নাগপঞ্চমী তিথির মাহাত্ম্য – তমাল দাশগুপ্ত

নাগপঞ্চমী তিথির শুভেচ্ছা জানাই।

সর্প উপাসনা উপমহাদেশের ধর্মাচরণে হরপ্পা সভ্যতা বা তারও আগে থেকে প্রচলিত। হরপ্পা সভ্যতায় সর্প মাতৃকার প্রত্ন চিত্র পাওয়া গেছে। যুগে যুগে আমাদের তন্ত্রাশ্রয়ী সভ্যতায় সর্পমাতৃকা পূজিত হয়েছেন, তন্ত্রের কুণ্ডলিনী শক্তি স্বয়ং সর্পরূপে বিরাজমান। খ্রিষ্টপূর্ব যুগে “নিদ্দেস” নামে একটি পালি গ্রন্থে সর্প উপাসনার কথা জানা যায়। চন্দ্রকেতুগড় গঙ্গাল সভ্যতায় সর্পমাতৃকার মূর্তি পাওয়া গেছে খ্রিষ্টপূর্ব সময়ে। পালযুগে অসম্ভব জনপ্রিয় ছিলেন মা মনসা, এই সময়েই কানা হরিদত্ত কর্তৃক মনসা কাব্য লিখিত হয়। সেনযুগে মা মনসা সমান জনপ্রিয়। মধ্যযুগে অনেকগুলি মনসামঙ্গল তাঁর জনপ্রিয়তার সাক্ষ্য দেয়। আজও মা মনসা পূজিত হচ্ছেন আমাদের মধ্যে মহা সমারোহে। এই শ্রাবণ মাস বিশেষ করে মা মনসারই পুজোর সময়।

পালযুগের মনসা মূর্তি দেখছেন। বর্তমান অবস্থান আর্ট ইনস্টিটিউট অভ শিকাগো।

© তমাল দাশগুপ্ত Tamal Dasgupta

জয় মা মনসা। জয় জয় মা।

সংযোজন এক

পালযুগে সবথেকে বেশি জনপ্রিয় মাতৃকা ছিলেন মনসা, সমস্ত মূর্তির মধ্যে তাঁর মূর্তি বেশি।

তিনি পালযুগের প্রধান উপাস্য মা তারার এক জনপ্রিয় রূপ। জাঙ্গুলীতারা।

তিনি দিগ্বিজয়ী পালরাষ্ট্রের বিভিন্ন যোদ্ধা জাতির উপাস্য মাতৃকা ছিলেন, যেমন পালরাষ্ট্রে বাউড়ি কাস্টের রেজিমেন্ট ছিল, এমনটা সঙ্গত কারণেই সিদ্ধান্ত করা যায়।

পালরা সর্বোপরি তন্ত্রাশ্রয়ী। তন্ত্রের কুণ্ডলিনী শক্তির ধ্যান সর্বদা সর্পমাতৃকা রূপেই হয়।

অতএব তান্ত্রিক বৌদ্ধবিহারে মা মনসার মূর্তি না পাওয়ার কোনও কারণ নেই।

সংযোজন দুই

মা মনসার পুজোয় বলি প্রদানের শাস্ত্রীয় বিধি পাওয়া যায়। পঞ্চমী তিথিতে মা মনসার উদ্দেশ্যে বলি প্রদান করে মায়ের পুজো করার নির্দেশ পাওয়া যায় ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণে প্রকৃতিখণ্ডে।

পঞ্চম্যাং মনসাখ্যায়‍্যাং দেব‍্যৈ দদ্যাচ্চ যো বলিম্।
ধনবান্ পুত্রবাংশ্চৈব কীর্তিমান্ স ভবেদ্ ধ্রুবম্।।

তন্ত্রমতে সমস্ত মাতৃকা উপাসনায় বলি দেওয়া যায়, এমনকি যেগুলোয় সচরাচর বলি হয় না, সেখানেও বলি দিয়ে মায়ের পুজো করা যায়। আর মনসা পুজোয় তো বলি দেওয়ার সরাসরি বিধান রয়েছে।

তমাল দাশগুপ্ত ফেসবুক পেজ, দুই আগস্ট দুহাজার বাইশ।

মন্তব্য করুন

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  পরিবর্তন )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  পরিবর্তন )

Connecting to %s