
আজ আশ্বিনের কৃষ্ণানবমী। আজ থেকে শারদীয়া দুর্গাপুজোর প্রথম কল্প শুরু হল, অর্থাৎ প্রথমবার দেবীর বোধন হল। একে কৃষ্ণানবম্যাদি কল্প বলে।
★ দুর্গাপুজোর সাতটি কল্প হয়, সহজে বোঝার জন্য বলতে পারেন সাতরকম ক্যালেন্ডার হয় দুর্গাপুজোর। নিজের সাধ্য ও সাধ অনুযায়ী এর মধ্য থেকে যে যেভাবে করতে পারেন মায়ের পুজো, সেটিই গ্রাহ্য হবে।
এর মধ্যে প্রথম কল্প হল কৃষ্ণানবমী-আদি কল্প।
সাতটি কল্প। এর মধ্যে একমাত্র অষ্টমী কল্প বাদ দিলে প্রতিটি কল্পই দেবীপক্ষের মহানবমী তিথিতে শেষ হয়। এই লেখায় আমরা সাতটি কল্প সম্পর্কে অতি সংক্ষেপে জানব।
অনেকে আজকাল বলতে শুরু করেছেন অতি উৎসাহে, যে মহালয়ার সঙ্গে মায়ের পুজোর সম্পর্ক নেই, এটি নিছক পিতৃপুরুষের তর্পণ তিথি। এজন্যই বলে অল্পবিদ্যা ভয়ঙ্করী। মহালয়া তিথি অবশ্যই দুর্গাপুজোর প্রথম কল্পের অংশ ,অর্থাৎ আজকে আশ্বিন মাসের কৃষ্ণা নবমী তিথিতে শুরু হওয়া দুর্গাপুজোর অন্তর্গত, যা দেবীপক্ষের মহানবমী পর্যন্ত একটানা চলবে।
★সবথেকে বেশি জনপ্রিয় অবশ্যই দেবীপক্ষের ষষ্ঠী থেকে মহানবমী অবধি যে কল্প হয়, অর্থাৎ ষষ্ঠ্যাদি কল্প, আমি নিজেও এই কল্প অনুসারে সহজ দুর্গাপুজো করি। এই কল্পে ষষ্ঠীর দিন মায়ের বোধন হয়।
★এছাড়া শুক্লা প্রতিপদ থেকে শুরু করে মহানবমী পর্যন্ত প্রতিপদাদি কল্প হয়। শুক্লা প্রতিপদের দিন বোধন হয় এই কল্পে।
★ দেবীপক্ষের সপ্তমী থেকে মহানবমী অবধি সপ্তম্যাদি কল্প।
★ মহাষ্টমী থেকে মহানবমী অবধি অষ্টম্যাদি কল্প।
★ কেবলমাত্র মহাষ্টমীর দিন মায়ের সম্পূর্ণ পুজো হতে পারে, তাকে অষ্টমীকল্প বলে।
★ কেবলমাত্র মহানবমীর দিনও মায়ের সম্পূর্ণ পুজো হতে পারে। তাকে নবমীকল্প বলে।
প্রসঙ্গত রামের অকাল বোধনের কাহিনীটি অনৈতিহাসিক, যা বাল্মীকি রামায়ণে নেই। এই কাহিনী কৃত্তিবাস জনপ্রিয় করেন, কৃত্তিবাসের আগে দুয়েকটি পুরাণে আছে, মূলত রামকে মাতৃকা উপাসক বাংলায় জনপ্রিয় করার ‘মহৎ’ উদ্দেশ্যে এই কাহিনী নির্মিত। মা দুর্গার শারদীয়া বোধন ও পুজো পাঁচ সহস্র বছর আগেকার হরপ্পা সভ্যতা থেকে চলে আসছে, বৈদিক যুগে ঊষার বোধন হত শরৎ কালে। ঊষাকে দশভুজা বলা হয়েছে একটি সূক্তে। চন্দ্রকেতুগড় গঙ্গারিডাই সভ্যতায় দুই হাজার বছর আগে প্ৰচলিত থাকার প্রত্ন প্রমাণ মিলেছে, এবং ষষ্ঠ শতকে জয়নাগ ও শশাঙ্ক যুগে গৌড়ের উত্থানের সময় লিপিবদ্ধ শ্রী শ্রী চণ্ডী গ্রন্থেও শারদীয়া দুর্গাপুজোর উল্লেখ আছে, এই সবগুলিই রামের অকাল বোধনের কাহিনী নির্মাণের অনেক শত বছর আগেকার কথা।
শরৎকালের দুর্গাপুজোই আসলে বাসন্তী দুর্গাপুজোর তুলনায় অনেক বেশি প্রাচীন। বলা বাহুল্য এই শারদীয়া মাতৃপুজোই বেশি জনপ্রিয়।
© তমাল দাশগুপ্ত Tamal Dasgupta
দেখছেন পালযুগের অপরূপ দুর্গামূর্তি, সময়কাল দশম শতক। ছবিটি আগেও পেজে দিয়েছি।
জয় জয় মা।
তমাল দাশগুপ্ত ফেসবুক পেজ, উনিশ সেপ্টেম্বর দুহাজার বাইশ