
জগন্মাতা চার সন্তানসহ চন্দ্রকেতুগড় গঙ্গারিডাই সভ্যতায় পূজিত হতেন। এঁর উপাসনায় আজকের দুর্গাপুজোর সন্ধিপুজোর ন্যায় বলি হত, সেই চিত্র সম্বলিত প্রত্নফলক পাওয়া গেছে। এঁর মাথার পেছনে খোঁপায় দশটি চুলের কাঁটা দশটি ক্ষুদ্রাকৃতি আয়ুধ, সেজন্য এঁকে দশায়ুধা বলি। যদিও এই আয়ুধ সংখ্যা কিছু কিছু মূর্তিতে ভিন্ন দেখা যাচ্ছে, তবে সে তো পরবর্তী যুগের দুর্গাও সর্বদা দশভুজা নন, ভুজের সংখ্যায় ভিন্নতা আছে। মায়ের সঙ্গে চার সন্তানই সাধারণত দেখা যায়, তবে দুই সন্তান বা এক সন্তান/অনুচরসহ মূর্তিও আছে।
এই আদি মাতৃরূপ, মায়ের এই আদি রূপের ধ্যানমন্ত্র কোনও আর্যাবর্ত শাস্ত্রে বা পুরাণে পাওয়া যায় না। কিন্তু ইনি সেযুগে পশ্চিমবঙ্গের উত্তরে বাণগড় থেকে দক্ষিণে চন্দ্রকেতুগড়, মধ্যবঙ্গের মঙ্গলকোট থেকে দক্ষিণবঙ্গের তমলুক, সর্বত্র পূজিত হতেন, প্রচুর মূর্তি পাওয়া গেছে খ্রিষ্টপূর্ব কালের। কিন্তু মোটামুটি দুই হাজার বছর আগে ইনি লুপ্ত হন, তারপর আর এঁর মূর্তি পাওয়া যায় না।
বঙ্কিমের ভাষায়, মা যা ছিলেন।
এই মাতৃপূজায় বাঙালি জাতির সংজ্ঞায়ন হয়।
জয় জয় মা। তোমারই প্রতিমা গড়ি মন্দিরে মন্দিরে।
★★■★★
দুর্গাপুজোর বিবর্তনের ইতিহাস বিষয়ে আমার বই প্রকাশিত হবে শীঘ্রই। প্রত্ন নথি, পাথুরে ইতিহাস, অকাট্য প্রমাণ ছাড়া আমি কথা বলি না।
বিশেষত যারা দুর্গাপুজো সম্পর্কে দূষণ ছড়াচ্ছে, যেমন হুদূরপন্থী মহিষাসুরবাদী, অথবা তাদের উল্টো মেরুতে “সবই বেদে আছে” এবং রামের অকাল বোধনের মধ্যযুগীয় কৃত্তিবাসী গল্পটিকে ইতিহাস ভেবে নেওয়া আর্যাবর্তপন্থী হিন্দুত্ববাদী, যারা বাঙালির আবহমান তন্ত্রধর্মের শেকড় ও ইতিহাসকে বিকৃত করছে, খর্ব করছে, বিভ্রান্তি ছড়িয়ে এই আত্মবিস্মৃত জাতিকে আত্মহত্যার পথে ঠেলে দিচ্ছে, তাদের শাস্তি দেওয়ার জন্যই বইটা লিখছি।
তন্ত্রধর্ম বহু প্রাচীন। দুর্গাপুজো বহু প্রাচীন। বাঙালির গর্বের উত্তরাধিকার এবং সারা পৃথিবীর হিন্দুদের শ্রেষ্ঠ উৎসব এই শারদীয়া দুর্গাপুজো, যার অন্তত বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য হরপ্পা সভ্যতা থেকে একটানা চলে আসছে, সেই প্রমাণ পাওয়া গেছে: শারদীয় মাতৃকা উৎসব, মাতৃকার দশ শীর্ষ/আয়ুধ, ষষ্ঠীর বোধন, সন্ধিপুজোর বলি বিশেষ করে ছাগবলি এবং মহিষমেধ, সর্বোপরি স-সন্তান মাতৃকার উপাসনা।
চন্দ্রকেতুগড় গঙ্গাল সাম্রাজ্যের উত্থান হোক বা গৌড় সাম্রাজ্যের উত্থান, মধ্যযুগ হোক বা আধুনিক যুগ, আমাদের জগন্মাতা জগদকারণ মায়ের পুজো আমাদের বাঙালি মহাজাতিকে অতীতে বারবার শক্তিশালী করেছে, আগামী দিনেও আবার করবে।
সমস্ত তথ্য ও বিশ্লেষণ আমার বইতে থাকছে।
© তমাল দাশগুপ্ত Tamal Dasgupta
ছবিটি পিন্টারেস্ট থেকে। মূর্তির সময়কাল চন্দ্রকেতুগড়, খ্রিষ্টপূর্ব প্রথম-দ্বিতীয় শতক।
তমাল দাশগুপ্ত ফেসবুক পেজ, তেইশ আগস্ট দুহাজার বাইশ