সমুদ্রগুপ্তের মোহর, রোমান পানপাত্র ও হারানো এক রাজধানীড. বিশ্বজিৎ রায়

কাজটা শুরু হয়েছিল মরালি নদীর হারিয়ে যাওয়া নদীখাতের বদলে যাওয়া রূপকে দেখার এক প্রকল্পের মধ্যে দিয়ে । তখনই নজরে এসেছিল নদীর পাড়ে, জঙ্গলের মধ্যে নিঃশব্দে দাড়িয়ে আছে উঁচু উঁচু সব মাটির স্তুপ।

অবাক হবার মত অনেক কিছুই যে রয়েছে তা বুঝতে পারলাম লাগোয়া মাটির পাঁচিল এর দিকে তাকিয়ে। জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে চলে গেছে মাটির চওড়া পাঁচিল । ক্ষয়ে গেছে বহু জায়গায় তবু কিছু জায়গায় আজও রয়েছে চিহ্ন ।প্রাচীর এর মাটি আর পাশের চাষজমির মাটির মধ্যে রঙে-বুননে পার্থক্য মেলা । আর পাঁচিল চওড়া কতটা? চমকটা সেখানেই। আজকের অবশেষ দেখিয়ে দেয় একদিন প্রায় পঞ্চাশ মিটার চওড়া ছিল এই প্রাচীর! পরে জেনেছি এরই নাম সীমান্ত প্রাচীর ( Rampart wall ), গড় রক্ষায় এর ওপর দিয়ে জোড়ায় জোড়ায় সশস্ত্র ঘোড়সওয়াররা ছুটে বেড়াতেন। জেনেছি একই ধরনের নগর নকশা আবিষ্কৃত হয়েছে চন্দ্র্কেতুগড়, বাণগড় সহ প্রাচীন নগর পরিকল্পনাগুলিতে।

ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো তখন থেকেই চালু। অনেক বছর কেটেছে, বাংলার অন্যতম প্রধান প্রত্নতাত্ত্বিক ক্ষেত্র এই দেবলগড় কে জানতে চাওয়া হয়েছে প্রধান আকর্ষণ। ধীরে ধীরে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে শুধু গাংনাপুর থানার দেবগ্রাম পঞ্চায়েত এর জঙ্গলেই নয়, সমসাময়িক সভ্যতা সংস্কৃতি র বিকাশ ঘটেছিল বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে । অনুসন্ধান ছড়িয়ে পড়েছে পাশের রানাঘাট থানার আনুলিয়া-গুড়পাড়া-বৃদ্ধকোল অঞ্চলেও।

পাওয়া গিয়েছে হরেক রকমের অজস্র মৃৎপাত্র। এগুলির কোনটি টকটকে লাল রঙের, কোনটির একদিক কালো তো অপর দিক লাল, কোনটি গাঢ় কালো রঙের প্রলেপযুক্ত তো আবার কোনটি মসৃণ এক আস্তরণযুক্ত । আকার আয়তন গড়নে নকশায় প্রত্যেকেই অপূর্ব সুন্দর। শুধু কি মাটির পাত্র, পাওয়া গিয়েছে পাথরের পাত্র, লকেট- দুল সহ প্রচুর terracotta beads, নকশা করা নানা আয়তনের অজস্র Sling Balls, অপূর্ব মীণপুচ্ছ জলপ্রদীপ। পাওয়া গিয়েছে ধাতব মুদ্রা, ধাতব মুচলিন্দ বুদ্ধমূর্তি।
পুকুরের তলায়, বহু গভীর থেকে পাওয়া গিয়েছে অসাধারণ কারুকার্য খচিত স্ট্যাকোর বিশাল বিশাল খন্ড। গ্রামগুলি থেকে পাওয়া গিয়েছে অসাধারণ নকশাযুক্ত মাকড়া পাথরের ব্লক । পাওয়া গিয়েছে আড়াই ফুট লম্বা থেকে শুরু করে ছয় ইঞ্চি মাপের বিভিন্ন মাপের ও কালপর্বের প্রচুর পরিমাণে ইঁটের নমুনা । ঠিক বাণগড়ের মতোই দেবলগড় প্রত্নক্ষেত্র এর ইঁটে বৃক্ষ, লতাপাতা সহ নানা অলঙ্করণ পাওয়া গিয়েছে ।

কাজের পরিধি বেড়েছে । সমগ্র দেবলগড় আনুলিয়া অঞ্চলে ভূ-প্রত্নতত্ত্ব এর কাজকে প্রধান পাঁচ ভাগে বিভক্ত করে এগিয়েছি।
1) প্রাচীন নদীখাত গুলির অতীত বিস্তার ও ঢাল পরিমাপ করে paleo- channel morphology বিশ্লেষণ।

