
মা কালীর বর্তমান মূর্তিরূপের ইতিহাস।
মা কালীর প্রথম দার্শনিক উল্লেখ ঋগ্বেদে রাত্রিসূক্ত, প্রথম নামোল্লেখ মুণ্ডক উপনিষদ (অগ্নির সপ্তজিহ্বা সংক্রান্ত শ্লোক যা মা কালীর প্রসারিত জিহ্বার সুদূর সুপ্রাচীন স্মৃতিবাহী: “কালী করালী মনোজবা চ সুলোহিতা যা চ সুধূম্রবর্ণা স্ফুলিঙ্গিনী বিশ্বরুচী চ দেবী লেলায়মানা ইতি সপ্তজিহ্বা:”)।
কিন্তু মা কালীর বর্তমান মূর্তিরূপ কত পুরোনো?
★ দুই হাজার বছর আগে মহাভারত বা পনেরশ বছর আগে শ্রী শ্রী চণ্ডীতে যে কালীর মূর্তিরূপ দেখি তা বর্তমান রূপ নয়, অনেকটা চামুণ্ডার ন্যায়, অর্থাৎ কৃশাঙ্গী ক্ষুৎক্ষামা রূপ।
মা কালীর বর্তমান মূর্তিরূপ আগমবাগীশ মধ্যযুগে ষোড়শ-সপ্তদশ শতকে প্রথম নির্মাণ করেন বলে খ্যাত থাকলেও সেটি ভুল, আগে অনেকবার লিখেছি। মা কালীর বর্তমান মূর্তিরূপ পালযুগের বৌদ্ধ তন্ত্রযান প্রথম নির্মাণ করে।
★ মোটামুটি বারোশ বছর আগে পালযুগের বাংলার বৌদ্ধ তন্ত্রে মহাকালের পূর্ব দক্ষিণ কোণের অধিষ্ঠাত্রী কালিকা দেবীর বর্ণনা এভাবে দেওয়া:
কৃষ্ণবর্ণা, দ্বিভুজা, কর্ত্রি এবং নরকপাল হস্তে, প্রত্যালীঢ়পদে শবারূঢ়া।
স্পষ্টই পালযুগের বাংলায় বৌদ্ধ তন্ত্রে মা কালীর বর্তমান মূর্তিরূপ পূজিত হতে দেখা যায়, কেবল চতুর্ভুজার বদলে দ্বিভুজা।
★ আজ থেকে আটশ-সাড়ে আটশ বছর আগে সেনযুগের বৃহদ্ধর্ম পুরাণে মা কালীর বর্ণনা এভাবে দেওয়া:
অন্ধকার কজ্জলবর্ণা, তীব্র যৌবনসম্পন্না, পীনোন্নত পয়োধরা, মুক্তকেশী, দিগবসনা, দেহভারে পর্বত প্রকম্পিত করেন এবং পদ্মলোচনা।
★ পালসেনযুগে এবং মধ্যযুগের শুরুতে একাধিক গ্রন্থে মা কালীর বর্তমান মূর্তিরূপ পাওয়া যেতে থাকে। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি তন্ত্রসারে উদ্ধৃত হয়েছে, যেমন সিদ্ধেশ্বরতন্ত্র ও বিশ্বসারতন্ত্র। এছাড়া অদ্ভুত রামায়ণেও বর্তমান কালীরূপ বর্ণিত হয়েছে।
★ তবে মুণ্ডমালিনী কালী কিন্তু কালিদাসের কাল অর্থাৎ গুপ্তযুগ অর্থাৎ ষোলশ-সতেরোশ বছর আগে থেকেই আছেন। নরকপাল এর আভরণ অর্থাৎ মুণ্ডমালার অলঙ্কার পরিধান করা অবস্থায় নৃত্যরত মা কালীর বর্ণনা আছে কালিদাসের কাব্যে।
© তমাল দাশগুপ্ত Tamal Dasgupta
জয় মা কালী। জয় জয় মা।
মায়ের ছবি পিন্টারেস্ট থেকে।
তমাল দাশগুপ্ত ফেসবুক পেজ, দশ ফেব্রুয়ারি দুহাজার তেইশ