
আজ মা মনসার নামকীর্তন করব আমরা, তিনি বিষহরি নামে খ্যাত। মা মনসা অত্যন্ত প্রাচীন।
হরপ্পা সভ্যতায় একজন সর্পমাতৃকা পূজিত হতেন, প্রত্ন ফলক পাওয়া গেছে। সাড়ে চার হাজার বছর আগে। মনসা অবৈদিক দেবী, তিনি আমাদের তন্ত্রাশ্রয়ী সভ্যতার অধিষ্ঠাত্রী। তন্ত্রের অন্যতম প্রধান স্তম্ভ কুণ্ডলিনী তত্ত্ব, এই কুণ্ডলিনী কল্পনায় হরপ্পা সভ্যতার সর্পমাতৃকার প্রভাব আছে বলে সিদ্ধান্ত করা যায়।
মোটামুটি আড়াই হাজার থেকে বাইশশো বছর আগে রচিত বৌদ্ধ যুগের একটি গ্রন্থ থেকে জনপ্রিয় নাগ উপাসনার কথা জানা যাচ্ছে।
চন্দ্রকেতুগড় গঙ্গারিডাই সভ্যতায় সর্পমাতৃকার মূর্তি পাওয়া গেছে।
পালযুগে প্রাপ্ত সমস্ত মাতৃমূর্তির মধ্যে একক সংখ্যাগরিষ্ঠ মনসা মূর্তি। এই পালযুগেই কানা হরিদত্ত প্রথম মনসামঙ্গল লেখেন। মনসামঙ্গলের কাহিনী আরও প্রাচীন হওয়ার সম্ভাবনা, বাঙালি বণিকের ওই বৈদেশিক বাণিজ্য গঙ্গারিডাই যুগের, বা তারও আগে পাণ্ডু রাজার ঢিবির সময়কালের। শশাঙ্ক থেকে পালযুগে বাঙালির সেই বাণিজ্য সমৃদ্ধি আর দেখা যায় না।
মা তারার জনপ্রিয় রূপভেদ জাঙ্গুলী তারা পূজিত হতেন পালযুগে, তিনি মনসার মতোই সর্পমাতৃকা।
সেনবংশের প্রথম গৌড়েশ্বর বিজয়সেনের নামাঙ্কিত মনসা মূর্তি পাওয়া গেছে।
মা মনসা মধ্যযুগীয় মাতৃকাদের মধ্যেও অসম্ভব জনপ্রিয়।
এভাবে যুগে যুগে সুপ্রাচীন মা মনসা আমাদের মধ্যে পূজিত হয়েছেন।
মনসার একটি বৈশিষ্ট্য হল তিনি আদিদেবী।
মা মনসা কালী পূজিত হন চব্বিশ পরগণার উচিলদহ গ্রামে, জানা যাচ্ছে। জরাসন্ধের উপাস্য মাতৃকা বলে খ্যাত আকালিপুরের গুহ্যকালী সর্পবাহনা। মা মনসার সঙ্গে কালীর সংযোগ আছে।
মনসা যেহেতু জগদকারণ প্রকৃতির জগন্মাতা রূপের বহিঃপ্রকাশ, এজন্য সন্তান কোলে মনসা মূর্তি দেখা যায়। নাগ হল পৃথিবীর কোলে লুকোনো সম্পদ ও সমৃদ্ধির প্রতীক, এজন্য মহাবিদ্যা কমলা, দেবী পদ্মা, সর্বোপরি শ্রী/লক্ষ্মীর বৈশিষ্ট্য ধারণ করেন মনসা। বিষহরি মনসার সঙ্গে সরস্বতীও সম্পর্কিত কারণ মনসা বিদ্যাদায়িনী।
মনসা পুজোয় পাঁঠা বলি দেন যে ভক্ত, তিনি ধনবান কীর্তিবান হন এবং সন্তানলাভ করেন, ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণ অনুযায়ী। বাংলা জুড়েই মনসা পুজোয় মহা ধুমধামের সঙ্গে পাঁঠা বলি হয়।
© তমাল দাশগুপ্ত Tamal Dasgupta
জয় মা মনসা। জয় জয় মা।
বাংলাদেশের রংপুর মিউজিয়ামে মা মনসার এই মূর্তি আছে।
সংযোজন
পালযুগের মা মনসা https://www.facebook.com/2343427979014091/posts/3284906298199583/
মনসাবিস্তার https://www.facebook.com/2343427979014091/posts/3156967607660120/
তমাল দাশগুপ্ত ফেসবুক পেজ, ষোলো নভেম্বর দুহাজার বাইশ