
কালী ছাড়া বাঙালি হয় না: মা কালী ছাড়া বাঙালির কোনও ইতিহাস হয় না।
পূর্ব ভারতে এই বাঙালি নামে জাতির চার সহস্র বছরের অস্তিত্ব মা কালীকে কেন্দ্র করে আবর্তিত। কালী এই জাতির সংজ্ঞায়ন।
১. পাণ্ডু রাজার ঢিবিতে চার হাজার বছর আগে বলাকা মাতৃকা পূজিত হতেন। ইনিই কালীর আদি রূপ। বাঙালির পূর্বসূরী বয়াংসি বলে আখ্যা পেয়েছেন, এই বলাকা মাতৃকার উপাসনার কারণেই।
২. চন্দ্রকেতুগড়ের গঙ্গারিডাই/গঙ্গাল সভ্যতায় বলাকা মাতৃকা পূজিত ছিলেন।
৩. ব্রাহ্মী থেকে সিদ্ধমাতৃকা থেকে আজকের বাংলা বর্ণমালা তন্ত্রাশ্রয়ী। আমাদের প্রথম বর্ণ ক এসেছে কালী থেকে। কালী পঞ্চাশৎ বর্ণময়ী। আমাদের রাজধানী কলকাতার নাম কালীক্ষেত্র থেকে এসেছে। আমাদের জাতি মা কালীর নামে প্রাণ পায়, সংজ্ঞায়িত হয়।
৪. পালযুগের সিদ্ধাচার্য চৌরঙ্গীর সঙ্গে কালীঘাটের কালী মন্দির স্থাপনার কিংবদন্তি জড়িয়ে। পালযুগের বাঙালি তন্ত্রধর্মী মাতৃকা উপাসক ছিল। পালযুগের বাংলা জুড়ে অনেকগুলি তারাপীঠ ছিল যা নিয়ে আগে লিখেছি, আজ যদিও কেবল একটিই তারাপীঠ আছে। পালযুগে তারা ছাড়াও জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন বজ্রযোগিনী। আজকের ছিন্নমস্তা। এছাড়া চামুণ্ডা অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিলেন, যিনি কালীর অন্যতম রূপ। দুর্গাপুজোর সন্ধিপুজোয় বলি গ্রহণ করেন এই চামুণ্ডা কালী।
এই পালযুগে সহজ আন্দোলনের ফলে আজকের পরিচিত আকারে দুর্গা ও কালী পুজো শুরু হয়। মহীপালের সময় দুর্গা এবং নয়পালের সময় চামুণ্ডা চর্চিকা প্রধান মাতৃকা ছিলেন।
৫. সেনযুগেও শাক্তধর্মের জয়যাত্রা অব্যাহত। দশমহাবিদ্যা তত্ত্ব সেনযুগের নির্মাণ। বল্লালসেন ঢাকেশ্বরী মন্দির নির্মাণ করেন এবং কালীঘাটের তান্ত্রিকদের পৃষ্ঠপোষকতা করেন।
৬. মধ্যযুগে বারো ভুঁইয়া রাজাদের প্রায় সবাই কালীভক্ত ছিলেন। রাজা প্রতাপাদিত্য প্রতিষ্ঠিত যশোরেশ্বরী কালী আজও বিরাজমান।
৭. মধ্যযুগের শেষে রামপ্রসাদ ও কমলাকান্তর নেতৃত্বে শাক্ত ভক্তি আন্দোলন ঘটে। ইংরেজ আমলে ঋষি বঙ্কিম অমর মন্ত্র বন্দে মাতরম এর মাধ্যমে শাক্ত ধর্মের এক নতুন অগ্নিযুগের উদ্বোধন করেন।
ইতিহাস জানা প্রয়োজন, বঙ্কিম বলেছিলেন, বাঙালির ইতিহাস চাই নইলে বাঙালি মানুষ হবে না। কিন্তু ইতিহাস জানা যথেষ্ট নয়। অতীতের ইতিহাস থেকে বর্তমান এবং ভবিষ্যতের শিক্ষা নিয়ে আজ একুশ শতকের উপযোগী নব শাক্ত আন্দোলনে ব্রতী হতে হবে আমাদের। জয় মা কালী, জয় জয় মা।
© তমাল দাশগুপ্ত Tamal Dasgupta
মায়ের ছবি ইন্টারনেট থেকে।
তমাল দাশগুপ্ত ফেসবুক পেজ, ছয় ফেব্রুয়ারি দুহাজার তেইশ