বাঙালি জাতির মধ্যে বিশ্বমানবদের হেজিমনি এজন্যও ভাঙা দরকার, কারণ বিশ্বমানব বাঙালিকে সাধু ও ইতর ভাষায় ভেঙেছেন। এ সমস্যা বাকি ভারতীয় জাতিগুলির হয়নি বলে তাদের ভেতর থেকে অনায়াসে বাল ঠাকরে বা করুণানিধি জন্মায়। আমাদের মধ্যে কেবল ইসলামিক বলয়ের দালাল মমতা বা গোবলয়ের দালাল দিলীপ তৈরি হয়।
বাঙালিকে জোরালো করা দরকার। তার জন্য বাঙালির সেই দাপুটে ভাষাকে ফিরিয়ে আনতে হবে, যা মধ্যযুগে আমাদের যশোর সম্রাট প্রতাপের মুখের ভাষা ছিল, যাকে বউঠাকুরাণীর হাটের স্রষ্টা (তিনি একা নন, এ দোষে ঈশ্বর গুপ্ত পরবর্তীকালের প্রায় সবাই, বিদ্যাসাগর বঙ্কিম সবাই দোষী, তবে তিনিই এই প্রবণতার আইকন) আন্ডারগ্রাউন্ড-এ পাঠিয়েছেন।
ঈশ্বর গুপ্ত পরবর্তী কালে বাঙালির মননে একটা fissure এসেছিল, একটা schizoid দশা এসেছিল। সেটাকে কাটিয়ে ওঠার জন্য যে দুয়েকটি আন্দোলন ঘটেছে, সেগুলোর বিশ্বমানব উৎস notwithstanding, সেগুলোকে আমরাও সাধ্যমত ব্যবহার করব। নবারুণ থেকে রোদ্দুর, হাংরি থেকে গুরুচন্ডালি আমাদের কাজে আসবে বিশ্বমানব ভাষার reification অতিক্রম করে পুনরায় শক্তিশালী বাঙালি জাতির নির্মাণে। আমরা মধ্যযুগের কথা এখানে স্মরণ করব। তখন এই এলিট ও ভালগার দুটি আলাদা প্রজাতিতে ভেঙে যায়নি বাঙালি। তখন এমন হয়নি যে একদল রবিঠাকুর আরেকদল কালীঠাকুর মানবে।
প্রসঙ্গত বঙ্কিম জানতেন খাঁটি বাঙালি কবি আর জন্মায় না, জন্মানোর উপায় নেই, জন্মে কাজ নেই। আসলে তিনি সাঁটে বলে গেছেন, খাঁটি বাঙালিকে আবার জন্ম দিতে হবে। সেই ভিক্টোরিয়ান যুগের মধ্যগগনে আর কোনওভাবে ও কথাটা তাঁর পক্ষে বলা তো সম্ভবও ছিল না।
