
কালী শিবদূতী।
মা কালীর অন্যতম মূর্তিরূপ হল শিবদূতী। বলা হয় তিনি শিবকে দূত রূপে প্রেরণ করে শুম্ভ নিশুম্ভকে সতর্ক করেছিলেন এজন্য এই নাম, কিন্তু সুকুমার সেন সহ একাধিক ইতিহাসবিদ সিদ্ধান্ত করেছেন যে নামটি আসলে শিবাদূতী, শিবা বা শৃগাল বাহিনী মায়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত। মা কালীর মূর্তিমণ্ডলে শৃগাল থাকে, মা শ্মশানচারিণী এবং শ্মশানে শৃগালের উপস্থিতি খুব স্বাভাবিক। মায়ের পুজোয় এখনও কোথাও কোথাও শিবাভোগ দেওয়া হয়। শিয়ালী কালী বা কোকমুখ কালী এখনও সম্পূর্ণ বিস্মৃত নন, এখনও পূজিত হন। হরিবংশ ও বিষ্ণুপুরাণে দেখা যায় বসুদেবকে পথ দেখানোর সময় মহাদেবীর শৃগাল রূপে আবির্ভাব ঘটে। শৃগালের সঙ্গে মা কালীর উপাসনার ঐতিহাসিক সম্পর্ক নিয়ে আগে লিখেছি, লিংক কমেন্টে।
শ্রী শ্রী চণ্ডীতে দেখি অসুরদের সঙ্গে যুদ্ধের সময় মহাদেবীর শরীর থেকে শত শত শিবা অর্থাৎ শৃগালের সমান গর্জনকারিণী শক্তি উৎপন্ন হচ্ছেন:
ততো দেবী শরীরাত্তু বিনিষ্ক্রান্তাতিভীষণা।
চণ্ডিকা শক্তিরত্যুগ্রা শিবাশত নিনাদিনী।।
শ্রী শ্রী চণ্ডী রচনা হয় ষষ্ঠ শতকে। প্রাচীন হরপ্পা সভ্যতার সময় থেকেই অর্থাৎ পাঁচ হাজার বছর আগে থেকেই উপমহাদেশের তন্ত্রধর্মে বন্য জন্তুর গুরুত্ব আছে। শৃগাল বুদ্ধিমান প্রাণী, সঙ্ঘবদ্ধ, এবং সংবেদনশীল। পঞ্চমুণ্ডী আসনেও শৃগালের মুণ্ড ব্যবহার হয়। দেবীর উপাসনায় শিবাবাহিনী ঐতিহাসিকভাবেই গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু শ্রী শ্রী চণ্ডীর ব্যাখ্যা অনুযায়ী শিবকে দূত হিসেবে পাঠিয়েছিলেন বলেই শিবদূতী নামে দেবী চণ্ডী পরিচিত।
শ্রী শ্রী চণ্ডী গ্রন্থ শিবদূতীর ধ্যানমন্ত্র ও মূর্তিকল্পের কোনও বর্ণনা দেয় না, যদিও শুম্ভ নিশুম্ভর সঙ্গে যুদ্ধে মহাদেবীর শরীর থেকে উৎপন্ন হন শিবদূতী। তবে কালিকা পুরাণে শিবদূতী ধ্যানমন্ত্র আছে। শিবদূতীর বর্ণনা এখানে কালীমূর্তির আদলে।
চতুর্ভুজং মহাকায়ং সিন্দুরসদৃশদ্যুতি।
রক্তদন্তং মুণ্ডমালা জটাজুটার্ধচন্দ্রধৃক্।।
নাগকুণ্ডলহারাভ্যাং শোভিতং নখরোজ্জ্বলম্।
ব্যাঘ্রচর্মপরিধানং দক্ষিণে শূলখড়্গধৃক্।।
বামে পাশং তথা চর্ম বিভ্রদূর্ধ্বাপরাক্রমাৎ।
স্থূলবক্ত্রঞ্চ পীনোষ্ঠং তুঙ্গমূর্তিং ভয়ঙ্করম্।।
নিক্ষিপ্য দক্ষিণং পাদং সন্তিষ্ঠৎ কুণকোপরি।
বামপাদং শৃগালস্য পৃষ্ঠে ফেরুশতৈর্বৃতম্।।
ঈদৃশীং শিবদূত্যান্তু মূর্তিং ধ্যায়েদ্ বিভূতয়ে।
চতুর্ভুজ, মহাকায়, সিঁদুরের মত গাত্রবর্ণ, রক্তদন্তবিশিষ্ট, মুণ্ডমালিনী, জটাজুট এবং অর্ধচন্দ্রধারিণী, নাগকুণ্ডল ও হার পরিবৃত, উজ্জ্বল নখরাশিমণ্ডিত, ব্যাঘ্রচর্ম পরিহিতা, ডানদিকের হাতে শূল ও খড়্গ, বামদিকের হাতে পাশ এবং ঢাল, স্থূল মুখমণ্ডল, বিরাট ওষ্ঠ, তুঙ্গমূর্তি ভয়ঙ্করী, দক্ষিণ পা শবের উপর এবং বাম পা শৃগালের ওপর, শত শৃগাল পরিবেষ্টিত মা শিবদূতীর এই মূর্তি ধ্যান করে মায়ের বিভূতি প্রাপ্ত হওয়া যায়।
© তমাল দাশগুপ্ত Tamal Dasgupta
জয় মা শিবদূতী। জয় মা শিবাদূতী কালী। জয় জয় মা।
মায়ের ছবি পিন্টারেস্ট থেকে
তমাল দাশগুপ্ত ফেসবুক পেজ, নয় ফেব্রুয়ারি দুহাজার তেইশ
সংযোজন: শৃগাল কেন মা কালীর মূর্তিমণ্ডলে গুরুত্বপূর্ণ?