
অমাবস্যা হল মা কালীর তিথি। সারা বছর ধরেই প্রতি মাসে অমাবস্যায় মা কালীর পুজো হয়। এবারেও পৌষ অমাবস্যায় বাংলা জুড়ে অনেক জায়গায় মা কালীর আরাধনা হচ্ছে।
★ অমাবস্যা আমাদের মায়ের তিথি কারণ কালো আমাদের মায়ের রঙ। মা আদ্যা, মা জগদকারণ, মা সৃষ্টির উৎস। সৃষ্টির সূচনায় অন্ধকার তাই অমাবস্যা সেই আদিম অন্ধকারের দ্যোতনা বহন করে।
★ অমাবস্যা পূর্বমানুষদের স্মরণ করার তিথি, শ্রদ্ধা জানানোর তিথি। যাঁরা প্রয়াত, তাঁরা কালীলোকে উত্তীর্ণ হন। অমাবস্যা তাই আমাদের অতীত ও শেকড়ের সঙ্গে মুখোমুখি হওয়ার সময়। ভূত মানে তো অতীত, কিন্তু এ শব্দটির অর্থ কিছুটা ডিজেনারেট এবং কুসংস্কারগ্রস্ত হয়ে গেছে, তাই অন্যভাবে বলা ভালো, অতীতের ছায়া প্রচ্ছায়া এই অমাবস্যায় আমাদের কাছাকাছি আসে, আমরা অতীতকে ধ্যানের মাধ্যমে স্পর্শ করতে পারি।
★ যদিও কালী চতুর্বর্গ দান করেন: ধর্ম অর্থ কাম মোক্ষ। কিন্তু এর মধ্যে শেষ বর্গটি বিশেষভাবে মায়ের সঙ্গে জড়িত। কালী মোক্ষদা, কালী কৈবল্যদায়িনী। অমাবস্যার রাত সেই নির্বাণ ও কৈবল্যর বার্তা বহন করে।
★ কালোতে এসে সব রঙ লীন হয়, এজন্যও মায়ের রঙ কালো। অর্থাৎ অমাবস্যার অন্ধকার কেবল সৃষ্টির উৎস নয়, বিলয়ও।
★ কালীসাধকদের মধ্যে অমাবস্যা তিথিতে শ্মশানসাধনার প্রথা আছে। প্রত্যেক অমাবস্যায় বিশেষ করে শ্মশানকালীর উপাসনা অবশ্যই হয় বাংলা জুড়ে, কারণ ওপরেই বলেছি। শ্মশান হল নির্বাণভূমি। সব জীবন যেখানে লয়প্রাপ্ত হয়, আর সব রঙ যেখানে এসে লীন হয়ে যায়, সেই হল শ্মশান, সেই হল অমাবস্যা তিথি।
★ ঋগ্বেদে পূজিত ছিলেন অন্ধকার রাত্রির দেবী। রাত্রিসূক্ত পাঠ করলে বোঝা যায়, অন্ধকার অমানিশা বহু প্রাচীনকাল থেকেই আমাদের মায়ের ভয়াভয় (ভয়+অভয়) রূপের দ্যোতনা বহন করে। রাত্রিসূক্ত এবং কালীধর্ম নিয়ে কিছুদিন আগেই লিখেছি। সেজন্য মাকে ডাকার উৎকৃষ্ট তিথি হল অমাবস্যা।
★ কালী আদিতে বৈদিক নন, তিনি আরও প্রাচীন, তিনি তন্ত্রাশ্রয়ী হরপ্পা সভ্যতার মাতৃকা। কিন্তু উপমহাদেশের সমস্ত ধর্মই মা কালীর কাছে মাথা নত করেছে।
জয় মা কালী। জয় জয় মা।
© তমাল দাশগুপ্ত Tamal Dasgupta
মায়ের ছবি পিন্টারেস্ট থেকে।
তমাল দাশগুপ্ত ফেসবুক পেজ, তেইশ ডিসেম্বর দুহাজার বাইশ