এই বছরে (২০২২ সালে) বাঙালির দুর্গাপূজা ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ স্বীকৃতি পাওয়ায় দুর্গাপূজা নিয়ে কলকাতাস্থিত ভারতীয় জাদুঘর মা দুর্গাকে নিয়ে একটা প্রদর্শনীর আয়োজন করে।
প্রদর্শনের উদ্দেশ্য, মা দুর্গাকে নিয়ে ভারতীয় জাদুঘরের সংগ্রহে যা যা সামগ্রী আছে, যেগুলো সর্বসমক্ষে প্রদর্শিত হয় না, আলমারিতে তালাবদ্ধ অবস্থায় পরে থাকে, সেগুলোকেই প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা। এই প্রদর্শনী ২৪শে সেপ্টেম্বর, ২০২২ শুরু হয়েছিল। চলবে ২৩শে অক্টোবর ২০২২ পর্যন্ত।
বাংলার দুর্গাপূজা ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ স্বীকৃতি পাবার অনেক আগে থেকেই (২০১৯ সালেরও আগে থেকে) সপ্তডিঙা আন্দোলন বাঙালির সচেতনতা বৃদ্ধিতে একটি কথা সর্বসমক্ষে বারবার বলে আসছিল। সেটা হল, বাঙালির দুর্গাপূজা চার হাজার বছরের পুরানো ও হরপ্পা সভ্যতার সময় থেকে চলে আসছে। ভারতীয় জাদুঘরের এই মা দুর্গাকে নিয়ে প্রদর্শনী সেটারই স্বীকৃতি দিল। হরপ্পা সভ্যতার সময়ের মানুষের মাতৃকা উপাসনার মাতৃমূর্তি এই প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছে। অতএব, আমাদের দুর্গাপূজা (মাতৃকাপূজা) যে চার হাজার বছরের পুরানো হরপ্পা সভ্যতার সময় থেকেই হয়ে আসছে, সে বিষয়ে আর কোনো সন্দেহ রইল না৷
শুধু তাই নয়। মা দুর্গা যে প্রথমে “মহিষমর্দিনী” ছিল, মানে আগে অসুরের জায়গায় শুধু মহিষ ছিল এবং কালের বিবর্তনে (anthropomorphic বিবর্তন) ধীরে ধীরে মহিষের জায়গায় অসুর চলে এসে আমাদের মা “মহিষাসুরমর্দিনী” হয়েছেন এবং সেটা কোন সময়কাল থেকে হয়েছে সেই ব্যাপারেও পরিস্কার ইঙ্গিত দিয়ে গেছে এই প্রদর্শনী। অর্থাৎ সপ্তডিঙা আন্দোলনের আরো একটি বক্তব্য স্বীকৃতি পেল এই প্রদর্শনীর মাধ্যমে। সেটা হল, মা দুর্গা “মহিষমর্দিনী” ছিলেন প্রথমে। অসুরের ধারণা তার বহু শতাব্দী পরে এসেছে৷
প্রদর্শনীটির উপস্থাপনাও যে খুব উচ্চমানের গবেষনালব্ধ, সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। প্রদর্শনীতে শুরুর দিকে একদম হরপ্পা যুগ থেকে শুরু করে আদি যুগ, তারপর মধ্যযুগীয় মাতৃমূর্তি, তারপর আধুনিক যুগের মাতৃমূর্তি হয়ে বর্তমানের মাতৃমূর্তিতে এসে শেষ হয়েছে। মূর্তিগুলি এইভাবে পরপর সাজিয়ে রাখা আছে। প্রতিটি মুর্তির নীচে সেটা কোন সময়কার কিসের মুর্তি পরিস্কার করে লেখা আছে৷
প্রদর্শনীটির সেই উপস্থাপনাই আমি ছবির মাধ্যমে তুলে দিলাম সবার কাছে। চারিদিকে মায়ের নামে জয়ধ্বনি হোক। জয় মা দুর্গা৷
আর একটি বিষয় এখানে পরিস্কার করে দিই। আমি লক্ষ্য করেছি, সাল, তারিখ, শতক, সময়ের হিসাবটা সবাই গুলিয়ে ফেলেন। আগুপিছু বুঝতে পারেন না৷
ছবিতে উল্লেখিত মুর্তিগুলোতে সময়ের হিসাবটা এইভাবে লেখা “Century CE” এটার মানে পড়বেন Century Christian Era বা Century Common Era. মানে খ্রীষ্টজন্মের পরবর্তী শতক। একই ভাবে BCE মানে Before Common Era, মানে খ্রীস্টপূর্ব যুগের ১০০ বছরের মধ্যেকার সময়৷
সাল নির্দিষ্ট করা থাকলে খ্রীষ্টাব্দ উল্লেখ হয়। যেমন আজকের দিনটা ২০২২ ‘খ্রীষ্টাব্দ’। কিন্তু সাল নির্দিষ্ট ভাবে উল্লেখ করা না গেলে একশ বছরের মধ্যেকার একটা সময় ধরে নেওয়া হয়। এভাবে ধরলে বুঝবেন, 1st Century CE মানে 1st Century Common Era, মানে প্রথম খ্রীষ্টীয় শতক। মানে শূন্য থেকে ১০০ খ্রীস্টাব্দের মধ্যেকার সময়টা। একইভাবে 4th Century CE মানে চতুর্থ খ্রীষ্টীয় শতক, মানে ৩০০ খ্রীষ্টাব্দ থেকে ৪০০ খ্রীষ্টাব্দের মধ্যেকার সময়। 12th Century CE মানে খ্রীষ্টীয় দ্বাদশ শতক, মানে ১১০০ থেকে ১২০০ খ্রীষ্টাব্দর মধ্যেকার সময়। 19th Century CE মানে খ্রীষ্টীয় উনবিংশ (উনিশ) শতক, মানে ১৮০০ থেকে ১৯০০ খ্রীষ্টাব্দের মধ্যেকার সময়টা। আশা করি বোঝাতে পারলাম।
চেষ্টা করেছি মাতৃমূর্তিগুলোর সাথেই তার নীচে লেখা মূর্তিগুলোর বর্ণনা টা একই ফ্রেমে নেবার। ছোটো ছোটো মুর্তিগুলোর ক্ষেত্রে সেটা সম্ভব হলেও বড় মুর্তিগুলোর ছবি নেবার সময় সেটা একই ফ্রেমে তোলা সম্ভব হয়নি। সেক্ষেত্রে আমি আলাদা করে বর্ণনা করা অংশটির ছবি তুলেছি। এই ফটো এলবামে কোনো মাতৃমূর্তির সাথে তার বর্ণনা দেখতে না পেলে তার পরের ছবিটিতেই সেই বর্ণনার ছবিটি জুড়ে দিয়েছি। আশা করি এতে আপনাদের কোনো অসুবিধা হবে না মুর্তিগুলো চিনতে৷
এবার দেখা যাক ছবি গুলো৷
























































