
হে বিক্ষুব্ধ উত্তরবঙ্গীয়, শুনুন। আমার জন্ম পাইকপাড়ায়। বেড়ে ওঠা এয়ারপোর্টের কাছে। মামাবাড়ি বাগবাজারে। পড়াশোনা যাদবপুর আর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে। কলেজ স্ট্রিট থেকে পার্ক স্ট্রিট, চৌরঙ্গী থেকে গড়িয়াহাট, কলকাতা শহরটির চর্যা আমার হাতের তালুর রেখার মত পরিচিত, যদিও আমি কর্মসূত্রে প্রবাসী, অধ্যাপনা করি ভারতের রাজধানী দিল্লিতে।
কিন্তু কলকাতার বাবুরা আমাকেই মুখ খুলতে দেয় না তাদের মিডিয়া আর তাদের একাডেমিয়ায়। আর আপনি ভাবছেন আপনি একাই প্রান্তিক? আরে বাঙালি বিষমানবের কাছে ওর বাথরুম সাইজের বিশ্বে যা কিছু ফিট না করে, তার সবই তো অস্পৃশ্য। আপনি নিজেকে এমন আলাদা রকমের বঞ্চিত ভাবছেন কেন? জয়েন দ্য লিগ, ইউ আর ইন গুড কোম্পানি।
কলকাতার আনন্দবাজারী তৃণমূলী বাম্বিপ্লবী রবিঠাকুরীয় লিটল ম্যাগাজীয় বইমেলীয় কাংলাপ্রেমী বিজ্ঞান-যুক্তিবাদী সেকুলার বাবুর বাথরুম সাইজের বিশ্বের বাইরে যা কিছু পড়ে সবই তো হয় ফ্যাসিস্ট নয়ত বিচ্ছিন্নতাবাদী নয়ত ফিউডাল নয়ত খোট্টা বহিরাগত নয়ত কুসংস্কার নয়ত হিন্দু সাম্প্রদায়িক নয়ত একদা আমেরিকার এখন নাগপুরের চক্রান্ত। নাগপুর বা আমেরিকা কোনও চক্রান্ত করে না, এমন বলা উদ্দেশ্য নয়, কিন্তু এই বাম্বাবু তো একদা মরিচঝাঁপির উদ্বাস্তু আন্দোলনকেও আমেরিকার চক্রান্ত বলে দিয়েছিল। এরা তো আসামে বাঙালির আবহমান বসবাস শুনে তালগাছ থেকে পড়ে, এবং উত্তরবঙ্গ মানে এদের কাছে দার্জিলিং ভ্রমণ ছাড়া আর কিছু নয়। শেকড়বিচ্ছিন্ন ব্যক্তিকেন্দ্রিক তালকানা হুজুগে স্রোতের শ্যাওলা হল কলকাতার বাবু। এরা বুদ্ধ ক্ষমতায় থাকলে হেঁহেবাম, আর মমতা ক্ষমতায় এলে সমান হেঁহে করতে করতে গামছা কাঁধে নিয়ে মমতার চেয়ার মুছে দেয়। কাল দিলু মোষ ক্ষমতায় এলে এরা দিলুর “ইয়ে দুর্গা কওন হ্যায়”তে পোঁ মেলাতে এক সেকেন্ড দেরি করবে আপনার মনে হয়? এরা তো জন্মগতভাবে চামচা।
মা দুর্গা মা কালীর কথা শুনলেও ভাবে যারা নির্ঘাত হিন্দুত্ববাদী চক্রান্ত, বাকি সময় “কালীপুজোয় পশুবলি বন্ধ হোক” দাবিতে কেঁদে ভাসিয়ে যারা আচমকা মহুয়া মৈত্রের সমর্থনে গলা ফাটিয়ে মদ্য মাংসের ভক্ত হয়ে যায়, স্কুলে সরস্বতী আর থানায় কালী পুজো এই সেকুলার দেশে কবে বন্ধ হবে, এই আকুল প্রশ্নে ব্যাকুল যে বুদ্ধিজীবী আচমকা বিজেপি আটকাতে হবে বলে বাঙালির মাতৃকা উপাসনায় বিজেপির হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে গর্জে ওঠে, দুর্গাপুজোয় এগরোলের অধিকারে নিরামিষ নভরাত্রির বিরুদ্ধে হুঙ্কার দিয়ে তারপর শরদিন্দু উদ্দীপনের হুদূর পার্টির গণতান্ত্রিক অধিকার ক্ষুণ্ণ হওয়ার বিরুদ্ধে মহিষাসুর পুজোর সমর্থনে আঁতলামির মিছিল করে, যারা সকালে রবিঠাকুর করে দুপুরে বাম আর সন্ধ্যায় জয় কাংলার তৃণমূল হয়ে রাতের মধ্যে ভাজপা হয়ে যেতে পারে, সেই হিপোক্রিট কৃমিকীট অজ্ঞান আবালদের ওপরে অভিমান করে আপনি এই আবহমান তন্ত্রাশ্রয়ী গৌড়বঙ্গের সোনালি ত্রিভুজ থেকে উত্তরকে আলাদা করে মোদির আন্ডারে কেন্দ্রশাসিত নেবেন? আদ্ধেকের বেশি জেলে চলে গেছে বা যাবে এমন সব চালচোর চাকরিচোরের ওপর অভিমান করে, রাগ করে এখন মাটিতে ভাত খাবেন আপনি?
