যাদের আদিবাসী বা মূলনিবাসী বলা হচ্ছে, সেই অস্ট্রোএশিয়াটিক জনগোষ্ঠী, এরা ভারতভূমিতে সবার পরে পরিযান করেছেন, আধুনিকতম জেনেটিক গবেষণা অনুযায়ী। বৈদিক আর্যেরও পরে এসেছেন এরা, অতএব এই মূলনিবাসী তত্ত্বকে ভুলনিবাসী বললেই যথার্থ হয়।
হরপ্পা যুগ থেকে শুরু করে পাণ্ডু রাজার ঢিবিতে গড়ে ওঠা মাতৃকা উপাসক সভ্যতায় কোনও তথাকথিত আদিবাসী উপাদান নেই।
অস্ট্রোএশিয়াটিকদের মধ্যে যেখানে যেখানে মাতৃধর্ম প্ৰচলিত, যেমন মেঘালয় অঞ্চলে খস/খাসি জাতি, তাঁরা নিঃসন্দেহে আমাদের মহাজাতির মহাধর্মকে সমৃদ্ধ করেছেন সময়ে সময়ে।
কিন্তু এই যে দুর্গাপুজো এলেই একটা হুদূর হুজুগ আসে, আর একপাল মূলনিবাসী নামধারী লুম্পেন জয় মহিষাসুর বলে নৃত্য করে থাকেন, এর পেছনে আদৌ কোনও ঐতিহাসিক ভিত্তি নেই। মহিষমেধ উৎসব হরপ্পা সভ্যতায় প্ৰচলিত ছিল, বলির মহিষ পরে মহিষাসুর রূপ নিয়েছে মাত্র। আগে অনেকবার লিখেছি।
কিন্তু যারা নিজেদের মূলনিবাসী বলে দাবি করছেন, এরা আদৌ মূলনিবাসী নন, এরা আসলে ভারত ভূমিতে সর্বশেষ পরিযায়ী।
বাঙালির দ্রাবিড় ও ব্রাত্য অ্যালপাইন আর্য শেকড়টিই সর্বপ্রাচীন। আদিতে দ্রাবিড়ভাষী হরপ্পা সভ্যতার পরিণত স্তরে অর্থাৎ পাঁচ হাজার বছর আগে ব্রাত্য আর্য উপাদান এসে গেছিল, এই সিদ্ধান্তের অনেক কারণ আছে। কিন্তু অস্ট্রোএশিয়াটিক অনেক পরে এসেছেন, জেনেটিক গবেষণা থেকে জানা যাচ্ছে। হরপ্পা সভ্যতায় এরা ছিলেন না। পাণ্ডু রাজার ঢিবির সভ্যতা যখন গড়ে ওঠে তখনও এরা আসেন নি ভারতে। অতএব এদের আদিবাসী বললে নিতান্ত ভুল বলা হচ্ছে। কারণ এরা কোনওভাবে আদি বাসিন্দা নন।
অস্ট্রোএশিয়াটিক ও টিবেটোবার্মিজ উপাদান অনেক পরে এসেছে, এবং পশ্চিম ভারতে হরপ্পা, পূর্ব ভারতে আমাদের সর্বপ্রথম সভ্যতা কেন্দ্র পাণ্ডু রাজার ঢিবি, এই স্থানগুলিতে যে মাতৃকা উপাসক সভ্যতা গড়ে ওঠে তাতে এই তথাকথিত আদিবাসী মূলনিবাসী উপাদান ছিল না, কারণ অস্ট্রোএশিয়াটিক পরিযান হয়েছে মোটামুটি চার হাজার বছরের কিছু কম আগে। ডেভিড রাইখ অনুসরণ করে লেখা আর্লি ইন্ডিয়ানস (লেখক টোনি জোসেফ) দেখুন।
ভুলনিবাসী মাতৃকা দূষকদের মিথ্যের মুখোশ খুলে দিন। বাংলায় বসে মাতৃকাধর্মের দূষণ যে ঘটায়, কোনও শাস্তি তার জন্য যথেষ্ট নয়।
তমাল দাশগুপ্ত ফেসবুক পেজ, কুড়ি সেপ্টেম্বর দুহাজার বাইশ