
নাগরী লিপি ব্যবহার করে সংস্কৃত শেখানোর অপকর্ম অবিলম্বে বন্ধ করা দরকার। ডায়াক্রিটিক দিয়ে রোমান হরফে সংস্কৃত লেখা উচিত আন্তর্জাতিকস্তরের গবেষণার জন্য, সেটাই বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি। আর রাজ্যস্তরের সমস্ত কাজে বাংলা লিপি ব্যবহার করে সংস্কৃত লেখা হোক পশ্চিমবাংলার সমস্ত স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে।
সংস্কৃতের কোনও নিজস্ব লিপি নেই। নাগরীকে দেবনাগরী বলার কায়েমী স্বার্থের মুখোশ খুলে দেওয়া দরকার। নাগরী লিপি সংস্কৃত ভাষার লিপি নয়।
প্রাচীন ভারতে প্রত্যেক প্রদেশের নিজস্ব লিপি ব্যবহার করেই সংস্কৃত লেখা হত। সেনযুগের প্রত্যেক পট্টোলী দেখবেন বাংলা অক্ষর ব্যবহার করেই সংস্কৃত লিখেছে। মধ্যযুগে দেখবেন বাংলায় প্রাপ্ত সংস্কৃত গ্রন্থের অক্ষরও বাংলা।
কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রের একটিই পাণ্ডুলিপি আজ পর্যন্ত পাওয়া গেছে, মাইসোরে পাওয়া গেছিল, সেটি গ্রন্থলিপিতে লেখা, তামিল স্ক্রিপ্টের পূর্বসূরী।
ইংরেজরা ফোর্ট উইলিয়াম কলেজে উত্তর ভারত থেকে অবাঙালি পণ্ডিত সস্তায় ভাড়া করে আনত, কারণ বাঙালি পণ্ডিতরা সেযুগে সহজে ম্লেচ্ছদের সংসর্গ করতে চাইতেন না, করলেও বিদ্যাসাগরের মত প্রচুর টাকা নিতেন।
সেই থেকে নাগরী লিপিতে সংস্কৃত লেখা শুরু হয়েছিল, এই উত্তর ভারতীয় পণ্ডিতরাই কলকাতায় বসে নাগরীকে দেবনাগরী বলা শুরু করেন। এবং সেই গোয়েবলসের ঠাকুরদাদের প্রচার সফল হয়েছে, কারণ একশ্রেণীর অজ্ঞ বাঙালি এই নাগরী লিপিকেই আজ সংস্কৃতের নিজস্ব লিপি ভাবেন।
আবার বলি, সংস্কৃত ভাষার কোনও নিজস্ব লিপি নেই। প্রত্যেক প্রদেশের নিজস্ব লিপি ব্যবহার করেই সংস্কৃত লেখার প্রথা। বাংলাঅক্ষরে সংস্কৃত চর্চা বাধ্যতামূলক করা দরকার বাংলার প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানে। সেইসঙ্গে আন্তর্জাতিক স্তরের গবেষণাধর্মী কাজের স্বার্থে রোমান হরফে ডায়াক্রিটিকের ব্যবহারও শেখানো দরকার।
বাংলা অক্ষরে লেখা জয়দেবের গীতগোবিন্দের একটি পুঁথি দেখছেন সঙ্গের ছবিতে, এটি সপ্তদশ শতকের।
© তমাল দাশগুপ্ত
http://fb.me/tdasgupto পেজ থেকে ১৬ই সেপ্টেম্বর ২০১৯ তারিখের পোস্ট