এই বাবুদের মধ্যে প্রফেসর মানে ছাত্রীলোলুপ লুচ্চা, এদের মধ্যে সাংবাদিক মানে কুণাল ঘোষ, এদের মধ্যে বাংলাপ্রেমী মানে মাতাল এবং বুদ্ধিজীবী মানে চামচা। এদের মধ্যে বিপ্লবী মানে ইসলামিক জেহাদি, এদের মধ্যে শিক্ষিত মানে হয় অল্পবিদ্যা ভয়ঙ্করী নয়ত বিদ্যেবোঝাই বাবুমশাই, এদের মধ্যে পণ্ডিত মানে যে পণ্ড করতে পারে, এদের মধ্যে যুক্তিবাদী মানে হিন্দুবিদ্বেষী, এদের মধ্যে সেকুলার মানে মোল্লার দালাল আর এদের মধ্যে বিশ্বমানব মানে গ্যাসবেলুন। এদের মধ্যে এলিট মানে নির্বোধ উন্নাসিক, এদের কাছে মফস্বল মানে ছ্যা ছ্যা ছাব্বিশ পরগণা, এদের কাছে কালীভক্তি মানে কুসংস্কার, এদের কাছে লুলা মানে বিপ্লব আর প্যালেস্টাইন মানে মুক্তি আর এদের কাছে নিজের তামাদি আদর্শের বদ্ধ কুয়োর বাইরে সবই অদৃশ্য অস্পৃশ্য। বাংলায় চাড্ডি বেড়েছে এই বাবুদের দীর্ঘদিনের ব্যভিচারের ফলে। আজ উত্তরবঙ্গ যদি আলাদা হতে চায় তার জন্য এরাই দায়ী সন্দেহ নেই। আজ যদি সামান্য সরকারি কাজের জন্যও বারবার সুদূর জলপাইগুড়ি থেকে কলকাতায় ছুটে আসতে হয়, সেই হয়রানির জন্য এই বাবুর নির্বোধ কলকাতাকেন্দ্রিকতা দায়ী।
ক্ষোভ যথার্থ। কিন্তু চাড্ডির ওপরে নির্ভরশীল হতে যাবেন না, ওতে লাভ হয় না বাঙালির, ক্ষতি হয় ষোলো আনা। আসামের বাঙালিকে দেখে শিক্ষা নিন, চাড্ডি হয়ে লাভ করতে গেছিল, কিন্তু সে লাভের গুড় পিঁপড়ে খেয়ে নিয়েছে। দুদিন অপেক্ষা করুন, এই কলকাতার বাবুদের অন্তর্জলি শুরু হয়ে গেছে। এদের শেষ চিহ্ন মহাকাল স্বয়ং তাঁর পায়ের তলায় গুঁড়িয়ে দেবেন।
তমাল দাশগুপ্ত Tamal Dasgupta
বাঙালি ইন্টেলেকচুয়াল হিসেবে ছবিটি প্রতীকী। আবির বা ব্যোমকেশের প্রতি কোনও অচেদ্দা দেখানো হচ্ছে না এতদ্বারা।
তমাল দাশগুপ্ত ফেসবুক পেজ, ছয় নভেম্বর দুহাজার বাইশ