
কার্তিক দেবতা ও মাসের নাম এসেছে কৃত্তিকা থেকে।
কৃত্তিকা কারা? এঁরা আদি সপ্তমাতৃকা। হরপ্পা সভ্যতায় সপ্তমাতৃকা বলি গ্রহণ করতে উপস্থিত থাকতেন, এই মর্মে প্রত্ন ফলক পাওয়া গেছে।
এই সাতজনের সঙ্গে সপ্তর্ষির বিবাহ সম্পর্ক কল্পিত হয় বৈদিক-পৌরাণিকদের দ্বারা, কিন্তু বলা হয় সে বিবাহ টেঁকে না, এবং সপ্তমাতৃকারা সবাই সপ্তর্ষিকে ত্যাগ করে স্বাধীনভাবে পৃথক নক্ষত্রমণ্ডলী প্রস্তুত করেন (বলা হয় একমাত্র অরুন্ধতী থেকে গেছিলেন সপ্তর্ষিদের সঙ্গে)। এই কৃত্তিকা নক্ষত্রমণ্ডলীকে পশ্চিমে Pleiades বলে, সেভেন সিস্টারস বলেও ডাকা হয়, রাতের অন্ধকারে এই নক্ষত্রমণ্ডলী স্পষ্টভাবে দেখা যায়, কারণ কৃত্তিকা হল পৃথিবীর সবথেকে কাছের নক্ষত্রমণ্ডলী।
প্রসঙ্গত এখনও সপ্তমাতৃকা বা অষ্টমাতৃকার মধ্যে আছেন চামুণ্ডা, যাঁকে কোনও পুরুষ দেবতার শক্তি বলে চালিয়ে দেওয়া সম্ভব হয়নি আজও।
অরুন্ধতী বাদে সপ্তমাতৃকার বিবর্তনে এই ছয় কৃত্তিকা হলেন আদি মাতা, যাঁরা ভয়াল। এঁরা বৈদিক পৌরাণিক পুরুষতন্ত্রের যম। যখন গঙ্গার তীরে শরবনে আবির্ভাব ঘটে শিশু স্কন্দের এঁরা স্কন্দধাত্রী হন, এবং এঁদের নাম কৃত্তিকা থেকেই কার্তিকেয় নাম পায় শিশুটি। ছয় কৃত্তিকা তাঁর ধাত্রী, সেই থেকে কার্তিক ষড়ানন।
এঁরা যোদ্ধামাতৃকা বলেই শিশুটি যুদ্ধদেবতা হয়। মাতৃকার কোলে শিশু হরপ্পা সভ্যতার সবথেকে জনপ্রিয় মাতৃমূর্তি ছিল।
মহিষমেধ হত হরপ্পা সভ্যতায় মাতৃকার উপাসনায়। দুর্গা মহিষমর্দিনী মহাভারতে পূজিত। কিন্তু এক জায়গায় স্কন্দকে মহিষঘাতী বলা হয়েছে যা গুরুত্বপূর্ণ বিস্মৃত ইঙ্গিত: স্কন্দ শাক্ত ধর্মের থেকেই উঠে এসেছেন। তিনি মায়ের গণদের অধিপতি গণেশের মতোই মায়ের দ্বারপাল অনুচর, সেজন্য মায়ের পাশে পূজিত হন দুর্গাপুজোর সময়।
কৃত্তিকাদের স্মরণ করে আবহমান মাতৃকাদের জয়ধ্বনি হোক, মায়ের সন্তানদের জয়জয়কার হোক। জয় জয় মা।
© তমাল দাশগুপ্ত Tamal Dasgupta
মায়ের দুই পাশে গণেশ কার্তিক। পালযুগে একাদশ শতকের দুর্গামূর্তি। বর্তমান অবস্থান সান ফ্রান্সিস্কো মিউজিয়াম অভ এশিয়ান আর্ট।
তমাল দাশগুপ্ত ফেসবুক পেজ, সতেরো নভেম্বর দুহাজার বাইশ