
আপনারা কি জানেন, বোল্লা কালীর পুজোয় পাঁঠা বলি বন্ধ করার ব্রত নিয়েছেন যে পশুপ্রেমী ব্রতীন চক্রবর্তী, যার আবেদনের জোরে মোদি সরকারের পশুকল্যাণ দপ্তর পাঁঠাবলি বন্ধের তুঘলকি হুকুম জারি করেছিল, তার ফেবু ফ্রেন্ড লিস্টে বরুণ গান্ধী আছেন? যার মা মানেকা গান্ধী পশুপ্রেমের পরাকাষ্ঠা দেখিয়ে বেঙ্গল ইমিউনিটি বন্ধ করে দিয়েছিলেন? কারণ ঘোড়া ব্যবহার করে বাংলার বুকে বরানগরে সাপের বিষের প্রতিষেধক তৈরি হত? সেই অসামান্য প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ করেছে এই পশুপ্রেমী দল, যার ফলে এখন গ্রামগঞ্জের বাঙালিরা প্রত্যেক বছর বর্ষাকাল এলেই সাপের কামড়ে অসহায়ের মত মারা যায়? কারণ বেঙ্গল ইমিউনিটি বন্ধ করে দেওয়ার ফলে বাংলার সাপের নির্দিষ্ট প্রতিষেধক আর তৈরি হয় না, চেন্নাই থেকে তৈরি হয়ে যেটা আসে সেটা যথেষ্ট কার্যকরী নয় বাংলার সাপের কামড়ে আক্রান্ত মানুষের চিকিৎসার জন্য?
আপনারা জানেন, পশুপ্রেমীদের জন্য বাঙালির কত বিপর্যয় হতে পারে? ভাবতে পেরেছিলেন, পশুপ্রেমের চোটে আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্রের বেঙ্গল ইমিউনিটি বন্ধ করে দিয়েছে এই অবিমৃষ্যকারী হঠকারী হনুমানের দল? যে বেঙ্গল ইমিউনিটি ভারতের বুকে প্রথম সফলভাবে সাপে কাটার ওষুধ আবিষ্কার এবং বাজারজাত করে? আজকে যারা মায়ের পুজোয় পাঁঠাবলি আটকাতে চাইছে, নিশ্চিত জানবেন এই পাগলা দন কিহতের দল, এই ঈশপের হনুমান, এই নির্বোধ কাণ্ডজ্ঞানহীন লোকজনের কারণে বাঙালি যে কোনও সময় বিপন্ন হতে পারে।
দেখামাত্র প্রতিরোধ করুন। কাংলাগর্গান্ডুর গোবলয়বিরোধী গলা কাঁপানো যাত্রাভিনয় দেখে একচক্ষু হরিণের মত ভাববেন না শত্রু শুধু একদিকে আছে, বাইরে আছে। ঘরশত্রু পশুপ্রেমীর প্রেমের চোটে যে কোনও সময় বাঙালি জাতির নাভিশ্বাস উঠতে পারে, সাবধান।
বেঙ্গল ইমিউনিটি আবার তৈরি হোক। সবার ওপরে বাঙালির অধিকার, বাঙালির বেঁচে থাকার অধিকার। যাদের পশুপ্রেম গোবলয়প্রেম মোল্লাপ্রেমের বিষমানবতা বাঙালির থেকেও বড়, তারা অবিলম্বে বিধ্বস্ত হোক, ধ্বংস হোক।
বেঙ্গল ইমিউনিটির দুর্গাপুজো যারা দেখেছে, তারা বলে, এত সুন্দর দুর্গাপুজো ওই অঞ্চলে আর হয়নি। মায়ের পরণে বেনারসি শাড়ি। ঢাকির দল আসত চাকদহ থেকে…
সব বন্ধ করে দিয়েছে এরা। আর এই পশুপ্রেমী বদ্ধ পাগলদের সমালোচনা করলেই এরা সবাই এক একটা রামমোহনের অবতার বনে যায়, বলে সতীদাহও তো একসময় চলত, রামমোহন বন্ধ না করলে সবাই সেটাও ভালো ভাবত।
এটা পাগলের অন্যতম ডায়াগনস্টিক লক্ষণ। ডাক্তারবাবুরা আরও ভালো বলতে পারবেন, কিন্তু এরা সাইকোটিক এবং প্যারানোয়েড, নতুবা বাঙালি সমাজের যা কিছু বৃহৎ, সফল এবং জনপ্রিয় সে সব দেখে সতীদাহ ভেবে বন্ধ করার বায়ু চাগত না, এদের উইন্ডমিলে চার্জ করার পাগলামি জাগত না, এবং বেঙ্গল ইমিউনিটি বন্ধ হত না।
এই শাক্তবিদ্বেষী পশুগুলো কেবল শাক্তধর্মের শত্রু নয়, এরা বাঙালির বেঁচে থাকার পথে বাঁধা, এরা ভয়ানক আপদ, এরা বাঙালির শত্রু। আমাদের অবিলম্বে “পশুপ্রেমী-পাগলামি” বিরোধী আন্দোলন শুরু করা প্রয়োজন এবং বেঙ্গল ইমিউনিটি পুনরায় চালু করার আন্দোলনও সেই সঙ্গে করতে হবে। বেঙ্গল ইমিউনিটি পুনরায় চালু করার মাধ্যমে বাংলার বুকে এই বদ্ধ পাগলদের কুকীর্তির চিরস্থায়ী প্রত্যাখ্যানের ইতিহাস রচিত হোক।
আমি নিজেই নির্দিষ্ট পরিপ্রেক্ষিতে নিরামিষ বলির পক্ষে সওয়াল করেছি। পশুবলি বাধ্যতামূলক করা হয়নি। এ সংক্রান্ত আমার লেখা আপনারা অনেকেই পড়ে থাকবেন। কিন্তু শাক্তর অধিকার আছে পশুবলি দেওয়ার, কারণ মা বলিপ্রিয়া রুধিরপ্রিয়া। সে অধিকার যে নির্বোধ কেড়ে নিতে চাইছে, তাকে মায়ের নামে শাস্তি দেবে শাক্ত। জয় জয় মা।
© তমাল দাশগুপ্ত Tamal Dasgupta
সংযোজন

তমাল দাশগুপ্ত ফেসবুক পেজ আট নভেম্বর দুহাজার বাইশ