2 ) সমস্ত পুরাবস্তু গুলিকে বিভিন্ন বিভাগে বিভক্ত করা, তাদের নথিবদ্ধ করণ এবং সংরক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা ।

3) একটি গ্রামীণ মিউজিয়াম গঠন করে পুরাবস্তু গুলিকে প্রদর্শন করার ব্যবস্থা করা যাতে বিশেষজ্ঞ সহ সাধারণ মানুষের নজর পরে।

4) উপযুক্ত প্রতিষ্ঠান ও বিশেষজ্ঞ দের সাথে যোগাযোগ করা, উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করার মধ্যে দিয়ে অবহেলিত ও বিস্মৃত এই পুরাক্ষেত্রের উৎখনন এর আয়োজন ।

5) গণচেতনার প্রসার, আশপাশের এলাকার মানুষ দের সংগঠিত করে সমগ্র কর্মকান্ড পরিচালনা কে একটি আন্দোলনে পরিণত করা।

দিনের পর দিন, মাসের পর মাস ঘুরেছি একা। জঙ্গলে, চাষের ক্ষেতে, নদীর পাড়ে ।বড় রহস্যময়তা এখানকার পলাশ – জারুল – হিজলের অরণ্য আর মাটির উচুঁ উচুঁ ঢিবি গুলিতে। জঙ্গলে ঢাকা সুউচ্চ ‘ওয়াচ টাওয়ার’ আর গভীর পরিখা দিয়ে ঘেরা গড়ের ভিতরের পুকুর , বিরাট প্রাসাদের অবশেষ মিলেমিশে এক রহস্যময় আলোছায়া । সেই শুরু । এরপর থেকে অজস্রবার গিয়েছি গাংনাপুর থানার দেবগ্রাম ও রানাঘাট থানা র আনুলিয়া পঞ্চায়েত এর রহস্যময় প্রত্নক্ষেত্রে । দেখেছি পায়ের তলায় নিতান্ত অনাদরে গুঁড়িয়ে যাচ্ছে হাজার বছরের প্রাচীন মৃৎপাত্র , অলঙ্কার , প্রাসাদের অবশেষ । দশকের পর দশক ধরে এখনকার চাষীরা চাষের সময় , গৃহস্থরা বাড়ি ঘর তৈরির সময় মাটির তলা থেকে পেয়ে আসছেন অজস্র প্রত্নতাত্বিক উপাদান আর ভেঙ্গে ফেলেছেন অত্যন্ত অবহেলায়।

অথচ দিন গেছে ততই আনুলিয়া তার গুপ্তধন তুলে ধরে আরও বেশি করে চমক নিয়ে হাজির হয়েছে । প্রাচীন অনল গ্রাম, অধুনা আনুলিয়া আজ প্রত্নতত্ত্বের আলোকে গোটা বাংলার অন্যতম প্রধান আকর্ষণ কেন্দ্রে। বিগত কয়েক বছর ধরে চালানো নিবিড় ক্ষেত্রসমীক্ষার ফলে সংগ্রহ করা সম্ভব হয়েছে বিপুল তথ্য ।

আনুলিয়া- নন্দীঘাট- বৃদ্ধকোল-গুড়পাড়া অঞ্চল জুড়েই করা হয়েছে ক্ষেত্র অনুসন্ধান ।এই অনুসন্ধান কে প্রথম থেকেই চালনা করা হয়েছে দুটি বিভাগে বিভক্ত করে । প্রথম বিভাগে অনুসন্ধান করা হয়েছে প্রাচীন নদীখাত গুলির । বিশ্লেষণ করা হয়েছে প্রাচীন জলনিগম প্রণালীর। এ কাজে আধুনিক উপগ্রহ চিত্রের সাহায্যে প্রাচীন নদীখাত গুলির অবস্থান , পরিত্যক্ত খাতগুলির অবস্থান, নদীখাত গুলির অতীত বিস্তার ও ঢাল পরিমাপ, সেগুলোর ভৌগলিক বিন্যাস চিন্হিত করা হয়েছে ।
অন্যদিকে, পুরাতাত্ত্বিক প্রমাণ হিসেবে প্রাপ্ত অজস্র নিদর্শন সমূহের অনুসন্ধান, প্রাপ্তি, সংরক্ষণের বিষয় টিকে পৃথক বিভাগের অন্তর্ভুক্ত করে ক্ষেত্র সমীক্ষা এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে ।

