীন সম্পর্কের ঐতিহাসিক বিবরণ – তমাল দাশগুপ্ত

শিবরাত্রির পুণ্য ক্ষণে মাতৃধর্ম ও শিবের সুপ্রাচীন সম্পর্কের ঐতিহাসিক বর্ণনা।

১. হরপ্পা সভ্যতার তথাকথিত পশুপতি মূর্তির ব্যক্তিটি ছিলেন হরপ্পার তন্ত্রধর্মের পুরোহিত। বর্তমানে সব গবেষক একমত, শিরিন রত্নাগর দ্রষ্টব্য। আলেক্সিস স্যান্ডারসন একজন বিখ্যাত হিন্দুধর্মীয় তাত্ত্বিক ও ইতিহাসবিদ, বিশেষ করে শৈবধর্ম বিশেষজ্ঞ, তিনিও এই মত প্রকাশ করেছেন। তারা সবাই পশুপতি মূর্তিটিকে Shaman আখ্যা দিচ্ছেন, অর্থাৎ হরপ্পা সভ্যতার পুরোহিত বা তান্ত্রিক।

২. এখানে একটা আশ্চর্য বিষয় হল যোগী শব্দের আদি অর্থই তাই, ইতিহাসবিদ ও ভাষাবিদ সুকুমার সেনের মতে: যিনি পুজোয় যোগান দেন। যোগী ও যোগিনী আমাদের তন্ত্রধর্মের মাতৃকা উপাসনায় উপচার যোগান দিতেন, মায়ের পুজো করতেন, এই ছিল আদি অর্থ। পরবর্তী যুগে যোগাসনকারী অর্থে যোগী হয়েছে। তাই আদিযোগী শব্দের পুরোনো এবং আদি অর্থ হবে যিনি মায়ের পুজোর আদি পুরোহিত, মায়ের তন্ত্রধর্মীয় উপাসনায় আদি যোগানদার।

৩. এখানে আরেকটি চিত্তাকর্ষক বিষয় হল, শিব শক্তির দাম্পত্য পরিকল্পনা চিরকালের নয়। ষষ্ঠ শতকে শ্রী শ্রী চণ্ডী গ্রন্থে দেখি, শিব ও দুর্গার মধ্যে আদৌ কোনও স্বামী স্ত্রী সম্পর্ক কল্পিত নয়।

৪. বৈদিক সাহিত্যে বাজসনেয়ী সংহিতা গ্রন্থে রুদ্রকে অম্বিকার ভ্রাতা বলা হয়েছে, অর্থাৎ একসময় শিব ও শক্তির ভ্রাতা ভগ্নী সম্পর্ক কল্পিত হয়েছিল।

৫. তারাপীঠে শিশু শিব আছেন মা তারার কোলে। সুপ্রাচীন জগন্মাতার সন্তান রূপে শিবের তত্ত্ব তৈরি হয়েছিল, যা চন্দ্রকেতুগড়ের কিছু মূর্তি দেখলে বোঝা যায়, সেখানে মাতৃকার কোলে ছোট্ট সন্তানটি শিবের মত জটাজুট বিশিষ্ট।

৬. আবার আদিযুগে চামুণ্ডা এবং পালসেনযুগে কালীর পদতলে থাকা শবটি মায়ের পাদস্পর্শে শিব হয়েছে, এই বিবর্তন সেই যুগের মাতৃমূর্তি যাঁরা দেখেছেন সবাই জানেন: প্রথম দিকে শব, পরের দিকে সেটিই শিবের আদল পেয়েছে।

৭. মহাকাল আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ মাতৃধর্মের তত্ত্ব। মহাকাল হলেন মহাকালীর পুরুষ রূপ। তিনিই ভৈরব। পালযুগের তন্ত্রে মহাকাল অতীব গুরুত্বপূর্ণ, তাঁকে ধর্মপালও বলা হত। সম্রাট ধর্মপালের আদলে এই স্ফীতোদর গোঁফদাড়িসহ মহাকাল মূর্তি তৈরি হত, এমন সিদ্ধান্ত করার পেছনে কিছু যুক্তি আছে। ধর্মপাল নিজেই মাতৃভক্ত ছিলেন, মা তারার পতাকা থাকত তাঁর সেনাবাহিনীর ধ্বজায়। আমাদের সমস্ত মাতৃপীঠে অতন্দ্র ভৈরব হিসেবে মহাকাল স্বয়ং আছেন প্রহরায়।

শিবের সঙ্গে একজন আদিমাতা (সতী/পার্বতী)র বিবাহ পৌরাণিক যুগে ঘটে। বাংলায় শশাঙ্কযুগে শিব ও নীলচণ্ডী/নীলাবতী/নীলা দেবীর বিবাহ উৎসব ঘটে এবং বাংলা নববর্ষের সূচনা হয়।

জয় জয় মা। জয় জয় মহাকালী। জয় জয় মহাকাল।

ছবিতে পালযুগের মহাকাল মূর্তি। বর্তমান অবস্থান মেট মিউজিয়াম।

© কালীক্ষেত্র আন্দোলন

আমাদের পেজটি লাইক করুন, পেজের নাম কালীক্ষেত্র আন্দোলন। পেজের লিংক: https://www.facebook.com/profile.php?id=100088854411804&mibextid=ZbWKwL
নিয়মিত আপডেট পেতে আমাদের গ্রূপে সংযুক্ত হন, গ্রূপের নাম জয় মা কালী আন্দোলন- কালীক্ষেত্র চিরন্তন। গ্রূপের লিংক: https://www.facebook.com/groups/1208680915856872/?ref=share&mibextid=NSMWBT
আমাদের ওয়েবসাইট হল রিক্লেম কালীক্ষেত্র, ওয়েবসাইট লিংক https://reclaimkalikhetro.data.blog/

ইনস্টাগ্রাম https://instagram.com/kalikhetro?igshid=YmMyMTA2M2Y=

টুইটার
https://twitter.com/kaliksetra?t=I1p4w6-fMfEnvjA-ExJ_-w&s=09

কালীক্ষেত্র আন্দোলন পেজের পোস্ট, আঠেরো ফেব্রুয়ারি দুহাজার তেইশ

মন্তব্য করুন

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  পরিবর্তন )

Twitter picture

You are commenting using your Twitter account. Log Out /  পরিবর্তন )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  পরিবর্তন )

Connecting to %s