
মায়ের পুজোয় বলিদান: নয়টি সিদ্ধান্ত।
১. মায়ের পুজোয় বলি বাধ্যতামূলক। মা বলিপ্রিয়া।
২. কিন্তু পশুবলি ঐচ্ছিক। পশুবলি দিতে নানা কারণে অসুবিধা থাকলে কেউ বাধ্য করবে না। আমি নিজেই দিল্লির ফ্ল্যাটে সহজ পুজোয় পশুবলি দিই নি, ফ্ল্যাটের মধ্যে সেটা করা সহজ নয় বলে।
মুসলমানের যেমন স্বহস্তে কোরবানি বাধ্যতামূলক, আমাদের এমনকি তাও নয়, আপনার হয়ে অন্য লোকে পশুবলিও দিতে পারে, কোনও অসুবিধা নেই, নিজে স্বহস্তে বলি না দিলেও চলে যদি কোনও সমস্যা থাকে।
গৌড়ীয় বৈষ্ণব তাঁদের দুর্গাপুজোয় দীর্ঘদিন ধরে পশুবলির বদলে নিরামিষ বলি দিয়ে আসছেন। কোনও অসুবিধা নেই।
কিন্তু শাক্ত যদি পশুবলি দিতে বা দেওয়াতে চায়, সেক্ষেত্রে শাক্তকে কেউ বাধা দেবেন না। ধর্মপালনে বাধা দেওয়া ভারতীয় আইনে দণ্ডযোগ্য অপরাধ।
উত্তরবঙ্গে মা বোল্লা কালীর পুজোয় পশুবলি বন্ধ করার নির্দেশ দিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের পশুকল্যাণ দপ্তর ভারতীয় আইনে অপরাধ করেছে। সরকারি নির্দেশের চিত্র কমেন্টে।
কেউ পশুপ্রেমী/ভেগান/পেটা ইত্যাদি হলে অনুগ্রহ করে মায়ের মন্দিরে বলিস্থল থেকে দূরে থাকুন, কেউ তাকে শাক্ত ধর্ম পালন করতে বাধ্য করেনি। তারাও শাক্তকে ধর্মপালনে বাধা দেবেন না, আমরা আশা রাখি।
৩. কোনও মহাপুরুষ বা মহানারী পশুবলির বিরুদ্ধে কিছু বলেছেন, অতএব পশুবলি খারাপ, এমন যুক্তি একেবারেই গ্রাহ্য নয়। মহাপুরুষদের কাট পেস্ট অনুসরণ করা মাছিমারা কেরানির কাজ, অথবা সেই গুরুর যজ্ঞের হুবহু অনুকরণ করতে গিয়ে সাত বেড়াল বাঁধতে যাওয়া শিষ্যের মত কাণ্ডজ্ঞানহীন কাজ হয়।
৪. পৃথিবীর অন্যত্র মাতৃধর্ম বিলুপ্ত হয়েছে। আমাদের মধ্যে টিঁকে আছে কারণ আমরা বলি দিই। বিশেষ করে বৃহৎ মন্দিরগুলোয় যেখানে পশুবলির পুরোনো ঐতিহ্য আছে এবং বলির সুব্যবস্থা আছে, সেখানে পশুবলি বন্ধ করে দেওয়া অযৌক্তিক। বাঙালি পৃথিবীর শেষ মাতৃকা উপাসক মহাজাতি। বলির স্ট্র্যাটেজিক গুরুত্ব আছে।
৫. কিন্তু বাঙালিকে পশুবলির অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। উত্তর ভারতে নিরামিষ নবরাত্রি হয় ফলে দুর্গাপুজোর সন্ধিপুজোতে বলি দেওয়া যায় না। দিল্লির কালীমন্দিরেও ছাগবলি হয় না। কলকাতার বিশ্বমানব ও অবাঙালি প্রভাবের ফলে খোদ পশ্চিমবঙ্গেরই অনেক মন্দিরে পশুবলি বন্ধ হয়ে গেছে। আমাদের ধর্মকে এভাবে লাটে তুলে দিচ্ছেন বিশ্বমানবরা।
৬. যারা নিজেরা মাংস খান তারা মায়ের প্রসাদী ভোগে অবশ্যই মাংস দেবেন, নতুবা কাজটা অনৈতিক হবে, এছাড়া মহাপাতক হবেন। নিজে নিরামিষাশী হলে আলাদা। কিন্তু মাংস গ্রহণ করেন যে ব্যক্তি, তিনি মায়ের পুজোয় জোর করে কোনও ইচ্ছুক শাক্তের পশুবলি বন্ধের প্রয়াস করলে অভিশপ্ত হবেন। নিজে যা খান, মাকে তাই নিবেদন করার প্রাচীন প্রথা। নিজে আমিষ খেয়ে মাকে নিরামিষ খাইয়ে রাখলে সে পুজো নয়, শক্তির আরাধনা নয়, নিছক ভড়ং মাত্র।
