
কালী পরমতত্ত্ব।
কালীর তত্ত্বে বস্তু ও ভাব একত্রে থাকে, এখানে ভাণ্ড ও ব্রহ্মাণ্ড একাকার। অস্যার্থ, এখানে ব্রহ্ম সত্য জগৎ মিথ্যার বাগাড়ম্বর ও বিড়ম্বনা নেই।
জগদকারণ কালী: শাক্ত তাই জগৎ সত্য জ্ঞান করে।
মা শুধু মোক্ষদা নন, চতুর্বর্গ দান করেন।
কৃচ্ছ্রসাধনের ধর্ম নয়, কারণ শাক্ত নিজে আহার করলেও সেই মাকে আহুতি দেওয়া হয়।
বিশেষ মন্ত্রোচ্চারণ নিয়ে ব্যস্ত না হলেও চলে, কারণ যত শোনো কর্ণপুটে সবই মায়ের মন্ত্র বটে।
মায়ের জন্য প্রদত্ত বলির পাঁঠার মাংস বিশেষ সুস্বাদু, শাক্ত ধর্মটিই স্বাদু।
আমরা এই অব্যক্ত পরম প্রকৃতিকে মা বলে ডাকি, সেজন্য আমাদের মা তাঁর সন্তানদের অহেতুকী স্নেহ করেন, কৃপাবর্ষণ করেন। আমরা অযোগ্য সন্তান, তিনি নিজেকে আপনি না প্রকাশ করলে সাধ্য নেই যে তাঁর স্বরূপ জানি।
মা কালীর সন্তানের মৃত্যুভয় থাকে না, কারণ মা দক্ষিণাকালীর ভয়ে যমও পালিয়ে বেড়ায়।
মা কালচক্র নিয়ন্ত্রণ করেন, তিনি অব্যক্ত প্রকৃতি, তিনি জগদকারণ এবং তিনিই জগদবিলয়, এবং মায়ের সন্তান সেজন্য কালজয়ী হন।
কালীতত্ত্বে বর্ণবাদ নেই, বৈদিক পৌরাণিক সনাতনী বর্ণভেদ নেই। কালীতত্ত্বে লিঙ্গবৈষম্য নেই।
এই কালীতন্ত্রতত্ত্বে পূর্বসূরীদের ঐতিহাসিক প্রজ্ঞা আছে। প্রস্তর যুগ থেকে মানব প্রজাতির মধ্যে একটানাভাবে পূজিত আদ্যা মাতৃকার শক্তি আছে কালীতত্ত্বে। যখন কিছু ছিল না, তখনকার অবস্থার নাম কালী, যখন কিছু থাকবে না, তখনকার অবস্থারও নাম কালী। আদ্যা শক্তির ধর্ম, আদিতম ধর্ম হল কালীতত্ত্ব।
কালীভক্ত অনেক সহস্র সহস্র বছরের প্রজ্ঞার স্ফুরণ এক এক লহমায় বিচ্ছুরিত করতে পারে, সেজন্য মা কালীর সন্তানের মত অতুল্য বলশালী আর কেউ নেই।
বাঙালি হয়ে জন্ম নিয়ে যে ব্যক্তি কালীতত্ত্ব জানল না, তার মত হতভাগা আর নেই।
জয় জয় মা। জয় মা কালী!
© তমাল দাশগুপ্ত
তমাল দাশগুপ্ত ফেসবুক পেজ, চার নভেম্বর দুহাজার বাইশ