
এসো মা লক্ষ্মী…
হরপ্পা সভ্যতার পণি থেকে বাঙালি জাতির বণিক: মা লক্ষ্মী বাঙালির আবহমান বাণিজ্যিক ইতিহাসের কেন্দ্রে অবস্থান করেন। এই লক্ষ্মী সমুদ্র থেকে উঠে এসেছেন, কারণ তিনি আন্তর্জাতিক চলাচলের দ্যোতনা বহন করেন। লক্ষ্মীর কুম্ভাভিষেক হয়, কারণ হস্তীবাহিনী বাঙালি সাম্রাজ্যের প্রসারের দ্যোতনা বহন করে। যে কাংলাপক্ষ বলে বেড়ায় যে গজলক্ষ্মী অবাঙালি, তাকে কান ধরে বের করে দিন। শশাঙ্কযুগের মুদ্রায় লক্ষ্মী আছেন, পালযুগের মুদ্রায় লক্ষ্মী আছেন এবং তাঁর কুম্ভাভিষেক হচ্ছে সেখানে অর্থাৎ দুদিকে দুটি হাতি শুঁড় তুলে তাঁকে অভিবাদন করছে এবং বারি সিঞ্চন করছে।
লক্ষ্মীর বাহন প্যাঁচা প্রাচীন বয়াংসি স্মৃতিবাহী, আমাদের সভ্যতার সঙ্গে বলাকা মাতৃকার প্রাচীন সংযোগ ছিল। কিছু চামুণ্ডা মূর্তিতে দেখা যায় মা চামুণ্ডা পেচকবাহিনী, কাজেই লক্ষ্মীর একটি অশান্ত অলক্ষ্মী রূপ আছে, কাজেই যুদ্ধ ও শান্তি, অর্থবর্গ ও মোক্ষবর্গ – সর্বত্র তিনি বিরাজমান। লক্ষ্মী সুপ্রাচীন। তিনি মহালক্ষ্মী হলে সিংহবাহিনী। গৃহলক্ষ্মীরূপে তিনি পেচকবাহিনী। তিনি বণিকলক্ষ্মী ও রাজলক্ষ্মীরূপে হস্তীবাহিনী মহাবিদ্যা কমলা, তিনি কমলে কামিনী।
একবার বিরাজ গো মা, হৃদি কমলাসনে…
কমলা, আপনি চঞ্চল, আপনি নৃত্য করুন, কিন্তু বাঙালিকে আপনার পাদপদ্মের তলায় সর্বদা স্থান দিন। আপনি আমাদের হৃদয়ে সর্বদা বিরাজ করুন, করুণা করুন মা। আমরা বড় দুর্ভাগা, আমরা বাণিজ্য ভুলেছি, আমরা চাকরিসর্বস্ব। আমাদের গঙ্গারিডাই যুগের সেই প্রাচীন সমৃদ্ধির শিখরে আবার পুন:সংস্থাপিত করুন, মা লক্ষ্মী।
আসুন মা লক্ষ্মী, এই হতদরিদ্র জাতির প্রতি কুঁড়েঘরে আপনার করুণার আলো বর্ষিত হোক। প্রত্যেক কোজাগরী রাত্রে আপনি নোয়াখালির ঘাতকদের জন্য সিংহবাহিনী মহালক্ষ্মীরূপে আগমন করুন। আপনি শেকড়বিচ্ছিন্ন আত্মবিস্মৃত ঘরশত্রু অধ্যুষিত এই দুর্ভাগা জাতিকে আজ মাতৃধর্মের শেকড়ের বলে বলীয়ান করুন, মা …
পালযুগের লক্ষ্মী, দ্বাদশ শতক। bonhams ২০১০ সালে মাত্র ৬১০০ ডলারে নিলাম করেছে।
© তমাল দাশগুপ্ত Tamal Dasgupta
জয় জয় মা
তমাল দাশগুপ্ত ফেসবুক পেজ, নয় অক্টোবর দুহাজার বাইশ