
মা কালী ও তন্ত্রসাধনার সম্পর্ক কি?
তন্ত্র, যা তনুকে ত্রাণ করে। এছাড়া তন্ত্র শব্দের প্রাচীন অর্থ তাঁত বা বয়ন-এর সঙ্গে যুক্ত: অনেক তন্তু একত্রিত করে যেমন একটি বস্ত্র, তন্তুবয়নের মত সেভাবেই বিভিন্ন ধারণা ও তত্ত্বকে একত্রিত করে যে ডিসকোর্স, সিস্টেম, এপিস্টেমোলজি, সেটাই তন্ত্র। এই অর্থে তন্ত্রের ব্যাপক ব্যবহার আজও হয়, যেমন বিষ্ণুশর্মার পঞ্চতন্ত্র, শশাঙ্কের গৌড়তন্ত্র: এছাড়া ধনতন্ত্র সমাজতন্ত্র বাস্তুতন্ত্র।
প্রথম অর্থে তন্ত্র ব্যক্তির সমস্ত ফ্যাকাল্টির অনুশীলন। বঙ্কিমের অনুশীলন তত্ত্ব দ্রষ্টব্য। যোগাসন, প্রাণায়াম, কুণ্ডলিনী সাধনা – এ সবই আমাদের শারীরিক এবং মানসিক বৃত্তির চর্চা। পাঠ, প্রগাঢ় গবেষণা অথবা ধ্যান, তপস্যা, এগুলোও আমাদের মন, মস্তিষ্ক, মেধা এবং শরীরকে একসূত্রে গেঁথে সর্বাঙ্গীণ উন্নতির পথ দেখায়।
একসূত্রে গাঁথা খুব জরুরি কারণ কালী জগদকারণ প্রকৃতি। কালী থেকে বিশ্বচরাচর উৎপন্ন। আমরা সবাই তাঁর সন্তান, জীব জড় নির্বিশেষে সমস্ত জগৎ তাঁর উপাদান। তাই মন ও শরীরের সুষম ভারসাম্য, পরিবেশ ও মানবসভ্যতার সুষম ভারসাম্য, সমাজ এবং অর্থনীতির ভারসাম্য, তত্ত্বজ্ঞান এবং ব্যবহারিক প্রয়োগের ভারসাম্য – সবই তন্ত্রের আওতায়।
কালীর তন্ত্রে ভুক্তি এবং মুক্তি দুইই সমান গুরুত্বপূর্ণ। ভোগ এবং মোক্ষ – এ দুয়ের বিরোধ নেই। ধর্ম অর্থ কাম মোক্ষ – চতুর্বর্গ মা কালীর তন্ত্রে সুষম ভারসাম্যে অবস্থান করে।
সমাজদেহ এবং তত্ত্ব প্রজ্ঞা পরস্পর নির্ভরশীল। দেহ এবং মন অবিচ্ছেদ্য। তন্ত্র দেহভাণ্ডে ব্রহ্মাণ্ড দর্শন করে, দেহের অতীত হওয়ার শিক্ষা দেয় না, এই দেহেই মায়ের অধিষ্ঠান, আমাদের দেহই মায়ের মন্দির।
মা কালীর তন্ত্রে দক্ষিণ এবং বাম মার্গে সুষম ভারসাম্য থাকে, যেমন ইড়া পিঙ্গলার মধ্যে সুষুম্না। মা কালীর মন্ত্র আমাদের ধ্যান এবং মনোসংযোগ করতে সাহায্য করে, যা আমাদের বিপুল মানসিক শক্তিকে সেভাবে কাজে লাগায় যেন পারমাণবিক শক্তিকে কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ।
মা কালী হলেন তন্ত্রের প্রকৃতি। তিনি অব্যক্ত, বোঝার সুবিধার জন্য, ধ্যানের সুবিধার জন্য এই মাতৃমূর্তিকল্প রচিত হয়েছে। জগদকারণ, তাই তাঁকে জগন্মাতা বলে ডাকি। তিনি আল্লা ঈশ্বর গডের মত মানবকল্পনা নন।
মা কালীর তন্ত্রের সঙ্গে বিজ্ঞানের বিরোধ নেই। পশ্চিমী জগতে তন্ত্র সম্পর্কে আগ্রহ ক্রমশঃ বাড়ছে। সারস্বত তত্ত্ব ও দর্শন হিসেবে এবং দৈহিক-মানসিক অনুশীলন হিসেবে তন্ত্রের কোনও বিকল্প নেই।
এবং তন্ত্র গৌড়ে প্রকাশিতা বিদ্যা। কালিকা বঙ্গদেশে চ। অর্থাৎ কালী আমাদের ভূমির অধিষ্ঠাত্রী। মা কালীর তত্ত্ব এই তন্ত্র, এবং কালীক্ষেত্র এই বঙ্গভূমি। মা কালীর নামে যে বাঙালি জাতি সংজ্ঞায়িত হয়, সেই বাঙালির সবথেকে বড় সম্পদ হল তন্ত্র।
শেকড়বিচ্ছিন্ন আত্মবিস্মৃত বাঙালির মধ্যে তন্ত্র সম্পর্কে যাবতীয় বিভ্রান্তি কাটিয়ে দিতে আমাদের উদ্যোগে তন্ত্রবিদ্যা কোর্স চালু হতে চলেছে শীঘ্রই। অনলাইনে এই তন্ত্রবিদ্যা কোর্স করা যাবে। তন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনার উদ্দেশ্যে আন্তর্জাতিক মানের তন্ত্রবিদ্যা গবেষণা ও চর্চা কেন্দ্র গড়ে তোলার শপথ নিয়েছি আমরা। মা কালীর জয়ধ্বনি দিয়ে সঙ্গে থাকুন, আন্দোলনে যোগ দিতে চাইলে (91) 9717468046 নম্বরে যোগাযোগ করুন।
© কালীক্ষেত্র আন্দোলন
মায়ের ছবি পিন্টারেস্ট থেকে
কালীক্ষেত্র আন্দোলন ফেসবুক পেজ, শনিবার চোদ্দ জানুয়ারি দুহাজার তেইশ