
ডাক ও ডাকিনী: তন্ত্রধর্মের গুরুত্বপূর্ণ দুই স্তম্ভ।
মা কালীর দুদিকে থাকেন ভয়াল কিন্তু তন্ত্রসাধনায় সহায়ক দুই ডাকিনী যোগিনী, তাঁদের ছাড়া মায়ের মূর্তিমণ্ডল অসম্পূর্ণ। এক্ষেত্রে বজ্রযোগিনী ঐতিহ্য স্মৃতি আজও বহমান বাঙালির মধ্যে, মায়ের দুদিকে দুই ডাকিনী যোগিনীর প্রতীকী তাৎপর্যে।
যোগী ও যোগিনী শব্দের আদি ব্যুৎপত্তি হল মায়ের সহচর, অনুচর। মায়ের পুজোর যোগান দেন যিনি। যোগাভ্যাস করেন বলে যোগী, এটি অনেক পরের অর্থ। কিন্তু ডাক ও ডাকিনী শব্দের অর্থ কি?
আমার প্ৰবন্ধ মা কালীর উৎসরণ থেকে উদ্ধৃত করছি।
“ডাকিনী শব্দটা ডাক বা ডঙ্কা থেকেই এসে থাকবে, এটি তিব্বতী প্রভাব নয়, যদিও শশিভূষণ দাশগুপ্ত বলেন যে ডাকিনি এসেছে তিব্বতি ডাক থেকে যার অর্থ জ্ঞান, কিন্তু এমনও হতে পারে যে বাংলায় ডাকিনীবিদ্যা জনপ্রিয় হওয়ার পরে সেটি বাঙালি জ্ঞানীদের দ্বারা বাহিত হয়ে তিব্বতে গেছে এবং এই অর্থ উৎপন্ন হয়েছে। এর একটা কারণ হল এই যে আদিযুগে বাঙালি জ্ঞানীরা সঙ্গে একটি ডঙ্কা রাখতেন, যেটা তাঁরা কৃতকার্য হলে বাজাতেন, সেখান থেকে ডাক অর্থে জ্ঞানী এসে থাকতে পারে। ডাকের সঙ্গে ডঙ্কের সম্পর্কের প্রমাণ হিসেবে সুকুমার সেন লক্ষ্য করেছেন যে মধ্যবঙ্গে সাপের বিষের ওঝাকে ডঙ্ক বলা হয়।”
অর্থাৎ ডাকিনী শব্দের অর্থ জ্ঞানী, যেমন যোগী শব্দের অর্থ যিনি যোগচর্চা করেন। কিন্তু যোগী শব্দের আদি অর্থ যেমন মায়ের পুজোর যোগানদার, তেমনই ডাক বা ডাকিনী শব্দের আদি ব্যুৎপত্তি হল যিনি ডঙ্কা বাজান।
জয় মা ধ্বনি, ডাক ও ডাকিনী
মায়ের ডঙ্কা বাজাতে ভুলিনি!
© তমাল দাশগুপ্ত Tamal Dasgupta
ছবিতে দেখছেন পালযুগের বিখ্যাত জ্ঞানী গুরু (প্রসঙ্গত আজকের গ্রাম্য কথা জানগুরু শব্দটি জ্ঞান-গুরু থেকে এসেছে) নিগু ডাকিনী এবং নারোপা।
জয় ডাক, জয় ডাকিনী। জয় জয় মা।
তমাল দাশগুপ্ত ফেসবুক পেজ, আট সেপ্টেম্বর দুহাজার বাইশ