
মা কালী ভিন্ন অন্য কোনও উপাস্য নেই।
হিন্দু ধর্মে অনেক দেবদেবী, অনেক মত। যত মত তত পথ, রামকৃষ্ণদেব বলেছেন। পুরাকালে সনাতন ধর্ম বৈদিকদের নিয়ন্ত্রিত ছিল, বর্তমানের হিন্দুধর্ম তন্ত্রাশ্রয়ী এবং পৌরাণিক, এখানে শৈব, বৈষ্ণব ও শাক্ত এই তিনটি প্রধান মত, এছাড়া সৌর ও গাণপত্য দুটি মত – এইমিলে পঞ্চ উপাসক সম্প্রদায় নিয়ে আজকের হিন্দু, যদিও আরও অন্যান্য দেবতাও পূজিত। জনসাধারণের বিশ্বাস এই যে শিব, বিষ্ণু ও শক্তি সমতুল্য, অভেদ। সত্যিই তাই।
★ কিন্তু পরিব্রাজকাচার্য পরমহংস ব্রহ্মানন্দ গিরি রচিত শাক্তানন্দ তরঙ্গিণীতে এক বিস্ফোরক উক্তি: শিব ও বিষ্ণুর উপাসনা ত্যাগ করে একমাত্র দেবীর উপাসনা কর্তব্য, কারণ জগন্মাতা দয়াময়ী, তিনি তাঁর ভক্তকে ভোগ ও মোক্ষ উভয়েই প্রদান করেন, কিন্তু শিব ও বিষ্ণুর উপাসনায় অতি কষ্টে মুক্তিমাত্র হয়।
★ “শিববিষ্ণোরুপাসনাং ত্যক্ত্বা দেব্যা উপাসনা কর্তব্যা।
শিববিষ্ণোরুপাসনায়াং কায়ক্লেশেন মুক্তিমাত্রম্।”
★সময়াতন্ত্র থেকে উদ্ধৃত করে শাক্তানন্দ তরঙ্গিণী বলছেন:
শিব ও বিষ্ণুর উপাসক কখনও বা মুক্তি কখনও বা ভোগ পায়। কিন্তু দেবীর উপাসক শাক্ত ভাগ্যবান, সে ভুক্তি ও মুক্তি দুইই করতলগত করে।
★ এরপর রুদ্রযামল থেকে উদ্ধৃত করে শাক্তানন্দ তরঙ্গিণীতে বলা হয়েছে:
যেখানে ভোগ সেখানে মুক্তি নেই। যেখানে মোক্ষ সেখানে ভোগ নেই। কিন্তু একমাত্র যাঁরা মহামায়া জগন্মাতার পাদপদ্ম অর্চনা করেন তাঁদের করতলে ভোগ ও মোক্ষ একত্রে সন্নিবিষ্ট হয়।
★ প্রসঙ্গত, ব্রহ্মানন্দর শাক্তানন্দ তরঙ্গিণী এবং আগমবাগীশের তন্ত্রসার, এই দুটি গ্রন্থের নাম এক নিঃশ্বাসে নেওয়া হয়। মধ্যযুগে শাক্ত ধর্মের পুনরুত্থানে তন্ত্রসার যেমন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল, তেমনই সমান মাহাত্ম্য ছিল শাক্তানন্দ তরঙ্গিণীর।
★আমরা জানি, অন্যত্র পিচ্ছিলাতন্ত্রে বলা হয়েছে, কলৌ কালী কলৌ কালী নান্যদেবো কলৌ যুগে। অর্থাৎ, মা কালী কলিযুগেশ্বরী, কলিযুগে অপর কোনও দেবতা পূজিত হতে পারেন না।
★ এছাড়া, কালিকা বঙ্গদেশে চ। অর্থাৎ, মা কালী বঙ্গেশ্বরী, বাঙালির একমাত্র আরাধ্যা, বঙ্গের অধিষ্ঠাত্রী দেবী।
তাই, কালী ভিন্ন অপর উপাস্য নেই। কালী হলেন আদ্যা নিত্যা অব্যক্ত প্রকৃতি, জগদকারণ ও জগদবিলয়, সৃষ্টি স্থিতি প্রলয়। তিনিই একমাত্র পূর্ণ তত্ত্ব: বাকি সমস্ত দেবতা তাঁর অংশ ও আবরণ মাত্র। একমাত্র এই মা কালীর উপাসনায় বাকি সকলকে পূজার পূর্ণ ফল লাভ হয়।
জয় মা কালী। জয় জয় মা।
© তমাল দাশগুপ্ত Tamal Dasgupta
মা আগমেশ্বরী কালী, শান্তিপুর। ছবি ইন্টারনেট থেকে।
তমাল দাশগুপ্ত ফেসবুক পেজ, উনিশ ডিসেম্বর দুহাজার বাইশ