
শাক্ত বৈষ্ণব অভেদ।
★ চৈতন্য মহাপ্রভুর স্বহস্তে লিখিত একটি শ্রী শ্রী চণ্ডী পুঁথি ছিল বলে শোনা যায়।
★ নিত্যানন্দ প্রভু ত্রিপুরাসুন্দরী যন্ত্র ধারণ করতেন, তাঁকে শাক্ত অবধূত আখ্যা দেওয়া হয়েছে।
★ গৌড়ীয় বৈষ্ণব ধর্ম মধ্যযুগে সৃষ্ট, কিন্তু বাংলার বুকে শক্তিনির্ভর বৈষ্ণব ধর্মের দীর্ঘ ঐতিহ্য ও ইতিহাস আছে, প্রাচীন যুগ থেকেই। পৌণ্ড্রক বাসুদেব দ্রষ্টব্য, আগে তাঁকে নিয়ে লিখেছি।
★ পঞ্চ বৃষ্ণি বীরের বৈষ্ণব ধর্ম ছিল একানংশা মাতৃকার দ্বারা আশ্রিত। সে তথ্য বহুলাংশে বিস্মৃত আজ। কিন্তু এই কারণেই বাসুদেব মহাভারতের দুর্গাস্তবে মা দুর্গার ভ্রাতা বলে আখ্যা পেয়েছেন।
★ চতুর্থ শতকের একটি লিপিতে (গঙ্গাধর ইন্সক্রিপশন) বিষ্ণু মন্দিরকে ডাকিনীদের দ্বারা পরিপূর্ণ থাকার ঘোষণা করা হয়। কোনও সন্দেহ নেই, বৈষ্ণব ধর্ম শক্তিসাধনার একটি নামান্তর মাত্র। আগে এই বিষয়টি নিয়ে আমার পেজে লিখেছি।
★ কৌল ধর্ম আচরণ বিধি: অন্তরে শাক্ত ও সভামধ্যে বৈষ্ণব। বাংলায় শাক্ত বৈষ্ণবের ভেদ নেই। বস্তুত শ্রীরাধা শক্তি এবং গৌড়ীয় বৈষ্ণব মাত্রেই শাক্ত।
এজন্যই “কালী হলি মা রাসবিহারী, নটবর বেশে বৃন্দাবনে”, রামপ্রসাদ গেয়েছিলেন।
★ আধুনিক যুগে শাক্ত মহামন্ত্র বন্দে মাতরমের উদ্গাতা ঋষি বঙ্কিম স্বয়ং পরম বৈষ্ণব ছিলেন। তাঁর পরিবারে রাধাকৃষ্ণ নিত্যসেবিত হতেন, পারিবারিক মন্দিরে নিত্য পুজো হত। কমলাকান্তের দপ্তরের অমর সৃষ্টি “আমার দুর্গোৎসব” যে বঙ্কিমের রচনা, তাঁরই লেখনীতে সৃষ্ট কৃষ্ণচরিত্র একটি আকর গ্রন্থ।
© তমাল দাশগুপ্ত Tamal Dasgupta
ছবিতে দেখছেন উনিশ শতকের কলকাতায় ছাপা কৃষ্ণকালী চিত্র, এখানে শ্রীরাধা কর্তৃক আরাধিতা কৃষ্ণকালী গোপীজনসহ বৃন্দাবনবাসীদের দর্শন দিচ্ছেন।। এঁকেই রটন্তী কালী বলা হয়। চিত্রটির বর্তমান অবস্থান মেট মিউজিয়াম। প্রসঙ্গত বৃন্দাবনে সেই স্থানে একটি কৃষ্ণকালী মন্দির আছে যেখানে বলা হয় এই ঘটনাটি ঘটেছিল, অর্থাৎ কালী ও কৃষ্ণের অভিন্নতা রটেছিল, অথবা শ্রীরাধার অপবাদভয় দূর হয়ে শ্রীরাধার কালীভক্তির সুনাম রটেছিল, সেই থেকে রটন্তী।
আদ্যা নিত্যা জগদকারণ প্রকৃতি হলেন অব্যক্ত। তিনি সমস্ত লিঙ্গভেদের অতীত, বোঝার সুবিধার জন্য মা বলে ডাকি মাত্র। কাল ও কালী যেমন অভিন্ন, কালী ও কৃষ্ণও তেমন অভিন্ন। কালী কেবল নারী নয়, মেঘের বরণ করিয়ে ধারণ কখনও কখনও পুরুষ হয়।
জয় মা কৃষ্ণকালী। জয় জয় মা।
তমাল দাশগুপ্ত ফেসবুক পেজ, ছয় সেপ্টেম্বর দুহাজার বাইশ