৭. ইচ্ছুক শাক্ত বাঙালি যদি ছাগ ও মহিষবলি না দিতে পারে, তাহলে তার ধর্মপালনে বাধা পড়ে, এবং তাহলে সেই অন্যায়ের প্রতিবিধান করার পূর্ণ অধিকারও শাক্তের আছে। শাক্ত কাউকে পশুবলি দিতে বাধ্য করেনি, অন্য কেউ যেন জোর করে শাক্তকে পশুবলি থেকে বিরত করতে না যায়। পরিণাম খারাপ হবে।
৮. শাক্ত নিজের রক্ত দিয়েও মায়ের পুজো করে। মা রুধিরপ্রিয়া। যাঁরা পশুবলি দেন না, তাঁদের জন্যও রক্তের বিকল্প হিসেবে লাল রঞ্জক পদার্থ ব্যবহার বাধ্যতামূলক। লাল রঙ সেই প্রস্তর যুগ থেকে মাতৃধর্মের রঙ। আমাদের ধর্মটি গণধর্ম, আমরা জয় মা জয়ধ্বনি দিয়ে বলি দিই। বলিপ্রিয়া রুধিরপ্রিয়া মায়ের পুজোয় ব্যাঘাত সৃষ্টি করা সরকারের অনুচিত।
৯. মা জগদকারণ এবং জগদবিলয়। তিনি সৃষ্টি স্থিতি প্রলয়। তিনি শুধু সৃষ্টি করেন না, ধ্বংসও তিনিই করেন। তিনি আপনার মা আমার মা টুনির মায়ের সঙ্গে তুলনীয় নন, কাজেই মা কেন সন্তানের রক্ত চাইবে এইসব বলে হ্যাজ নামাবেন না অনুগ্রহ করে। প্রকৃতি অব্যক্ত, আমরা ধ্যানের সুবিধার জন্য মা বলে ডাকি। বলি আমাদের মাতৃধর্মের কেন্দ্রে আছে, বলি ব্যতীত বাঙালির মাতৃধর্মের পালন সম্ভব নয়। পশুবলি বাধ্যতামূলক কেউ করেনি, কিন্তু ইচ্ছুক শাক্তকে জোর করে পশুবলি থেকে বিরত করলে সেই মহাপাপ-অনাচার-ব্যভিচারের উপযুক্ত দণ্ডবিধান করা হবে।
© তমাল দাশগুপ্ত Tamal Dasgupta
জয় জয় মা। জয় মা কালী পাঁঠাবলি।
মায়ের এই মূর্তি রুবিন মিউজিয়ামে আছে।
সংযোজন
১.
একদল ছাগল বলি দেখে নার্ভাস ব্রেকডাউন করে ফেলছেন, আমার সমবেদনা। আপনারা দূরে থাকুন না। কে আসতে বলেছে। কিন্তু শাক্তদের ঘাড়ের ওপরে চেপে এই বাজে বকা বন্ধ করুন তো। দোকানে মাংস পুড়িয়ে তন্দুরি কাবাব খাওয়ার সময় শিউরে উঠে আপনারা প্রতিবাদ করেন বোধ করি, কারণ আপনাকেও যদি পুড়িয়ে কেউ খেয়ে ফেলে? সতীদাহ তো মানুষ পোড়ানোর প্রথা ছিল। কিন্তু মুর্গি আর ছাগল তো নিয়মিত দাহ হচ্ছে, রাঁচির বদ্ধ পাগল ছাড়া কেউ সেসব দেখে সতীদাহের ভয় পায় না। আপনাদের স্নায়বিক অসুখ তো দূরে থাকুন না। আপনারা গাঁউ গাঁউ করে রান্না করা মাংস গিললেও আপনাদের কাঁচা রক্ত দেখলে নার্ভাস ব্রেকডাউন হয় বুঝতে পেরেছি, তো দেখবেন না। আপনাদের তো কেউ দেখতে বাধ্য করে নি। আপনারা এক কাজ করুন, নিজের বাড়িতে একটা কালীমন্দির করুন, সেখানে নিরামিষ বলি দিন, আমিও সেই ভোগ খেতে যাব। একবার মায়ের পুজো করুন। এইসব হাওয়ায় কথা ভাসানো অনেক সহজ। একবার মায়ের পুজো করুন, দুর্গাপুজো বা কালীপুজো করুন। সাধারণ বাঙালির মত বলি দিয়ে করতে হবে না, আপনারা রবীন্দ্রনাথের মত এত রক্ত কেন আর্তনাদ করতে করতে নৃত্যনাট্য করে পুজো করুন, কিন্তু অন্তত মায়ের পুজোটা করুন। দেখে তো মনে হচ্ছে শাক্তদের পুজোয় ব্যাঘাত তৈরি ছাড়া অন্য কোনও কিছুই এ জীবনে করার কোনও ক্ষমতা নেই, উদ্দেশ্যও নেই, আর বোধবুদ্ধিও নেই।
অন্যের পুজো সে কিভাবে করবে বলার অধিকার বা শাস্ত্রজ্ঞান কিছুই নেই আপনাদের। কেন এই ফালতু হ্যাজ দিচ্ছেন? কোন শাক্ত আপনাদের অশিক্ষিত নির্বোধ অজ্ঞান হ্যাজ শুনে পশুবলি বন্ধ করবে?