আনুলিয়া অঞ্চলে প্রাপ্ত পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শন সমূহের মধ্যে উল্খেযোগ্য হল আদি ঐতিহাসিক কালের সুন্দর নকশাযুক্ত একাধিক মৃৎপাত্র, স্থাপত্য অবশেষ রূপে ছোট্ট ইঁটের (6″/6″1″) তৈরী দেওয়াল, ধূসর ও কালচে ধূসর রঙের অজস্র মৃৎপাত্র, বাটুল ( designed Sling balls ), মাছের লেজের নকশার লাল রঙের মৃৎপাত্র, চিরায়ত মূর্তি প্রভৃতি । আনুলিয়া অঞ্চলে বহু বছর আগে থেকেই পাওয়া গিয়েছে পাল-সেন যুগের কালো প্রস্তর বিষ্ণু মূর্তি, লক্ষণ সেনের তাম্রশাসন, মহাযানী সম্প্রদায়ের উপাস্য কালো পাথরের পদ্ম পাপড়ি চিত্রিত ধমচক্র । পাওয়া গিয়েছে অ্যাম্ফোরা। যা উন্নত নৌবাণিজ্যের উল্খেযোগ্য নিদর্শন । যা হবহু মিলে যায় চন্দ্রকেতুগড়ে প্রাপ্ত নমুনার সাথে । পাওয়া গিয়েছে সমুদ্রগুপ্তের মোহর ।

আজকে একথা প্রমাণিত যে, একাদশ-দ্বাদশ শতকে গঙ্গানদী প্রবহমান ছিল গুড়পাড়া-বৃদ্ধকোল অঞ্চলেরই মধ্যে দিয়ে । তারও বহু শতাব্দী আগে থেকেই এই বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে গড়ে উঠেছিল এক উন্নত সভ্যতার রূপরেখা, যা পাল-সেন যুগে উন্নতির শিখরে পৌছায়।

দেবলগড়-আনুলিয়া সমকালীন সভ্যতার ধাত্রী ভূমি। এক বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে গড়ে উঠেছিল এক উন্নত সভ্যতা সংস্কৃতির পর্যায়ক্রম যেখানে মরালী নদীর পাড়ে গড়ে উঠেছিল দেবলগড়, অন্যদিকে গঙ্গানদীর ধারে বিবর্তিত হয়েছিল অতীতের অনলগ্রাম । আজও এই দুটি কেন্দ্রের মধ্যে দূরত্ব কমপক্ষে 20 কি. মি। এ থেকেই বোঝা যায় কত বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে বিকশিত হয়ে উঠেছিল বহু শতাব্দী ধরে চলা সভ্যতা সংস্কৃতি এবং এক্ষেত্রে সভ্যতার বিকাশ কেন্দ্র ( cultural hearth) রুপে অবশ্যই তৎকালীন সমাজ-ধর্ম-অর্থনীতিতে উজ্জ্বল ভূমিকা পালন করেছিল ।

সাম্প্রতিক গবেষণা ও ক্ষেত্র সমীক্ষা এগিয়ে চলার সাথে সাথে আবিষ্কৃত বহু পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শন এই দুই কেন্দ্রের মধ্যে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগকে প্রমাণ করে । এই দুই কেন্দ্রেই পাওয়া গিয়েছে এমন বহু পুরাবস্তু যা আকার আকৃতি ও গঠন বৈশিষ্ট্যে হুবহু মিলে যায় (উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় লাল রঙের একপ্রকার বিশেষ মৃৎপাত্র দুটি স্থানেই বহু পাওয়া গিয়েছে ।এই প্রকার মৃৎপাত্র গঠন বৈশিষ্ট্যে স্বকীয়। ছোট বড় নানা আয়তনের, উত্তম পলি নির্মীত মৃৎপাত্র গুলির ব্যবহার অজানা হলেও, ছড়ানো তলযুক্ত পাত্রগুলিতে হাতল তৈরী করা হয়েছিল মাছের লেজের অনুকরণে । এছাড়া দুটি স্থানেই বহু সংখ্যায় পাওয়া গিয়েছে ক্ষুদ্র চিরন্তনী (age less) মূর্তি । শুধু তাই নয় বিভিন্ন যুগ বা কালপর্বের পর্যায়ক্রমে্র দিক থেকেও এই দুই কেন্দ্রে সমরূপতা পরিলিক্ষত হয়।

