
পালযুগের তন্ত্রধর্মে পূজিত ছিলেন মা পর্ণশবরী। তিনি সর্বমারিপ্রশমনী বলে আখ্যা পান, কারণ তিনি সমস্ত রোগভয় নিবারণ করেন। তিনি একদিকে মা শীতলা এবং অন্যদিকে জ্বরের দেবতা হয়গ্রীব দ্বারা পরিবেষ্টিত। তাঁর তিনটি মুখ, ছয় হাত। ছয় হাতে তিনি অস্ত্র ধারণ করেন। ডানদিকের হাতে বজ্র, পরশু, তীর। বামদিকের হাতে ধনু, পত্রগুচ্ছ এবং তর্জনীপাশ। তিনি পদতলে সমস্ত অসুখকে দলন করেন।
তাঁর পর্ণ ঔষধি গুণ বহন করে। এছাড়া তিনি অরণ্যচণ্ডী বা বনচণ্ডীর মতোই অরণ্যের অধিষ্ঠাত্রী।
আজকের বাঙালি জাতি জঙ্গলের অরাজক রাজত্বের বাসিন্দা, বিজাতীয় বলয়ের দালালদের দাপাদাপিতে অতিষ্ঠ। বাঙালির ভেতরে ঘরশত্রু, বাঙালি আত্মবিস্মৃত, শেকড়বিচ্ছিন্ন। বাঙালির মজ্জায় মজ্জায় গভীর অসুখ। একমাত্র মা পর্ণশবরী ছাড়া কে বাঁচাবে আমাদের? তাঁর শরণ নেব কাজেই।
তাঁকে পিশাচীও বলা হয়েছে মন্ত্রে। তিনি বাঙালির শত্রুদের কাছে ভীতিজনক। মা পর্ণশবরী আমাদের এই তন্ত্রাশ্রয়ী মহাজাতির ঘরশত্রুদের রক্তমজ্জামেদমাংস আহার করুন।
পালযুগের পর্ণশবরী মূর্তি। আনুমানিক দশম শতক। এই মূর্তির বর্তমান অবস্থান অজানা, সম্ভবত কোনও ব্যক্তিগত সংগ্রহে আছে।
© তমাল দাশগুপ্ত
জয় জয় মা।
তমাল দাশগুপ্ত ফেসবুক পেজ, কুড়ি সেপ্টেম্বর দুহাজার বাইশ
সংযোজন
কিচ্ছু বিলুপ্ত হয়নি। আপনি হরপ্রসাদ শাস্ত্রী পড়ুন। তান্ত্রিক বৌদ্ধধর্ম, বজ্র, বা সহজ, বা কালচক্র, সবই বর্তমানে বাঙালির হিন্দুধর্মে অন্তর্লীনভাবে বহমান। আর বাঙালির প্রাচীন ধর্ম বৌদ্ধ কেন হবে? বুদ্ধ আসার আগে বাঙালি ছিল না? এসব কি আজগুবি কথা! বুদ্ধ নিজের দর্শন নিয়েছেন সাংখ্য থেকে, সেটা তো বুদ্ধের অনেক শত বছর পূর্বে গঙ্গা ও সাগরের মোহনায় আদি বিদ্বান কপিল কর্তৃক সৃষ্ট।