
শৈলপুত্রী
মায়ের হাসি শরৎ শশী
ভুবন ভোলে অসুর ভয়ে,
ত্রিশূল ধারী অভয়দায়ী
পদ্মধৃতা এসো কাছে।
হৈমবতি মাগো তুমি
ধরাধাম কর মা ধন্যা
শৈলপুত্রী আদ্যাশক্তি
মাগো ঝরাও প্রেমের বন্যা।
বৃষভ বাহনে এসো
শরৎতের অলকানন্দা
জীবের তরে এসো মাগো
করি মা তোমার বন্দনা।
চরণে ঠাঁই দিও আমায়
যেন জনম ভরে থাকি
মনের যত ক্লেশিত বিষয়
দিলাম চোখের জলে ভাসি।
ব্রহ্মচারিনী
কে গো অপরূপা যোগিনী দাঁড়ালে সমুখের পানে?
তেজস্বী অনুপম সুন্দর ষোড়শী কুমারী এসে!
এতদিন পরে মনে হল “কোথায় যে লুকিয়ে ছিলে?”
তোমার করুণায় আজ মন মন্দিরে অরুণ উঠিল জেগে!
হৃদয়ের কলুষ নাশ হলো আজ তোমার চরণ ধরে
হৃদাসনে বসায়ে মা করব পূজা জনম ভরে।
তুমি এসে ধরাতলে অঙ্কুরিত কর জ্ঞানের বীজ
ব্রহ্মচারিনী বিরাজে মাগো জাগিয়ে তুলেছ নিজ।
ব্রহ্ম ধ্যানে মগ্ন হয়ে জগৎ কর ধন্যা___ মা শুদ্ধা
সপ্তস্বর্গ মর্ত্যপাতাল কোটি সূর্য তোর নখের ছায়া।
বাম হস্তে কমণ্ডুলু ডানে তেজপুঞ্জ জপমালা
শ্বেত বস্ত্রে তপ মাঝে জ্ঞান আহরণে সমাহিতা।
ভবতারিণী মঙ্গলময়ী মা ঘুচাও জঠোর যন্ত্রণা
চিনেছি চিনেছি আজ মাগো বুঝেছি তোমার মন্ত্রণা।
মোক্ষময়ী শ্রীজননী মাগো ভীতজনতারিণী
অজ্ঞান সংহারী জ্ঞানাঞ্জনময়ী ব্রহ্মচারিনী।
চন্দ্রঘন্টা
মহিষাসুরমর্দিনী মাগো চন্দ্রঘন্টা
সুশ্রী রূপিনী মনোহর মা অর্ধ্বচন্দ্রা।
সিংহ বাহনে বেড়াও ছুটে অপরাজিতা
বিশ্ব তোমার রূপের মায়া সুবর্ণ মণ্ডিতা।
দশভূজা অসুরনাশিনী শিবজায়া
মহাশক্তি আদ্যাশক্তি জগৎ কর রক্ষা।
কুষ্মাণ্ডা
দূর কর মা ত্রিতাপ জ্বালা
পড়ছি ফাঁদে আর বাঁচি না।
ত্রি- ভুবন করলে সৃষ্টি
আমার দিকে কই মা দৃষ্টি।
ব্রহ্মাণ্ড তোর উদর পূর্তি
কুষ্মাণ্ড তাই নাম নিলি।
সিংহপৃষ্ঠে সৌম্যমূর্তি
পালনকর্তা তুমি জানি।
তুই ছাড়া মা সর্বংসহা
ডেকে ডেকে হলাম সারা।
স্কন্দমাতা
কার্তিকেয় জননী তুমি ভবতারিণী
জগৎজন পুজিতা মাগো অসুরনাশিনী।
শরৎ শুভ্র আকাশ আলো করে এসো তুমি
তোমার রাঙা চরণ স্পর্শে ধন্য হোক ধরনী।
কেঁদে কেঁদে বেড়ায় ডেকে অভাগিনীর সূতা
মেঘ জমে বৃষ্টি পড়ে দিয়ে যায় যত ব্যাথা।