এসেছেন ভারতীয় পুরাতাত্ত্বিক সর্বক্ষণের বিশেষজ্ঞরা, নিদর্শন সমূহ পরীক্ষা করে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় এর পুরাতত্ত্ব বিশেষজ্ঞরা কাল নির্ণয় করেছেন যা আমাদের নিয়ে যায় আজ থেকে প্রায় দেড়-দুই হাজার বছর আগে ।
আজও চূর্ণী নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে আছে উঁচু উঁচু ঢিবি যার কিছু অংশের উচ্চতা প্রায় 8′-10’। স্থানীয় কায়েৎ পাড়া-কাপালি পাড়া-বুদ্ধকোল অঞ্চলে নদীর তীরে রয়েছে প্রায় 30′ উঁচু রৈখিকবিন্যাসের মঞ্চ বিশেষ, যা প্রায় 50 মিটার চওড়া । ভূমিরূপ বিদ্যার আলোকে বলা যায়, গাঙ্গেয় ব-দ্বীপের এই অংশে প্রাকৃতিক নদীমণ্চ নিতান্তই অসম্ভব- তবে কি এই গঠন (structure ) এর সাথে কোন উন্নত নগর কেন্দ্রের সীমান্ত প্রাচীর (Rampart wall )এর যোগ ছিল?

দেবলগড় প্রত্নক্ষেত্র এর চারপাশের চওড়া পরিখা, Rampart wall এর সাথে আবিষ্কৃত হয়েছে আর এক চমকপ্রদ নিদর্শন । পাশের মরালি নদী হয়ে ইছামতীর সাথে যোগ ছিল একেবারে রাজপ্রাসাদের পিছনের অংশের । গত 26/01/2019 এ আবিষ্কৃত হয়েছে নোঙর করবার কাজে ব্যবহৃত বিশেষ বৈশিষ্ট্যযুক্ত মাকড়া পাথরের ব্লক (Anchoring Stone)।

সন্দেহ ঘনীভূত হয়েছে। এই সুদৃঢ় দূর্গগঠন, ওয়াচটাওয়ার, পরিখা, উন্নত নৌ বাণিজ্য, সদা প্রস্তুত এক জলপথ পরিবহন এ সব তো সার্বভৌম কোন রাজশক্তি ছাড়া স্থানীয় সামন্তের কাজ হতে পারে না । খোঁজ শুরু হয় দেবল গড়ের ঠিকুজি কুলুজির। পাওয়াও যায় । উঠে আসে রাজা বিক্রমজিতের নাম। সন্ধ্যাকর নন্দীর রামচরিতে থেকে জানা যায় পাল রাজা রামপালের কৈবর্ত বিদ্রোহদমনে সাহায্যকারী এগারোজন রাজার অন্যতম ছিলেন দেবগ্রামের রাজা ছিলেন বিক্রমজিৎ।

তারপর কি হলো? দেবগ্রামের পরিণতি কী হলো? কেন এখানে দেবগ্রাম আনুলিয়া জুড়ে পাওয়া যায় অসংখ্য বিষ্ণু মূর্তি ? কেন মেলে সেন যুগের তাম্রশাসন? কেন এখানে বিষ্ণুমূর্তি আর ভাঙ্গা রাজপ্রাসাদে ছড়িয়ে আছে নির্মম ধংস্বের চিহ্ন? কেন এখানকার লোককথায় জড়িয়ে আছে মুসলিম এক রাজার আক্রমণ ও বিজয়ের কাহিনীচিত্র? কেন আনুলিয়া-গুড়পাড়ায় মেলে একাধিক যোদ্ধার ইসলামীক রীতির গোরস্থান ? তবে কি এই গড় সাক্ষী এক বৃহৎ সংঘর্ষের? তাই এখানে প্রতিরক্ষার এই বিপুল আয়োজন ? তবে কি এই দেবলগড় হারিয়ে যাওয়া কোন স্কন্ধাবার, কোন বিলুপ্ত রাজধানী ? আবারও খোঁজ ।

পথ দেখায় সেনরাজ সভাকবি ধোয়ীর পবনদূত । জানায় ত্রিবেণী সঙ্গম পেরিয়ে সমৃদ্ধশালী বিষ্ণু ও শিবের নগরী পেরিয়ে পৌছোনো সম্ভব সেনরাজার একই সাথে স্কন্ধাবার ও রাজধানী বিজয়পুরে।

দেবলগড় ই কি তবে সেই হারিয়ে যাওয়া রাজধানী বিজয়পুর ? আজকেও তো ত্রিবেণী সঙ্গম পেরিয়ে, মদনপুর- শিমুরালির মধ্যে দিয়ে বয়ে চলা বিলুপ্তপ্রায় যমুনা নদীর পাড় ধরে পৌছোনো যায় চাকদহের বিষ্ণুপুরে । যেখানে মিলেছিল ধংস্বপ্রাপ্ত বিষ্ণুমূর্তি, মিলেছিল প্রাচীন মন্দির স্থাপত্যের প্রত্ন অবশেষ । পৌছোনো সম্ভব শংকরপুর জনপদের পাশে আজকের জঙ্গলে ঘেরা দেবলগড়ে।