শুনুন, মা নিজের মুখেই বলি চেয়েছেন। মাকে বলিপ্রিয়া সেজন্যই বলা হয়েছে। মা রক্ত পান করেন, শাস্ত্রবচন।
পৃথিবী শুধু জন্ম দেয় না। আপনি মরলে এই পৃথিবীই আপনাকে গ্রাস করে। আমার লেখাটা মন দিয়ে পড়ুন। মা কালীকে আপনার মা বা পাড়ার টুনির মা ভাববেন না।
২.
Raju Kar শুনুন, নিজে কি মায়ের মন্দির বানিয়েছেন? বানিয়ে এইসব জ্ঞান সেখানে দিন। অন্যের মন্দিরে গিয়ে এসব শোনাবেন না। নিজে পুজো করুন, সেখানে নিরামিষ বলি দিন। অন্যের পুজোয় সে কি করবে তাকে কানে ধরে শোনাতে যাবেন না।
মায়ের পুজো আদৌ করেন নাকি ভিড় দেখে এমনিই নিজের অহিংস জ্ঞানের চানাচুর বেচতে চলে এলেন? অহিংসা পরমো ধর্ম, ধর্ম হিংসা তথৈবচ, শুনেছেন?
এখানে আমরা সমস্ত রকম আলোচনা চলতে দিই। অনেক শাক্ত গ্রূপে পশুবলির বিরোধিতা করলেই ব্লক করে দেয়। শাক্তধর্মের কেন্দ্রে বলি আছে। বাতাসে কথা ভাসাবেন না। সাধনা করুন, মায়ের পুজো নিজে করে দেখুন। শাক্ত ছদ্মবেশে ভেগান আর পেটা আর গান্ধীবাদ প্রচার করতে চলে আসবেন না।
৩.
হেমন্তিকা মুখোপাধ্যায় আপনার উপাসনায় বৈষ্ণবের শ্রীলক্ষ্মীর বদলে সম্ভবত মহালক্ষ্মী বা পেঁচকবাহিনী চামুণ্ডা অথবা মহাবিদ্যা কমলা আবির্ভূত হয়েছিলেন: মা নিজের খাবার নিজেই জোগাড় করে নেন বলে একটা প্রবাদ আছে 😊
জয় জয় মা। আপনার সাধনা সফল হোক। যথার্থ বলেছেন, আমাদের দেহেই মায়ের অধিষ্ঠান হয়।
৪.
এই সব উৎকট পশুপ্রেমী যারা বেঙ্গল ইমিউনিটি বন্ধ করেছিল, যারা শাক্তদের পুজোয় বলিতে বাধা দেয়, প্রত্যেকে মানসিকভাবে অসুস্থ। মানুষের বদলে, বাঙালির বদলে কয়েকটি কিউট পশুর ওপরে এদের অতিরিক্ত দরদ। মানেকা গান্ধীর মত ব্যক্তিগত জীবনে অসুখী, নির্বান্ধব অথবা অপ্রাপ্তির বেদনায় ভোগে। পশু ও পরিবেশের ভারসাম্য রাখতেই শাক্তদের পুজোয় বলি দেওয়া হয়, কিন্তু এইসব পাগলদের জীবনে ভারসাম্য বলে কিছু নেই। এমন পশুপ্রেমী আছে যে কুকুরের প্রতি ভালোবাসায় প্রায় মানুষ খুন করে ফেলে, আমরা জানি। সবথেকে বিরক্তিকর হল এরা নিজেরা বাপের জন্মে মায়ের পুজো করে নি, কোনওদিন করবেও না, মায়ের পুজো সম্পর্কে বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই, জানার প্রয়াস নেই, কিন্তু সবাই আচমকা মাতৃধর্ম বিশারদ হয়ে শাক্তদের কানে ধরে জ্ঞান দিতে চলে আসে: মা কি সন্তানের রক্ত চাইবেন?
ওরে পাগলা মা কি তোর একার? মোষের মাংস না খেলে সিংহ যাবে কোথায়? যে পৃথিবী জন্ম দেন, সেই পৃথিবীই গ্রাস করেন। পশুপ্রেমীর মা ছোটবেলায় মানুষ করতে পারেন নি তাই এমন সব জন্তু তৈরি হয়েছে, কিন্তু নিজের মা, বাপনের মা, টুনির মা, মানেকা-মা, এসবের সঙ্গে মা কালীকে প্লিজ গুলোবেন না।
৫. কেন্দ্রীয় সরকারের পশুকল্যাণ নির্দেশিকা

তমাল দাশগুপ্ত ফেসবুক পেজ, ছয় নভেম্বর দুহাজার বাইশ