
চট্টেশ্বরী কালী।
মা কালী বাংলা জুড়ে বিভিন্ন অঞ্চলে স্থানেশ্বরী অধিষ্ঠাত্রীরূপে পূজিত হন। স্থাননামবৈশিষ্ট্যে মিশে থাকে মায়ের নাম: কালীক্ষেত্র থেকে কলকাতা, ঢাকেশ্বরী থেকে ঢাকা। তেমনই বাংলাদেশের চট্টগ্রাম নামটি চট্টেশ্বরী মা কালীর নাম থেকে এসেছে মনে করা হয়।
এই চট্টগ্রাম বর্তমানে ইসলামিক রাষ্ট্র বাংলাদেশের অংশ। এখানেই সূর্য সেনের বিপ্লবী দল ইংরেজ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিলেন, যার ফলশ্রুতিতে তিনি ফাঁসি যান বারোই জানুয়ারি ১৯৩৪ তারিখে। সূর্য সেনের অনুগামী বিপ্লবীরা মা কালীর সামনে শপথ নিতেন।
আজ আমরা চট্টেশ্বরী মা কালীর কথা জানব।
★মা চট্টেশ্বরী কালীর মূল বিগ্রহটি নিম কাঠের ছিল। খ্রিষাণগীর (নামটি বেশ অদ্ভুত) নামে একজন সাধক এখানে মূর্তি স্থাপন করেছিলেন বলে সুমন গুপ্তের “বাংলাদেশের জাগ্রত মন্দিরে মন্দিরে” জানাচ্ছে। পরে রামসুন্দর দেবশর্মণ বা রামসুন্দর অধিকারী নামে একজন সাধক নিত্য পুজো করতেন, সমসাময়িক কালের কবি এবং ম্যাজিস্ট্রেট নবীন সেন চট্টগ্রামের ভূমিপুত্র ছিলেন, তিনি চট্টেশ্বরী কালীমন্দিরে নিত্য পুজোর জন্য রামসুন্দরকে অর্থ সাহায্য করেন বলে জানা যায়। এই সময়েই রাম ঠাকুর এখানে কালী সাধনা করতেন।
★ মায়ের এই আদি বিগ্রহ পাকিস্তান আমলে ধ্বংস করা হয়। মন্দিরের তৎকালীন পুরোহিত, রামসুন্দর অধিকারীর পৌত্র কালীপদ অধিকারীকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। কালীপদর ভ্রাতুষ্পুত্র বিজয় চক্রবর্তী মুসলমান সেজে রক্ষা পান, বর্তমানে তিনিই চট্টেশ্বরী মন্দিরের সেবাইত।
★ চট্টেশ্বরী কালীর বর্তমান মূর্তি পশ্চিমবঙ্গের কংগ্রেস সরকারের মন্ত্রী তুষার কান্তি ঘোষের উদ্যোগে কলকাতার একজন ভাস্কর তৈরি করেন বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরে। কষ্টিপাথরের কালীমূর্তি। পদতলে শবশিব শ্বেতপাথরের।
★ মূর্তিটি মা দক্ষিণাকালীর।
★ কার্তিকী অমাবস্যায় এখানে প্রচুর ছাগবলি হয়, আগের তুলনায় সংখ্যা কমে এসেছে যদিও।
★ মায়ের নিত্য পুজো হয়। সকাল পাঁচটায় মন্দির খোলে, বন্ধ হয় রাত এগারোটায়, দুপুরে এক দেড় ঘণ্টা বন্ধ থাকে।
★ নিমকাঠের আদি মাতৃবিগ্রহের টুকরো টুকরো অংশগুলি জোড়া দিয়ে রাখা আছে সেবাইতদের কাছে, জানা যাচ্ছে। এই বিগ্রহের মতোই মাতৃধর্মের শত্রুরা টুকরো টুকরো হোক, মায়ের সন্তান হিসেবে এই সংকল্প করি। শোক পরিণত হোক আগুনে।
জয় মা কালী। জয় জয় মা।
© তমাল দাশগুপ্ত Tamal Dasgupta
মায়ের ছবি ইন্টারনেট থেকে।
তমাল দাশগুপ্ত ফেসবুক পেজ, বারো জানুয়ারি দুহাজার তেইশ