রাধাতত্ত্বের এক ঝলক

মেঘৈর্মেদুরমম্বরম্ বনভূঃ শ্যামাস্তমালদ্রুমৈঃ
নক্তং ভীরুরয়ং ত্বমেব ত্বদিমং রাধে গৃহং প্রাপয়
ইত্থং নন্দনিদেশতশ্চলিতং প্রত্যধ্বকুঞ্জদ্রুমম্
রাধামাধবোর্জয়ন্তি যমুনাকুলেরহ কেলয়।।

আকাশ মেঘাচ্ছন্ন। বনভূমি সেই অন্ধকারের পটভূমিতে তমালগাছের সমারোহে আশ্চর্য শ্যামলিমা ধারণ করেছে। এই ঘোর রাতে, হে রাধে! এই ভীরুকে তুমি গৃহে পৌঁছে দাও। নন্দের এই অনুরোধে যে রাধা যে কৃষ্ণকে কোলে নিয়ে যমুনাতীরের কুঞ্জবনের পথে অগ্রসর হয়েছিলেন; সেই রাধামাধবের অপূর্ব কেলিলীলা জয়যুক্ত হোক।

( কবিপতি জয়দেবের গীতগোবিন্দ কাব্যের প্রথম শ্লোক)

বৈষ্ণব ধর্মে রাধা কে? তার উত্তর এক কথায় বলে দেয় এই শ্লোক। তিনি তন্ত্রাশ্রিত ভাগবতধর্মের মধ্যে নিহিত মাতৃকার আনন্দময়ী বিগ্রহ। তিনিই সাঙ্খ্যের প্রকৃতি। তাঁর সঞ্চালনেই নির্গুণ পুরুষতত্ত্ব রসরাজ পর্যায়ে উন্নীত। ধ্যানে ও স্তবে তিনি জগতপ্রসূ অর্থাত বিশ্বপ্রসবিনী। তাই সুপ্রাচীন কাল থেকে সন্তানকোলে মাতৃকার যে রূপ আমাদের সংস্কৃতিতে বহমান; তাইই প্রকাশ পেয়েছে তাঁর মধ্যে; গীতগোবিন্দের এই শ্লোকে।
তিনি বৃন্দাবনের রাইরাজা।
আজ তাঁর উপাসনার লগ্ন। ঊষা রূপে শরতে মহিষমর্দিনী দুর্গার বোধনের আগে পর্যন্ত বর্ষার মধ্যলগ্ন থেকে শরতের সূচনাকালে বারবার মাতৃকা আবির্ভূত হন আমাদের চেতনায়। কখনও মনসা রূপে। কখনও একানংশা যোগমায়া রূপে। কখনও রাধাশক্তি রূপে।

তিনি বৈষ্ণবধর্মের আধারস্বরূপা। তাই আমাদের পদাবলীতে যখন
“শুক বলে আমার কৃষ্ণের চূড়া বামে হেলে”
তখন
“সারি বলে আমার রাধার চরণ পাবে বলে”

রক্তিম মুখার্জ্জী

প্রথম ছবিটি গঙ্গারিডির সন্তানকোলে মাতৃকার। গীতগোবিন্দের প্রথম শ্লোকের তত্ত্বই এখানেও ব্যক্ত হয়েছে।
দ্বিতীয় ছবিটি হোয়সলের সেনযুগের রাধামাধব বিগ্রহের। মা কালীর অপূর্ব মূর্তির পাশেই।

ছবি ও তথ্য কৃতজ্ঞতা তমাল দাশগুপ্ত মহাশয়।

মন্তব্য করুন

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  পরিবর্তন )

Twitter picture

You are commenting using your Twitter account. Log Out /  পরিবর্তন )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  পরিবর্তন )

Connecting to %s