
কেন মায়ের সন্তান গণেশের দেহে হাতির মাথা এল? পৌরাণিক কাহিনী তো একরকম ব্যাখ্যা দেয়, কিন্তু আমি গঙ্গারিডাই সভ্যতার এই ভগ্ন মূর্তিটি দেখে অনুমান করার চেষ্টা করি। অত্যন্ত জনপ্রিয় সব মাতৃকামূর্তি আচমকা দুহাজার বছর আগে একেবারে নির্মূল হলেন, সেই দেখে বুঝি। কোনও আর্যাবর্ত টেক্সট এই তুমুল জনপ্রিয় মাতৃকাদের কোনও মূর্তিকল্প ধ্যানমন্ত্র দেয় না, প্রবল পরাক্রান্ত গঙ্গারিডাই সভ্যতার আদৌ কোনও উল্লেখই করে না, তা দেখে অনুমানের চেষ্টা করি। আজকের গেরুয়া হিন্দুত্ববাদী চাড্ডির স্বজাতিদ্রোহিতা দেখে, নির্লজ্জ অবাঙালি দালালি দেখে বোঝার চেষ্টা করি। সাধারণ ভীতু বাঙালিকে ইসলামের জুজু দেখিয়ে তারপর মারওয়াড়ির রুপিয়ার কাছে বাংলাকে বেচে দেওয়ার প্রয়াস দেখে বোঝার চেষ্টা করি। আবহমান তন্ত্রের পুণ্যভূমি এই বাঙালি মহাজাতির স্বগৃহে বৈদিক বর্ণবাদের আবর্জনা কারা কবে আমদানি করল, তা দেখে বোঝার চেষ্টা করি। যে মায়ের গণ অর্থাৎ সহচরবৃন্দ আছেন হরপ্পা সভ্যতা থেকেই, যে মায়ের কোলে সন্তান আছেন হরপ্পা সভ্যতা থেকেই, সেই মায়ের সন্তান, গণদের নেতা গণেশ সম্পর্কে বৈদিক সাহিত্য কোনও উল্লেখ করে না, তা দেখেও বোঝার চেষ্টা করি।
হে একচক্ষু হরিণ, আপনি কি ভাবছেন? ইসলাম একাই আমাদের শেকড় ধ্বংস করেছে নাকি? হানাদার বখতিয়ার একা নয়, বর্গির ধর্ষণজাত অবৈধ প্রাণীও তো প্রচুর।
না, সন্তানকোলে মাতৃকার উপাসনা মুছে ফেলা যায় নি। গঙ্গাল সভ্যতা মুছে গেলে আবার গৌড় মাথা তুলেছে কয়েক শতাব্দী পরে।
দুই সহস্র বছর আগেকার চন্দ্রকেতুগড় গঙ্গাল সভ্যতা থেকে প্রাপ্ত সন্তানকোলে মাতৃমূর্তি। এই ছবি আগেও পেজে দিয়েছি। এই সন্তানকোলে মাতৃমূর্তি হরপ্পা সভ্যতা থেকে গঙ্গাল সভ্যতা, পালযুগ থেকে বর্তমান বাঙালির মধ্যে নানা রূপে জনপ্রিয়। আজ গণেশ জননী দুর্গা বা গণেশ কোলে দুর্গার মধ্যে সেই ছায়া আছে।
মাতৃধর্ম দীর্ঘজীবী হোক। জয় জয় মা।
© তমাল দাশগুপ্ত
তমাল দাশগুপ্ত ফেসবুক পেজ, পয়লা সেপ্টেম্বর দুহাজার বাইশ।