চ্যালেঞ্জ করে বহু যুগ লালিত এক ধারণা । নীহাররঞ্জন রায়, যজ্ঞেশ্বর চৌধূরীর মতো বরেণ্য ঐতিহাসিক দের লেখনী যে বলে নবদ্বীপ ই প্রাচীন সেন রাজধানী । রাজা লক্ষণ সেনের সাথে এখানেই সংঘর্ষ হয়েছিল বখতিয়ার খিলজির! আবার খোঁজা।
দেখা হয় মিনহাজের তবকাৎ ই নাসিরি ( রেভার্টি সাহেব ও বাংলাদেশের সাম্প্রতিক অনুবাদ সমস্ত), ঈশমীর ফুতুহ- সালাদীন, আচার্য যদুনাথ সরকার, আচার্য দীনেশচন্দ্র সেন, রমেশ চন্দ্র মজুমদারের বক্তব্য । মিনহাজের বিবরণের রাজধানীর গঠন নকশার সাথে মিলিয়ে দেখা হয় দেবলগড়ের নকসা ( reference করা হয় বাণগড় Excavation Report )।

দেখা যায় কেউ ই মতামত দেননি যে নবদ্বীপ ছিল সেন রাজধানী । পাওয়া যায় নি কোন পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শন । অনেকের মতেই এটি তীর্থস্থান ( বল্লাল ঢিবি ও সূর্বণবিহারে, আমডাঙার হরিহর ক্ষেত্রে মিলেছে তার প্রত্ন স্থাপত্য প্রমাণ) ।
বিকল্প স্থানে বিজয়পুর সন্ধানের অনাবিস্কৃতি যেমন এই প্রচলিত ধারণাকে টিকিয়ে রেখেছে, তেমনি শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভুর পরবর্তী সময়ে চৈতন্য জীবনীকার দের স্থান মাহাত্ম্য বর্ণনে আমরা নূদিয়াহ তথা নদিয়া কে নবদ্বীপের সাথে সমার্থক করেছি। দেখিনি ব্যরোজের মানচিত্র, দেখিনি ত্যভারনিয়ের বর্ণনা । তবে জানতে পারতাম প্রাচীন সুরসাগর চক্রদহ ও তখন নূদিয়াহ ।

মানচিত্রে তাকালেই আজও বোঝা যাবে নবদ্বীপ থেকে বিক্রমপুরে পৌছোনো লক্ষণ সেনের পক্ষে যতটা দ্রুত ও নিরাপদে হওয়া সম্ভব, দেবলগড়ের মরালি ও ইছামতী তাকে তুলনামূলকভাবে একবেলায় পূর্ববঙ্গে পৌছাতে সক্ষম। এটাই দেবলগড় প্রত্নক্ষেত্র এর Geo political advancement । এজন্যইএত সুদৃঢ় নৌ যোগাযোগ ।

অপেক্ষা এখন উৎখননের।

মিউজিয়াম পথনির্দেশ: ‘দেবলগড় দেবলরাজা পুরাতত্ত্ব ও লোকসংস্কৃতি সংঘ’।
রানাঘাট থেকে ট্রেনে বনগাঁ লাইনে গাংনাপুর স্টেশন । নেমেই টোটো, দশ মিনিট । স্টপেজ: দেবগ্রাম নতুন পোস্ট অফিস কাম মিউজিয়াম ।
শিয়ালদহ থেকে ট্রেন পথে অথবা NH 34 ধরে চাকদহ্। চাকদহ বাসস্ট্যান্ড থেকে দেবগ্রাম- আইসমালি রুটের বাস। স্টপেজ: দেবগ্রাম নতুন পোস্ট অফিস কাম মিউজিয়াম ।
প্রয়োজনীয় হোটেল পাবেন রানাঘাট, চাকদহ দুই জায়গাতেই ।

যে কোন প্রয়োজনে বনের মোষ তাড়ানোর কাজে কল্ করুন:9433301230, e-mail : biswajit.its@gmail.com । কলেজের নিস্তার পেলেই আপনার সাথে দেখা করার গ্যারান্টি ।

মন্তব্য করুন

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  পরিবর্তন )

Twitter picture

You are commenting using your Twitter account. Log Out /  পরিবর্তন )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  পরিবর্তন )

Connecting to %s