
সর্বময়ী মা সরস্বতী।
বসন্ত পঞ্চমীর পুণ্যলগ্নে তন্ত্রাশ্রয়ী বাঙালি জাতির অন্যতম বৃহত্তম মাতৃকা উৎসব সরস্বতী পুজো অনুষ্ঠিত হচ্ছে দিকে দিকে। এই আনন্দময় আবহে আমরা মা সরস্বতীর সর্বময়ী রূপ ধ্যান করব।
অনেকেই জানেন, মা সরস্বতী উপমহাদেশের প্রাচীনতম দেবী যিনি সুপ্রাচীন হরপ্পা সভ্যতা এবং তার পরবর্তী বৈদিক যুগ থেকে আজও সমানভাবে পূজিত ও জনপ্রিয়। পাঁচ হাজার বছর ধরে একটানা একই দেবতার উপাসনা পৃথিবীর আর কোথাও দেখা যায় না। সরস্বতী বেদপূর্ব এবং বৈদিকও। তিনি নদীমাতা, আবার তিনি জ্ঞানেরও দেবী। তিনি যতটা বিজ্ঞানের, ততটাই কলাবিদ্যারও। তিনি বাকসিদ্ধি, আর তিনি নিঃশব্দ সাধনাও বটেন। তিনি সর্বময়ী।
যাঁরা সরস্বতী পুজোর অঞ্জলি দিয়েছেন সবাই জানেন যে সরস্বতী পুজোর মন্ত্রে ভদ্রকালীর উপাসনা হয়, যা সরস্বতী ও কালীর অভিন্নতার প্রতীক। এখন তন্ত্রের গুপ্ত নবরাত্রি চলছে, মাঘ নবরাত্রি (দুটি নবরাত্রি প্রকাশ্য, বসন্ত ও শরৎকালের। দুটি নবরাত্রি গুপ্ত, মাঘ এবং আষাঢ়)। মাঘ নবরাত্রির সময় তন্ত্রের সরস্বতী মাতঙ্গীর উপাসনা হয়। নবরাত্রি আদি শক্তির উপাসনা, সরস্বতী আদি শক্তি। সিংহবাহিনী মহাসরস্বতী হলেন স্বয়ং দুর্গা।
এবং বসন্ত পঞ্চমীকে শ্রীপঞ্চমী বলার অন্যতম কারণ হল সরস্বতী এবং শ্রী/লক্ষ্মীর অভিন্নতা। এছাড়া তন্ত্রে নীল সরস্বতীর উপাসনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যিনি তারার সঙ্গে অভিন্ন।
আজ আমরা একটি শ্লোক উচ্চারণ করব যা মা সরস্বতীর সর্বময়তার দ্যোতনা বহন করে।
“তারা ত্বং সুগতাগমে ভগবতী গৌরীতি শৈবাগমে।
বজ্রা কৌলিকশাসনে জিনমতে পদ্মাবতী বিশ্রুতা।।
গায়ত্রী শ্রুতশালিনাং প্রকৃতিরিত্যুক্তাসি সাংখ্যযানে।
মাতর্ভারতি কিং প্রভূতভণিতৈর্ব্যাপ্তং সমস্তং ত্বয়া।।”
সুগতাগমে তুমি মা তারা। শৈব আগমে তুমি মা ভগবতী গৌরী। কৌলিক শাসনে তুমি মা বজ্রা। জৈনমতে তুমি মা পদ্মাবতী। বৈদিকের কাছে তুমি গায়ত্রী, সাংখ্য দর্শনে তুমি প্রকৃতি। হে মা সরস্বতী, বেশি বলে আর কি হবে, সমস্তই তোমার দ্বারা ব্যাপ্ত।
© তমাল দাশগুপ্ত Tamal Dasgupta
মায়ের চতুর্ভুজা মূর্তির ছবিটি ইন্টারনেট থেকে নেওয়া। মূর্তিটি প্রাচীন নয়, বর্তমানকালের শিল্পীর নির্মাণ।
বিশেষ দ্রষ্টব্য: হ্যাঁ, সরস্বতী স্বচ্ছন্দে চতুর্ভুজা হতে পারেন, কোনও সমস্যা নেই। বস্তুত মা সরস্বতীর ধ্যানমন্ত্রের বেশিরভাগেই চতুর্ভুজা প্রতিমার উল্লেখ। বাংলাতেও চতুর্ভুজা মূর্তি দেখা যায়, যদিও বর্তমানে সংখ্যায় একেবারে কম। কিন্তু আদি ও মধ্যযুগে অনেক চতুর্ভুজা সরস্বতী গৌড়বঙ্গেও দেখা যেত, এ প্রসঙ্গে আমার লেখা আছে।
জয় মা সরস্বতী। জয় জয় মা।
তমাল দাশগুপ্ত ফেসবুক পেজ, পঁচিশ জানুয়ারি দুহাজার তেইশ