
বৈষ্ণব কালী! মা একানংশা, যিনি আদি বৈষ্ণব ধর্মে পূজিত কালী।
আজ আপনাদের আদি বৈষ্ণব ধর্মে পূজিত কালীর কথা শোনাব। বৌদ্ধ কালী হয়, সকলেই জানেন। জৈন ধর্মেও কালী আছেন। বিদেশে কালীপ্রতিম মাতৃকা আছেন। কিন্তু বাংলার বৈষ্ণবরা কালী পুজো সেভাবে করেন না, যদিও কৃষ্ণকালী বা রটন্তিকালী আছেন। কিন্তু আদি বৈষ্ণব ধর্মে পূজিত ছিলেন কালীর এক নির্দিষ্ট রূপ একানংশা, তাঁকে কেন্দ্র করেই তন্ত্রাশ্রয়ী বৈষ্ণব ধর্মের উত্থান ঘটেছিল।
আমরা আজ আদি বৈষ্ণব কালী সম্পর্কে জানব।
★ একানংশা আদি মাতৃকা, তার উপাসনা, ধ্যানমন্ত্র, মূর্তিকল্প সবই প্রায় বিলুপ্ত হয়েছে, কিন্তু তাঁর সম্পর্কে নিম্নলিখিত তথ্য পুনরুদ্ধার করা যাচ্ছে।
★ তিনি একশৃঙ্গা মাতৃকা রূপে একদা উপাস্য ছিলেন, চন্দ্রকেতুগড় গঙ্গাল সভ্যতায় তাঁর মূর্তি পাওয়া গেছে, আগে বেশ কয়েকবার লিখেছি, লিংক কমেন্টে। হরপ্পা সভ্যতার বিখ্যাত ইউনিকর্নের সঙ্গে কোনওভাবে তাঁর সম্পর্ক থাকতে পারে। বৈষ্ণব ধর্ম প্রথম থেকেই তন্ত্রাশ্রয়ী, এজন্য কৃষ্ণ তাঁর ভ্রাতা রূপে কল্পিত। কৃষ্ণ একশৃঙ্গ রূপে পরিচিত হন, যা হরপ্পা সভ্যতার ইউনিকর্নের সঙ্গে জড়িত বলে একজন গবেষক (দানিনো) মনে করেন।
★ হরিবংশ অনুযায়ী ইনিই যোগমায়া। কৃষ্ণভগিনী। হরিবংশে এঁকে বিন্ধ্যবাসিনী বলা হয়, পদ্মপুরাণেও বিন্ধ্যবাসিনী বলা হয়েছে। দুর্গার কিছু বৈশিষ্ট্য এঁর উপর আরোপিত যেমন শুম্ভ নিশুম্ভ বধ করেন।
★ সুকুমার সেনের মতে একানংশা হলেন বৈদিক আদিমাতা অদিতির সঙ্গে একাত্ম। বস্তুত এজন্য তিনি কালী, কৃষ্ণবর্ণের দেবী। এবং তাঁর একশৃঙ্গ অদ্বয়বাদের ধারণা বহন করে। আদ্যা, এবং একক।
★ স্কন্দপুরাণে সরাসরি একানংশা অভিহিত হয়েছেন কালী রূপে, কালী নামে। তিনিই নিশা। তিনিই রাত্রি। এও বলা হয়েছে দুর্গা পূজার মহানবমীর বলি তিনিই গ্রহণ করেন। সন্ধিপুজো, আমরা জানি, অষ্টমী তিথি শেষে নবমী তিথির প্রারম্ভে অনুষ্ঠিত হয়, কাজেই বলি প্রকৃতপক্ষে অনেক সময়েই গভীর রাতে, নবমীর সূচনায় ঘটে, অর্থাৎ নবমীতেই বলি হয়, এবং এই বলি একানংশা গ্রহণ করেন। সাধারণত আমরা জানি চামুণ্ডা কালী বলি গ্রহণ করেন, তাই এতদ্বারা চামুণ্ডা কালী ও একানংশার অভিন্নতা সূচিত হয়।
★ পার্বতী কালীর কৃষ্ণত্বক ধারণ করেন একানংশা, এবং তিনি ও কৌশিকী কালী অভিন্ন, পদ্মপুরাণ অনুযায়ী। কৌশিকী অমাবস্যা তিথিতে এই কৌশিকী কালীরই উপাসনা হত আদিকালে, যদিও এখন কৌশিকী কালীর নামটি ভিন্ন এই তিথির কালীপুজোয় আর কোনও স্মৃতি অবশিষ্ট নেই।
★ বরাহমিহিরের বৃহৎ সংহিতায় একানংশা মাতৃকার দ্বিভুজা, চতুর্ভুজা, অষ্টভুজা মূর্তির মন্ত্র পাওয়া যাচ্ছে। কৃষ্ণ ও বলরামের মধ্যে তাঁর উপাসনা হত, অর্থাৎ আজকের সুভদ্রা এই একানংশার বিবর্তিত রূপ। তন্ত্রে সুষুম্নার দুই পাশে ইড়া পিঙ্গলার দ্যোতনা বহন করে এই ত্রিমূর্তি। একানংশা প্রধান মাতৃকা ছিলেন, তাঁর দুই ভ্রাতা কৃষ্ণ ও বলরাম দুদিকের ক্ষেত্রপাল ছিলেন অথচ আজ তিনিই বিস্মৃত হয়েছেন। পৃথিবীর সর্বত্র এভাবেই মাতৃধর্ম বিলুপ্ত হয়েছে।
© তমাল দাশগুপ্ত Tamal Dasgupta
জয় মা একানংশা কালী। জয় জয় মা।
চন্দ্রকেতুগড় থেকে প্রাপ্ত খ্রিষ্টপূর্ব তৃতীয় শতকে গঙ্গাল সভ্যতার মাতৃমূর্তির ছবিটি উইকিমিডিয়া থেকে নেওয়া। মূর্তিফলকটি বিদেশের মিউজিয়ামে আছে।
সংযোজন
১. জগন্নাথ বলরাম সুভদ্রা: অবৈদিক ব্রাত্য তন্ত্রধর্মের তিন প্রতীক https://www.facebook.com/2343427979014091/posts/4213910418632495/?mibextid=Nif5oz
২. যোগমায়া একানংশা https://www.facebook.com/2343427979014091/posts/5273384819351711/?mibextid=Nif5oz
৩. চন্দ্রকেতুগড় গঙ্গাল সভ্যতায় বৈষ্ণব ধর্মের আদি রূপ: একানংশা কৃষ্ণ https://www.facebook.com/2343427979014091/posts/3968637906493082/?mibextid=Nif5oz
তমাল দাশগুপ্ত ফেসবুক পেজ, আঠাশ নভেম্বর দুহাজার বাইশ