সন্তান কোলে নিয়ে আদর কর স্কন্দমাতা
ধরাধামে তুমি ছাড়া কেউ নাই রক্ষাকর্তা।
কাত্যায়নী
প্রণাম জানাই মা কাত্যায়নী
এসো এসো হৃদাসনে
প্রদীপ শিখা জ্বালিয়ে রাখি
ভক্তে ডাকে বিনয় করে।
কাল রাতে দমকা হাওয়া লেগে
আকাশ যখন গেল ভেঙে
কোথায় ছিল তোর মাতৃস্নেহ
যখন বুকের পাঁজর ভাঙে।
শূন্য করে দিয়েছি সবে ভবে
আমার যত স্বার্থ ঠুলি
নিজের বলতে নাইরে সংসারে
তুই ছাড়া সব মিছামিছি।
আমি যে রসিক নবীন মাঝি
তোমার বড়ই দুষ্ট ছেলে
আজ বাইতে ছিলাম ভগ্নতরী
ভুবন গাঁয়ের শুষ্ক পথে।
মা হাত বাড়িয়ে নাওনা কোলে
জীর্ণ যা সব যাক না দূরে
আশীষ তোমার অভয়বাণীতে
মাভৈঃ বলে উঠব জেগে।
ওই রাঙা মুখের মধুর হাসি
ভুবন আলো করে আসে
অসুর দেখে রে ধরিস অসি
ভক্তজনে ভক্তি করে।
তোমার মহিমা বুঝতে নারি
তন্ত্র-মন্ত্র ধার ধারি না,
চোখের জলে ভিজিয়ে রাখি
তোর রাঙা চরণ দুটি মা।
কালরাত্রি
রণডঙ্কা বাজে বাজে রে আজ কালরাত্রি সেজেছে
পদতলে আগুন জ্বলে থমকি থমকি নাচে।
কাঁপছে অসুরের দল ভয়ঙ্করী কালরাত্রি মেতেছে
স্বর্গ-মর্ত্য-পাতাল কাঁপে এমন মেয়ে কেউ দেখেছে?
বুক করে থমথম আসে অভয়া বিজয়া মহামায়া
অট্টহাসে মেদিনী ডরে নাশ করেছে কালছায়া।
মহাগৌরী
গৌর বরণ অপরূপা মহাগৌরী
শিবের মথায় জল ঢেলে হলে শিবানী।
জীবের লাগি আসলে মাগো মোক্ষময়ী
হৈমবতি অষ্টমী মা মহাগৌরী।
পাপী মন আমার বলে মা গৌরী গৌরী
দূর হোক যত আমার মনের স্বার্থ ঠুলি।
তোমার কৃপাবলে মায়ার ঘোর যাক কেটে
হৃদয় মাঝে তুই উঠিস মাগো জেগে!
মায়ের পূজা করব আমি নয়ন জলে
মা রয়েছে সর্বক্ষণে আমার সাথে।
সিদ্ধিদাত্রী
জাগো জাগো মা সাধন সমরে শিবজায়া
এসো ব্রহ্মময়ী সিদ্ধিদাত্রী মহামায়া।
তুমি ত্রিলোকেশ্বর জগৎ কর মাগো ধন্যা
শ্রীজননী তুমি শঙ্করী অভয়দাতা।
বেদ-বেদান্ত তালাশে তোমাকে যায় না পাওয়া
কোথা সৃষ্টি কোথা আদি, লয় কেউ তা জানেনা।
তুমি যারে দয়া করে দেখা দাও বিজয়া
তাঁর মতন ভাগ্যবান এ জগতে কেউ হবেনা।
অন্তরে অন্তরে রেখে ডাকি মনে মনে
দুঃখ ঘুচাও সিদ্ধিদাত্রী এসেছি তোর দ্বারে।